১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অহঙ্কার আল্লাহ তায়ালার চাদর

-


রঙ্গভরা রঙিন এ দুনিয়ার জমিনে দম্ভভরে চলার কারণে অনেক সময় মুমিনের মূল লক্ষ্য ব্যাহত হয়। কিসের জোরে, কী অর্জনের গর্বে এত মদমত্ত মানুষ? মনে রাখতে হবে, আগুনের তৈরি ইবলিস অহঙ্কার করে মাটির মানুষ আদম আ:-কে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ অমান্য করে অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা যখন ফেরেশতাদের বললেন, ‘তোমরা (সম্মানের প্রতীক হিসেবে) আদমের জন্য সিজদা করো, এরপর তারা (আল্লাহর আদেশে) আদমের সামনে সিজদা করল- শুধু ইবলিস ছাড়া; সে সিজদা করতে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল এবং সে নাফরমানদের দলে শামিল হয়ে গেল।’ (সূরা আল-বাকারাহ-৩৪)
অহঙ্কারীরা সবসময় নিজেদের বড়ত্ব জাহির করে বেঈমান হয়ে যায়। তাই তো আল্লাহ জাল্লা শানুহু কুরআনুল কারিমে বলেন-‘(হে মানুষ,) তোমাদের মাবুদ তো একজন (তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই), এরপর যারা পরকালের ওপর ঈমান আনে না তাদের অন্তরগুলো (এমনিই সত্য) অস্বীকারকারী হয়ে পড়ে এবং এরা নিজেরাও হয় (চরম) অহঙ্কারী।’ (সূরা আন-নাহল-২২)

আল-কুরআনের পাশাপাশি হাদিসেও এ বিষয়টি অর্থাৎ অহঙ্কার প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, মুমিনদের মধ্যে পরস্পর বিদ্বেষ পোষণকারীরা অহঙ্কারী হয়ে থাকে। মুমিনদের অহঙ্কার দূর করতে হলে পরস্পরকে ভালোবাসতে হয়। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা রা: বর্ণিত হাদিসে বলা হয়- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে-অন্যকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দেবো না, কী করলে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পর বেশি বেশি সালাম বিনিময় করবে।’ (মুসলিম-৯৮)
আসলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পরিচয় না জানার ফলেই মানুষের মধ্যে অজ্ঞতার এত অসুস্থ প্রবণতা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বলেছেন-‘যারা হেদায়াতের পথে চলে, আল্লাহ তায়ালা তাদের হেদায়াতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন; (হে নবী,) তোমার মালিকের কাছে তো স্থায়ী জিনিস হিসেবে (মানুষের) নেক আমলই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট পুরস্কার পাওয়ার দিক থেকে যেমন (তা ভালো), প্রতিদান হিসেবেও (তা উত্তম)।’ (সূরা মারিয়াম-৭৬)

মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা নিজেদের বড়ত্ব জাহিরে লিপ্ত হয়। কুরআন-হাদিসের জ্ঞানের অভাবেই এসব মানসিক বৈকল্য বিদ্যমান। এ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে বিনীতভাবে তাওবাহ করে পাপমুক্ত হওয়ার বিকল্প নেই। অনেকসময় মানুষ মনে করে, বেশ তো চলেই যাচ্ছে; কী আর হবে? কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মোটেও বেখবর নন।
আল্লাহ তায়ালা তার হাবিবকে উদ্দেশ করে বলেন-‘(হে নবী, এদের) বলো, যে ব্যক্তি গোমরাহিতে (নিমজ্জিত) থাকে, তাকে দয়াময় আল্লাহ তায়ালা অনেক ঢিল দিতে থাকেন যতক্ষণ না তারা সে বিষয়টি (স্বচক্ষে) প্রত্যক্ষ করবে, যে বিষয়ে তাদের সতর্ক করা হচ্ছে তা (হবে) আল্লাহ তায়ালার শাস্তি, নতুবা কিয়ামত, (তেমন সময় উপস্থিত হলে) তারা অচিরেই এ কথা জানতে পারবে, কোন ব্যক্তিটি মর্যাদায় নিকৃষ্ট ছিল এবং কার দলবল ছিল দুর্বল।’ (সূরা মারিয়াম-৭৫)
মানুষের ঔদ্ধত্য-অহমিকা সম্পর্কে এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন- ‘অহঙ্কার হলো আমার চাদর এবং মহত্ত্ব হলো আমার পরিধেয়। যে কেউ এর কোনো একটি নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (আবু দাউদ-৪০৯০)
যে ব্যক্তি নিজেকে বড় মনে করে সে যত ইবাদত করুক না কেন আল্লাহ তায়ালার কাছে সে বড় নয়। অহঙ্কারের কারণে মানুষ আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়।

মানুষকে অহঙ্কারী মনোবৃত্তির গণ্ডি থেকে বের করে আনতেই কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘তাদের আগেও আমি বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছি, এদের কোনোরকম অস্তিত্ব কি তুমি এখন অনুভব করো, না শুনতে পাও এদের কোনো ক্ষীণতম শব্দও?’ (সূরা মারিয়াম-৯৮)
মুমিনদের জন্য কখনো শোভা পায় না অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করা। পরস্পর সম্প্রীতি ও কল্যাণ কামনা ঈমানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর রাসূল সা:-এর সাহাবি জারির রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সা:-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি সালাত কায়েম করার, জাকাত প্রদান করার এবং সব মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার।’ (বুখারি-৫৭)
আমাদের সমাজে বিভিন্ন সময় দেখা যায়, একজন অন্যজনের সম্মানহানি করতে আমরা মরিয়া হয়ে যাই। অন্যকে ছোট করার এই নোংরা প্রতিযোগিতায় আমরা খুবই পারদর্শী। এই জঘন্য স্বভাবের জন্ম হয় মূলত অহঙ্কার থেকেই। এ ব্যাপারে অনেকেই রাসূলুল্লাহ সা:-এর আদর্শ পরিহার করে ইবলিসের পদাঙ্ক অনুসরণে লিপ্ত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, আয়েশা রা: বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেননি; কিন্তু আল্লাহপ্রদত্ত সীমারেখা বা নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহর জন্য অবশ্যই তার প্রতিশোধ নিতেন।’ (আবু দাউদ-৪৭৮৫)
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement