সামাজিক মাধ্যমে অসামাজিকতা
- মুহাম্মাদ নাঈম ইবনে মান্নান
- ২১ মে ২০২৪, ০০:০৫
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের পর থেকেই প্রযুক্তি চলে এসেছে সবার হাতের মুঠোয়। হালআমলের মানুষদের নিত্যদিনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের অধিকাংশই এখন প্রযুক্তিনির্ভর। বিশেষ করে, অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো হয়ে উঠেছে মানুষদের অন্যতম অনুষঙ্গ।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সমাজের জন্য যতটা না কল্যাণকর তার চেয়ে বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর বা ক্ষতিকর বিভিন্ন দিকের প্রভাবক। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই ধরা পড়ে এসব সামাজিক মাধ্যমের অসামাজিক বিভিন্ন দিক। এসব দিকের মধ্যে বিজাতীয় সংস্কৃতির বিস্তার অন্যতম।
বলা বাহুল্য, ইসলামী সংস্কৃতি-তমদ্দুনই পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সভ্যতার মানদণ্ড। মুহাম্মদ সা: এমন সময়ে ইসলামের কালিমা শোভিত পতাকা উড্ডীন করেছিলেন, যখন আরবসহ গোটা পৃথিবী ছিল অসভ্যতা, বর্বরতা আর অশ্লীলতায় আচ্ছন্ন। ইসলামের এই আগমনই বিশ্বকে দেখিয়েছিল আলোর মুখ। আর পৃথিবীতে কায়েম হয়েছিল সাম্য ও ভব্যতা। সুতরাং, বর্তমান দুনিয়ায় আপাত চাকচিক্যময় যেসব সভ্যতাকে আমরা দেখি, সেসবে থাকা ন্যূনতম আলোর উৎসও এই খোদ ইসলাম বৈ অন্য কিছু নয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও একই কথা, অধুনা ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভিত মুসলমানদেরই হাতে গড়া।
অনৈসলামিক সংস্কৃতি তথা জালেমদের রীতি অনুসরণ প্রসঙ্গে সূরা হুদের ১১৩ নম্বর আয়াতের প্রথমাংশে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, অন্যথায় অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে।’
অন্যদিকে, এ প্রসঙ্গে ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ-৪০৩১)
যে সব বিষয় ইসলাম আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে না বা যা ইসলামের মৌলিক জীবনাচরণবিধি তথা সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক সে সব বিষয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হতে হবে আরো বেশি সচেতন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ছোঁয়ায় সমাজে আর যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে তা হলো- অশ্লীলতা। এখানে একটি শ্রেণী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন সব কন্টেন্ট (অডিও, ভিডিও কিংবা টেক্সট ফরম্যাটের কোনো কিছু) তৈরি করছে যা আমাদের সমাজকে কলুষিত করছে প্রতিনিয়ত। এর বাইরে আরো একটি মহল আছে যারা আমাদের মতো গড়পড়তা মানুষ, তারা এসব অশ্লীল কন্টেন্টকে স্রেফ মজা কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তা শেয়ার করছে। এতে ওই সব কন্টেন্টে থাকা অশ্লীলতা আমাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
আমাদেরকে একটি বিষয় বুঝতে হবে, অশ্লীলতার প্রচারকরা প্রথমেই কোনো বিষয় জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে চায় না; বরং প্রথমেই তারা তা নিয়ে নানা ধরনের হাসি-তামাশা, কৌতুক-মজা করে ওই বিষয়টিকে স্বাভাবিক করে। এরপর সমাজে তা আপনাআপনিই ঢুকে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজে মূলত এভাবেই টার্গেট নিয়ে কাজ করছে। এর বাস্তব উদাহরণ আমরা একটু চিন্তা করলেই দেখতে পাব।
তাই, সামাজিক মাধ্যমগুলোতে থাকা এসব কন্টেন্ট আমাদের ইন্টারেকশন (দেখা, লাইক, কমেন্ট, শেয়ার) বন্ধ করতে হবে। একজনের ইন্টারেকশনের কারণেই ওইসব কন্টেন্ট আরো বেশি প্রসারিত হচ্ছে।
অশ্লীলতার প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের সূরা নূরের ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’
সূরা আরাফের ৩৩ নম্বর আয়াতেও মহান আল্লাহ তায়ালা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে, বুখারির ৩৫৯৮ নম্বর হাদিসেও অশ্লীলতার প্রচার ও প্রসারকে কিয়ামতের লক্ষণ বলে ইরশাদ হয়েছে।
এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন, অপপ্রচার বা গুজব ছড়ানো একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। যারা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের মতো গর্হিত কাজে লিপ্ত তারা একই সাথে মিথ্যাবাদী ও ফাসাদ সৃষ্টির দোষে দুষ্ট। পবিত্র কুরআনে যেখানে একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করার সমান বলে ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে সূরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াতে আবার ফিতনা সৃষ্টি করাকে হত্যাকাণ্ডের চেয়েও মারাত্মক অপরাধ বলা হয়েছে।
সুতরাং, এ থেকে বোঝা যায়, ফিতনা সৃষ্টি বা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো কত বড় গর্হিত কাজ।
যেহেতু সামাজিক মাধ্যম বর্তমান দুনিয়ায় যোগাযোগের অন্যতম একটি উৎস এবং প্রাত্যহিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেহেতু এই মাধ্যমকে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে, তবে সেটি অবশ্যই আমাদের উপকারের স্বার্থে। এর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ব্যক্তিজীবন কিংবা সমাজ জীবনে যেন না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, যেসব বিষয় আমাদের ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ইসলামে সেই সব বিষয়ও নিষিদ্ধ।
লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি সাহিত্য বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা