আলোকিত জীবন-মরণ
- নাজমুল হুদা মজনু
- ১৫ মে ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ০৫:২০
ক্ষণিকের এই জীবনমেলা কার কখন ভাঙবে কেউ কি বলতে পারে? তবু মানুষের প্রত্যাশার অন্ত নেই। অথচ খুব বেশি হলে একটা আস্ত মুরগির রোস্ট, তার সাথে দুই প্লেট ফ্রাইড রাইস, এর চেয়ে বেশি ক’জনইবা খেতে পারে? তারপরও মানুষ কেবল খাই খাই করে! ক’টা বাড়ি, কতটা গাড়ি মানুষের প্রয়োজন হয়? তারপরও শুধু চাই আরো চাই। চাইতে চাইতে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত; তবুও চাওয়ার সীমা-পরিসীমা নেই।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বলেছেন, (জীবনসামগ্রীর) আধিক্য তোমাদের গাফেল করে রেখেছে। এমনি করেই (ধীরে ধীরে) তোমরা কবরের কাছে গিয়ে হাজির হবে। (সূরা তাকাসুর-১-২)
উল্লিখিত সূরার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-‘হে অপরিণামদর্শী সীমালঙ্ঘনকারী মোহমত্ত মানুষ, শোনো! যারা খেলাধুলায় মত্ত, জনবল, ধনবল ও পার্থিব ভোগের উপকরণের আধিক্যে গর্বিত অথচ একদিন এগুলো ছেড়ে যেতেই হবে সে কথা বিস্মৃত, তারা শোনো! বর্তমান জীবনের অব্যবহিত পর যে জীবন, তাকে যারা ভুলে বসে আছো, তারা শোনো! অর্জিত প্রাচুর্যের গর্বে এবং আরো অধিক অর্জনের প্রতিযোগিতায় যারা ভুলে আছো যে, একদিন এসব সম্পদ ত্যাগ করে সঙ্কীর্ণ একটা গর্তে আশ্রয় নিতে হবে, তারা শোনো! প্রতিযোগিতা ও অহঙ্কার এবার থামাও। জাগো এবং চোখ মেলে তাকাও। ‘অতিরিক্ত অর্জনের নেশা তোমাদের উদাসীন করে দিয়েছে। কবরের সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত তোমাদের এ অবস্থায়ই চলতে থাকবে।’ এরপর কবরের সাক্ষাৎ লাভের পর সেখানে তাদের জন্য যে পরিণাম অপেক্ষা করছে, তার ভয়াবহতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ তায়ালা তাদের মনকে হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দিচ্ছেন অত্যন্ত শান্ত ও গুরুগম্ভীর ভাষায়- ‘কখনো নয়, তোমরা অচিরেই জানতে পারবে।’
তারপর এই হুঁশিয়ারি সঙ্কেতের পুনরাবৃত্তি করছেন একই ধরনের ভীতি সঞ্চারক গুরুগম্ভীর ভাষায়, ‘পুনরায় (বলছি) কখনো নয়, তোমরা শিগগিরই জানতে পারবে।’ এরপর অধিকতর গভীর ও ভীতিপ্রদ ভঙ্গিতে, আরো জোরালো ভাষায় একই হুঁশিয়ারির পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। দৃষ্টির আড়ালে যে গুরুতর ব্যাপার রয়েছে, যার প্রকৃত স্বরূপ শ্রোতাদের কাছে তাদের প্রাচুর্যের মোহ ও অহঙ্কারের দরুন সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হচ্ছে না, তার প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে, ‘কখনো নয়, তোমরা যদি সংশয়মুক্তভাবে জানো’। তারপর এই চরম ভয়াল সত্যটি উন্মোচন করা হচ্ছে ‘তোমরা অবশ্যই দোজখকে দেখতে পাবে।’ এরপর এ সত্যের পুনরুল্লেখ করা হচ্ছে, যাতে মানুষের হৃদয়ে এর প্রভাব আরো গভীর হয়, ‘পুনরায়, তোমরা চাক্ষুষ নিশ্চয়তাসহকারে তা দেখতে পাবে।’ এরপর সর্বশেষ হুঁশিয়ারিটি উচ্চারণ করা হচ্ছে, যাতে উদাসীন লোকেরা সম্বিত ফিরে পায়; অচেতন লোকদের চেতনা জাগে, অহঙ্কারী সতর্ক হয়, সুখী ও বিলাসী লোকদের মধ্যে জাগরণ আসে এবং প্রাচুর্যের মধ্যেও যেন দায়িত্বের অনুভূতি অক্ষুণœ থাকে, ‘এরপর তোমাদেরকে নেয়ামতগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
জিজ্ঞাসা করা হবে কোথা থেকে তোমরা সম্পদ অর্জন করেছ এবং কোথায় তোমরা তা ব্যয় করেছ? আল্লাহর আনুগত্যের ভেতর দিয়ে উপার্জন ও ব্যয় করেছ, না তার অবাধ্যতা এবং নাফরমানির ভেতর দিয়ে? হালাল উপায়ে না হারাম উপায়ে? তোমরা আল্লাহর শোকর আদায় করেছ, না নাশোকরি করেছ? তোমার অর্থের দায়িত্ব কি পালন করেছ? সমাজের কাজে কী অবদান রেখেছ? অপরের স্বার্থকে কি অগ্রাধিকার দিয়েছ? তোমরা যে প্রাচুর্যের অহঙ্কার ও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, সে সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে। সম্পদের প্রাচুর্য আসলে একটা ভারী বোঝা। তোমরা নিজেদের খেলতামাশার মধ্যে অতিমাত্রায় মগ্ন থাকার কারণে তাকে হালকা মনে করো। অথচ তার অপর দিকে রয়েছে দুর্ভাবনা ও দুশ্চিন্তার ভারী বোঝা। (তাফসির ফি জিলালিল কুরআন)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কত যে মহান, কত যে দয়াবান আমরা কি তা ভেবে দেখি? কত সুন্দর করে, কত যে মায়া-মমতায় গুনাহগার বান্দাকে কাছে ডেকে নেন; ক’জনে তা অনুভব করি?
আল্লাহ জাল্লা শানুহু কী সুন্দর, কী মনোহর শব্দমালায় কুরআন মাজিদে বান্দাকে মধুর বয়ানে বলেন, তোমরা জেনে রেখো, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার আর ধন-সম্পদ ও সন্তানাদিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। তার উদাহরণ হলো বৃষ্টি- আর তা থেকে উৎপন্ন শস্যাদি কৃষকের মনকে আনন্দে ভরে দেয়, তারপর তা পেকে যায়, তখন তুমি তাকে হলুদ বর্ণ দেখতে পাও, পরে তা খড়কুটা হয়ে যায়। (আর আখিরাতের চিত্র অন্যরকম, পাপাচারীদের জন্য) আখিরাতে আছে কঠিন শাস্তি, (আর নেককারদের জন্য আছে) আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা আল-হাদিদ-২০)
আল্লাহর হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: দুনিয়ার তুচ্ছতার পরিচয় তুলে ধরেছেন নম্র-নিমগ্নতায়। হযরত সাহল ইবনে সাঈদী থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমরা খন্দকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে ছিলাম। তিনি (মাটি) খনন করছিলেন এবং আমরা মাটি সরিয়ে দিচ্ছিলাম। তিনি আমাদের দেখছিলেন। তখন তিনি বলছিলেন : হে আল্লাহ আখিরাতের জীবনই সত্যিকারের জীবন। কাজেই আপনি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করুন। (বুখারি-৬৪১৪)
আমাদের জীবন-মরণ আলোকিত হোক কুরআন-হাদিসের আলোকে।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা