‘খুলুকে আজিম’ মহান চরিত্রের কাছে ফিরে আসুন
- জাফর আহমাদ
- ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৫
ক্লান্ত পাখিরা দিন শেষে ফিরে আসে আপন নীড়ে, নদীর পানি কল কল রবে বয়ে যায় সমুদ্রের পানে, দিন ঢুকে পড়ে রাতের অন্ধকারে, রাত দূরীভূত হয় দিনের আলোয়- এভাবে সবাই ফিরে যায় ফিরে আসে তার আসল ঠিকানায়। পৃথিবীও ঘুরেফিরে বার বার আশ্রয় নেয় মহান এক চরিত্রের কাছে, তিনি হলেন মানবতার মহান বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:। তিনি খুলুকে আজিম বা বিশাল চরিত্রের অধিকারী মুুহাম্মদ সা:। তাঁর চরিত্রই মানুষের আসল ঠিকানা। সুতরাং তাঁর চরিত্রের কাছে প্রত্যেককে ফিরে আসতেই হবে। কারণ এ যে এক মহান চরিত্র। অন্য কোথায়ও কারো মধ্যে এমন চরিত্র পাবেন না। পেলেও পেতে পারেন তবে তা একান্তই আংশিক বা অপূর্ণাঙ্গ।
‘ওয়া ইন্নাকা লা আলা খুলুকিন আজিম’ অর্থাৎ- এবং নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী’ (সূরা কলম-৪)। বলেছেন স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামিন যিনি নিজে ‘রাব্বিয়াল আজিম’। আয়াতে ব্যবহৃত ‘আজিম’ শব্দটি আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের একটি। অর্থ হচ্ছে- আল্লাহ তায়ালা এমন মহান বা বিশাল সত্তা যার মহানত্ব ও বিশালতার সীমা-পরিসীমা আমাদের কল্পনা, চিন্তা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির অনেক ঊর্ধ্বে। অর্থাৎ তিনি সীমা বা আয়ত্তের দুর্বলতা থেকে পবিত্র। এমনকি কেউ তার বড়ত্বের একটি আন্দাজ করেছেন তিনি সেই আন্দাজ-অনুমান থেকেও পবিত্র। রাসূলুল্লাহ সা:-এর নৈতিক চরিত্রের মহানত্ব প্রকাশ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা ‘আজিম’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এর দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে যে, তাঁর চরিত্রের বিশালতা ও সীমাহীন। আমাদের কল্পনা, চিন্তা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতিরও বাইরে।
‘আজিম’ শব্দটি সম্পর্কে শুরুতেই বলা হয়েছে যে, এটি এমন বিশালতার প্রকাশ ঘটায় যার সীমা-পরিসীমা আমাদের কল্পনা, চিন্তা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির বাইরে। যার বিশালতাকে কোনো পরিমাপক যন্ত্রও আয়ত্ত করতে পারে না। যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা আয়ত্ত করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। মানুষ গ্রহ-নক্ষত্র, চাঁদ-সূর্য ও সৌরজগত সম্পর্কে আনুমানিক বা মোটামুটি একটি ধারণা আয়ত্ত করতে পেরেছে। বিশাল সৌরজগতে বা বিশাল সৃষ্টিজগতে সূর্য হলো আল্লাহর একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী সৃষ্টি। আধুনিক আকাশ-বিজ্ঞানীরা সূর্য সম্পর্কে সঠিক হোক আর বেঠিক হোক একটি পরিমাপ তারা করতে পেরেছে যে, সূর্য পুরো সৌরজগত নিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ২০ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে চলছে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৫ কোটি ৬৬ লাখ মাইল। কিন্তু ‘আজিম’-এর পরিমাপ করা কোনো বিশেষজ্ঞের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, আর হবেও না।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা:। তিনি বলেছেন, কুরআনই ছিল তাঁর চরিত্র। কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘ওয়ালাকাদ আতাইনা সাবয়াম মিনাল মা সানিওয়াল কুরআনিল আজিম’ অর্থাৎ- ‘আমি তোমাকে এমন সাতটি আয়াত দিয়ে রেখেছি যা বার বার আবৃত্তি করার মতো এবং তোমাকে দান করেছি মহান কুরআন’ (সূরা হিজর-৮৭)। কুরআনের বেলায়ও এ ‘আজিম’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যার অর্থ- এ এক মহান বা বিশাল কিতাব, যার মহত্ত্ব ও বিশালতার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এটি সব কালের জন্য প্রযোজ্য, যা কখনো সেকেলে বা পুরনো হয় না। সব কালের জন্য এটি নতুনভাবে আবির্ভূত হয়। কুরআনের মহত্ত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি যদি এ কুরআন কোনো পাহাড়ের ওপরও অবতীর্ণ করে দিতাম তা হলে হে নবী! আপনি লক্ষ্য করতেন যে, আল্লাহর ভয়ে ধসে যাচ্ছে, দীর্ণ-বিদীর্ণ হচ্ছে’ (সূরা হাশর-২১)। ‘আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এ আমানত (আল-কুরআন) পেশ করলাম। কিন্তু তারা তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত হলো না, তারা ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু মানুষ তার স্কন্ধে তুলে নিলো’ (সূরা আহজাব-৭২)। অচিরেই আমি তোমার ওপর একটি ভারী কিছু রাখতে যাচ্ছি’ (সূরা মুজাম্মিল-৫)।
যেহেতু রাসূল সা: ছিলেন জীবন্ত কুরআন সেহেতু তাঁর চরিত্রও ছিল মহান। তাঁর চরিত্র বা সুন্নাহ সব কালের জন্য প্রযোজ্য। তাঁর চরিত্র বা সুন্নাহ কখনো সেকেলে বা পুরনো হয় না; বরং সব যুগে সব কালে রাসূলের চরিত্র ও সুন্নাহ নতুনভাবে কার্যকরী প্রতিষেধক। তাই তাঁর মহান চরিত্র চির আধুনিক এবং যেকোনো যুগ বা কালের সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে। আর এটিই ‘খুলুকে আজিম’-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ পৃথিবী যখন যেই সমস্যার সম্মুখীন হবে, রাসূলের চরিত্র ও সুন্নাহ তখন কার্যকরী প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। কুরআনই যেহেতু তাঁর চরিত্র আর কুরআনই যেহেতু স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ (অঁঃড় টঢ়ফধঃবফ) সেহেতু রাসূলুল্লাহ সা:-এর চরিত্রও স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ (অঁঃড় টঢ়ফধঃবফ)।
আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, রাসূলুল্লাহ সা:-এর চরিত্র কেমন ছিল? তাহলে আমি আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করব যে, আচ্ছা আপনি! পৃথিবীর দ্রব্যসামগ্রী সম্পর্কে একটি বর্ণনা পেশ করুন তো? আপনি বলবেন, তা কি আদৌ সম্ভব হতে পারে? তাহলে আমি আপনাকে বলব, তাহলে আমি আপনাকে রাসূল সা:-এর চরিত্র সম্পর্কে কিভাবে অবহিত করব? কারণ আল-কুরআনে বলছে- “দুনিয়ার দ্রব্যসামগ্রী ‘কালিলা’ বা স্বল্প আর সেই কুরআনেই বলছে রাসূলের চরিত্র সম্পর্কে ‘খুলুকে আজিম’।” অর্থাৎ- তিনি বিশাল বা মহান চরিত্রের অধিকারী। দুনিয়ার সমস্ত দ্রব্যসামগ্রীকে বলা হয়েছে ‘কালিলা’ বা যৎসামান্য স্বল্প আর রাসূলের চরিত্রকে বলছেন ‘আজিম’ বা মহান। তাহলে আমি আপনাকে সেই মহান চরিত্রের বর্ণনা কিভাবে দেবো? আপনি যদি স্বল্পের উত্তর না দিতে পারেন তবে আমি কি করে আজিমের উত্তর দেবো?
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- আমরা রাসূল সা:-এর সেই মহান চরিত্র ও সুন্নাহকে ভুলে মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তার দ্বারস্থ হই, ফলে সমাধানের পরিবর্তে হাজারো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জালে আবদ্ধ হয়ে জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলি। তাই বিশ্ব নেতাদের কাছে অনুরোধ পৃথিবীতে শান্তি আনয়নের জন্য, পৃথিবীকে সন্ত্রাসমুক্ত করার জন্য, পৃথিবীকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য ও পৃথিবীকে মানুষের বাসউপযোগী করার জন্য হজরত মুহাম্মদ সা:-এর মহান চরিত্রের কাছে ফিরে আসুন। আমি জানি, একটু শান্তির প্রত্যাশায় বিশ^ নেতারা দিন-রাত মাড়িয়ে চলেছেন। তাদের আন্তরিকতার প্রশ্নে কোনো মন্তব্য না করে তাদের এ চলা যে অনেকটা তারাহীন রাতের দিকভ্রান্ত পথিকের মতো তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শান্তির প্রত্যাশায় প্রয়োগকৃত তাদের হাজারো ভ্রান্ত উদ্যোগ বার বার চপেটাঘাত করে শুধু ফিরিয়েই দিচ্ছে না; বরং আরো অসংখ্য সমস্যা মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। দুর্ভাগ্য ও দুঃখ তাদের জন্য, যারা দেখেও দেখেন না, বুঝেও বুঝে না যে, অতি নিকট ইতিহাসে ঘটে যাওয়া দিবালোকের মতো স্পষ্ট একজন মানুষ এসেছিলেন নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা জাজিরাতুল আরবের বুক চিরে, তপ্ত বালুকায় চিকচিক আলোকরশ্মির ঢেউ তুলে মরু সাইমুমসম মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:। তিনি আল্লাহর নির্দেশনায় শত শত বছরের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুললেন। অন্ধকার দূরীভূত হলো, মানুষ জেগে উঠল একরাশ সোনালি আভায়। পথহারা মানুষ ফিরে পেলো সঠিক পথের দিশা।
এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আজকের বিশে^র নেতারাও প্রতিটি দেশের শাসকদেরকে আবারো বলছি, সত্যিই আপনারা যদি বিবেকের সাথে প্রতারণায় লিপ্ত না হন, সত্যি সত্যিই পৃথিবীতে বা প্রত্যেকের সংশ্লিষ্ট দেশে সার্বিক শান্তি আনতে চান এবং পৃথিবীকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত করতে চান, যা কোনোক্রমেই পারছেন না, খুব দ্রুত রাসূল সা:-এর চরিত্রের দিকে মনোনিবেশ করুন। আমি আবারো জোর দিয়ে বলছি- আপনার রাষ্ট্র ও সমাজ নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ আবাসস্থল হিসেবে শতভাগ গড়ে উঠবে।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা