রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- মুহাম্মাদ শেখ মূসা
- ২২ মার্চ ২০২৩, ০০:০৫
প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য রক্তের মধ্যে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তাকে রাগ বা গোস্বা বলে। প্রতিটি মানুষের মধ্যে রাগের প্রকোপ আছে। তবে কেউ রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে খুব সূক্ষ্মভাবে। ফলে সে নানান ঝক্কিঝামেলা থেকে মুক্ত থাকে। আর কেউ নিয়ন্ত্রণশক্তি হারিয়ে ফেলে। এর দ্বারা শারীরিক-মানসিক বহু অপ্রত্যাশিত চাপ ভোগ করতে হয় তাকে। রাগ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি লোপ পাওয়ায় সহায়তা করে। রাগ মানুষের স্বভাবগত বিষয়- এ জন্য ব্যক্তি দায়ী নয়। তবে চরিতার্থ করা না করা মানুষের ইচ্ছার অধীন- এ জন্য মানুষ দায়ী।
রাগ বর্জনকারীকে আল্লাহ তায়ালা অনেক মর্যাদা দান করেন। যুগে যুগে যেসব মহীরুহ মর্যাদার আসনে সমাসীন হয়েছেন তারা রাগকে বর্জন করেছেন। একবার হজরত আবু বকর রা: রাগতস্বরে তার গোলামকে বকাঝকা করছিলেন। তখন রাসূল সা: দেখে বললেন, কাবার কসম, সিদ্দিক হতে চাও, অথচ রাগ করা ও তিরস্কার থেকে বিরত থাকো না এমনটি কখনো হতে পারে না। সুতরাং কস্মিনকালেও সম্ভব নয় রাগ করে সিদ্দিক হওয়া। কারণ উভয়টি সমান্তরাল হওয়া অসম্ভব। ধর্মীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে মানুষের প্রতি রাগ করা শোভা পায় না। রাগকে হজম করতে হয়।
আল্লাহ তায়ালা রাগ হজমকারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করতে কুরআন কারিমে বলেন, ‘নেককার মানুষের একটি বড় গুণ হলো যে রাগ হজম করতে জানে।’ (সূরা আলে ইমরান-১০৩)
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সন্তুষ্টির লক্ষ্যে রাগ করা জায়েজ। আমাদের রাগ করা উচিত দ্বীন-শরিয়তকে কেন্দ্র করে। নবীজী সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন পুরো সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ-৪১৮৬) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ-৪১৮৯)
সুতরাং যে ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের ওপর অবিচল থাকতে চায় তার জন্য আবশ্যক আল্লাহর উদ্দেশ্যে জীবন পরিচালনা করা। কোনো মানুষের প্রতি রাগ করতে হলে আল্লাহর জন্য করবে। ব্যক্তির প্রতি গোস্বা নয়; বরং কোনো অন্যায় দৃষ্টিগোচর হলে সেই অন্যায়ের ওপর রাগ করা জরুরি।
রাগ হবে দ্বীনের খাতিরে, ব্যক্তিগত আক্রোশে নয়। এর জ্বলন্ত প্রমাণ সাহাবায়ে কেরাম রা: দেখিয়েছেন। একবার হজরত আলী রা:-এর সামনে এক ইহুদি রাসূল সা:-কে গালি দিলো। হজরত আলী ছিলেন একজন মর্দে মুজাহিদ। তিনি সাথে সাথে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। লোকটিকে উঁচু করে আছাড় দিলেন। তারপর তার বুকে চড়ে বসলেন। তাকে শেষ করে দেয়ার জন্য। রাসূল সা:-কে গালি দেয়ার মতো এত বড় দুঃসাহস! লোকটি হজরত আলীর মুখে থুতু নিক্ষেপ করল। সাথে সাথে আলী রা: তাকে ছেড়ে দিলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করল- তাকে ছেড়ে দিলেন যে! আপনার তো আরো রেগে যাওয়ার কথা, তখন আলী রা: বললেন, এতক্ষণ তাকে শাস্তি দিয়েছি রাসূল সা:-কে গালি দেয়ার অপরাধে আর এখন আমার ভেতরে ব্যক্তিগত আক্রোশ এসে গেছে। তাই ছেড়ে দিয়েছি। তাকে হত্যা করলে ব্যক্তিগত কারণ নিহিত হতো। আল্লাহর রাজি খুশি বহাল থাকত না।
হজরত আশরাফ আলী থানভী রহ: বলেছেন, আমি যখনই রাগ প্রকাশ করি তখন দিলে দিলে এই নিয়ত করি- হে আল্লাহ! আমি শরিয়তের হুকুম লঙ্ঘনার্থে রাগ করেছি। ওই ব্যক্তির প্রতি এ ছাড়া আমার কোনো ক্ষোভ নেই। সে তো তোমার কাছে আমার চেয়েও অধিক প্রিয় হতে পারে। তার মর্যাদা আমার তুলনায় বহুগুণ থাকতে পারে। তাই ব্যক্তির প্রতি আমার ক্ষোভ নেই, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি মাত্র।
রাগের গতিবেগ ওপরের দিকে। রাগ দমন করার পদ্ধতি কুরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে তন্মধ্যে- আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে বলেছেন, ‘যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো উসকানি তোমাকে পায়, তাহলে আউজুুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম পড়ে নাও।’ (সূরা হামিম-সাজদাহ-৩৬)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো রাগ হয় তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে, তবে যেন বসে পড়ে। যদি তাতে রাগ চলে যায় ভালো। আর যদি না যায়, তবে শুয়ে পড়বে।’ (আবু দাউদ-৪৭৮৪) তাতেও যদি রাগ দমন না হয় তাহলে ঠাণ্ডা পানি পান করবে। যাতে রাগের কারণে রক্তে যে উষ্ণতা সৃষ্টি হয় তা একদম শীতল হয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। কঠিন করো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’ (মুসনাদে আহমাদ-৪৭৮৬)
রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয়ই পানি দিয়ে আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন অজু করে।’ (আবু দাউদ-৪৭৮৬)
লেখক : শিক্ষার্থী, কবি ও প্রাবন্ধিক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা