১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আর্থিক সুদ ও অনার্থিক সুদ

-

আর্থিক সুদ : নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ঋণ দেয়ার পর তার ওপর একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে অতিরিক্ত কিছু অর্থ আদায় করলে এ অতিরিক্ত অর্থই সুদ, তদ্রুপ একই জাতীয় সামগ্রী বা দ্রব্য কম পরিমাণের বিনিময়ে বেশি পরিমাণ নিলে এ বেশিটুকুই সুদ। অর্থাৎ নির্দিষ্ট হারে সুদে অর্থের ব্যবসায় করা এবং অর্থকে ব্যবসার পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা। এটিকে আর্থিক সুদ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে কাউকে কিছু অর্থ বা পণ্য ধার, কর্জ, লোন বা ঋণ দেয়ার পর তার মধ্যে অতিরিক্ত কিছু দাবি করা বা আদায় করা হলে অতিরিক্ত অর্থ বা পণ্যকে সুদ বলা হয়। এটি ইসলাম নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। তাদের এ অবস্থায় উপনীত হওয়ার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলে- ব্যবসা তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম’ (সূরা বাকারা-২৭৫)। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর সুদের যা বকেয়া আছে তা পরিহার করো; যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। আর যদি তোমরা তওবা করো তবে তোমরা তোমাদের মূলধন প্রাপ্ত হবে। তোমরা অত্যাচার করবে না, তোমাদের প্রতিও অত্যাচার করা হবে না’ (সূরা বাকারা : ২৭৮, ২৭৯)। হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন সুদের ৭০ প্রকার গুনাহ রয়েছে। এর সর্বনিম্ন গুনাহ হলো নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সমতুল্য’ (ইবনে মাজাহ)।
অনার্থিক সুদ : নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ঋণ দেয়ার পর এর বিনিময়ে সুনাম, সুখ্যাতি তথা দানবীর, দয়ালু, দয়াশীল, অনুগ্রহশীল, দাতা, সম্মান, ইজ্জত, বড়ত্ব, ভবিষ্যৎ কোনো কিছু স্বার্থ লাভের আশা করা হলে তা উপরোল্লিখিত সুদের মতো অতিরিক্ত কিছু অর্থ বা পণ্য আদায় করার মতোই অনার্থিক সুদ হিসেবে গণ্য হবে। এটিকে অনার্থিক সুদ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। এটিও ইসলাম নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘(আর আল্লাহ তাদেরকে মহব্বত করেন না) যারা শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশে স্বীয় ধনসম্পদ ব্যয় করে থাকে আর আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না। শয়তান তাদের সাথী, তার ভাগ্যে খুব বড় দুষ্ট বন্ধুই মিলেছে’ (সূরা নিসা-৩৮)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! নিজেদের দানকৃত ধনসম্পদ ও অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে আর দুঃখ-কষ্ট দিয়ে ওই ব্যক্তির মতো তোমাদের দানকে নষ্ট করো না, যারা লোক দেখানোর উদ্দেশে ব্যয় করে থাকে’ (সূরা বাকারা-২৬৪)।
মুসলমানকে দানশীল, উদার হৃদয়, সহানুভূতিশীল ও মানবদরদি হতে হবে। স্বার্থসিদ্ধির প্রবণতা পরিহার করে নিছক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে প্রতিটি সৎকাজে এবং ইসলাম ও সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ব্যয় করতে হবে। ইসলাম শিক্ষা ও অনুশীলন এবং ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার সামষ্টিক পরিবেশ কায়েমের মাধ্যমে প্রতিটি মুসলমানের মধ্যে এ নৈতিক বল সৃষ্টি করতে চায়। এভাবে কোনো প্রকার বল প্রয়োগ ছাড়াই হৃদয়ের ঐকান্তিক ইচ্ছায় মানুষ সমাজকল্যাণে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
ইসলামী সমাজে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে পরস্পরকে নিঃস্বার্থভাবে ঋণ দেয়া অপরিহার্য কর্তব্যরূপে চিহ্নিত হবে। এ ধরনের কর্তব্যবোধ একটি সমাজের সুস্থতার পরিচায়ক। যদি কোনো সমাজে এর অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় তবে বুঝতে হবে সেখানকার পরিবেশ বিকৃত হয়ে গেছে এবং সেখানকার অধিবাসীদের বিশ্বাস ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ইবাদাতগুলোর মধ্যে শিথিলতা দেখা দিয়েছে। মুসলমানকে দানশীল, উদার হৃদয়, সহানুভূতিশীল, মানবদরদি ও পারস্পরিক কল্যাণকামী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাওহিদ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ইবাদতগুলো সামষ্টিকভাবে কাজ করে থাকে।
আর্থিক হোক বা অনার্থিক হোক উভয় অবস্থায় অতিরিক্ত কোনো কিছুর দাবি আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আল্লাহকে ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে কোনোরূপ প্রতিফল পাওয়ার বা অন্য কারো সন্তোষ লাভ করার কোনো ইচ্ছা কোনো মুমিন করতে পারে না। এরূপ ঋণ দান প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালার দুটি ওয়াদা রয়েছে। একটি হলো- তিনি এটি কয়েকগুণ বেশি করে ফিরিয়ে দেবেন। আর দ্বিতীয়টি হলো- তিনি সে জন্য নিজের তরফ থেকে অতীব উত্তম প্রতিফলও দান করবেন। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘এমন কে আছে যে আল্লাহ তায়ালাকে ঋণ দেবে, উত্তম ঋণ? যেন আল্লাহ এটি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দিতে পারেন এবং তার জন্য অতীব উত্তম সওয়াব রয়েছে’ (সূরা আল-হাদিদ-১১)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিতে থাকো। যা কিছু ভালো ও কল্যাণ তোমরা নিজেদের জন্য অগ্রিম পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে সঞ্চিত ও মজুদরূপে পাবে। এটি অতীব উত্তম। আর এর শুভ প্রতিফলও খুব বড়’ (সূরা মুজ্জাম্মিল-২০)।
কল্যাণকর উত্তম ঋণকে সমাজের সুবিধাভোগীরাই এর সাথে অতিরিক্ত কিছু যোগ করে অকল্যাণ ও হারাম ঋণে পরিণত করেছে। প্রচলিত ব্যাংকগুলো এ অতিরিক্ত অংশকে সুদ বলে থাকে। অর্থাৎ প্রদত্ত ঋণের ওপর শর্ত হিসেবে অতিরিক্ত কিছু আদায় করা হলে তাকে সুদ বলা হয়। অথচ উচিত ছিল ঋণ বা কর্জ দেয়ার পর তার ওপর অতিরিক্ত কিছু না নেয়া। বরং সমপরিমাণ ফেরত দেয়ার শর্তে কাউকে নির্ধারিত সময়ের জন্য কোনো কিছু ব্যবহার করতে দেয়া। আর একেই বলা হয় ঋণ বা কর্জ। আর এ ঋণ তখনই উত্তম ঋণে পরিণত হবে যখন খালেছ নিয়তে কোনোরূপ ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়াই হোক তা আর্থিক স্বার্থ বা অনার্থিক স্বার্থ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে দেয়া হবে। যাতে কোনোরূপ অতিরিক্ত আর্থিক স্বার্থ বা অনার্থিক স্বার্থ তথা কোনো প্রকার রিয়াকারিতা-দেখানোপনা ও সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করার উদ্দেশ্য শামিল থাকতে পারবে না। এটি দিয়ে কারো ওপর অনুগ্রহ দেখানো হবে না বা যাবে না। অন্য কারো কাছে প্রকাশ করে নিজের দানশীলতা বা দয়াপরবশের কথাও প্রকাশ করা যাবে না।
উপরের উভয় সুদই ক্ষতিকর। মুসলমানরা যেখানে একাধারে নৈতিক, কল্যাণকামী এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন পরস্পরের বন্ধু। কিন্তু সুদ মানুষের বিবেককে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলে যে, ক্রমান্বয়ে স্বার্থপরতা, লোভ ও কৃপণতা ব্যক্তির চরিত্রে বিকাশ লাভ করে। ফলে সমাজ থেকে কল্যাণ ও ভ্রাতৃত্ববোধ পালিয়ে যায়। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় সম্পদ বণ্টন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টিতে সুদ বিরাট প্রতিবন্ধক। সুদ সমাজের নিম্ন আয়ের লোকদের সামান্য সম্পদটুকুও সুদের মাধ্যমে চুষে নিয়ে গুটিকয় ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে সোপর্দ করে। ইসলামী সমাজব্যবস্থায় ব্যক্তির সম্পদে সমাজের অধিকার স্বীকৃত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের ধনসম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে’ (সূরা আল জারিয়াহ-১৯)। কিন্তু সুদি সমাজে সম্পদের একচ্ছত্র বা একচেটিয়া মালিক ব্যক্তি নিজেই। এতে অন্যের কোনো হক বা অধিকার নেই।
সুদি সমাজে আয়-ব্যয়ে হালাল-হারামের কোনো পার্থক্য করা হয় না। ইসলামে একমাত্র হালাল বা বৈধ পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জন করতে হবে এবং হালাল ও বৈধ পন্থায় ভোগ ও বিনিয়োগ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সুদি ব্যবস্থায় বৈধ ও অবৈধ এর কোনো পার্থক্য করা সুদ পেলেই হলো। জাতীয় সামষ্টিক কল্যাণের ওপর কোনো ধ্বংসকর প্রভাব পড়ল এবং কত লোক দুরবস্থার শিকার হলো এসব বিষয়ে তার কোনো মাথাব্যথাই থাকে না।
ম্যানেজার, আইবিবিএল, জিন্দাবাজার শাখা, সিলেট

 


আরো সংবাদ



premium cement
তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইস্ফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ১৪ বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার পায়নি এসআই গৌতম রায়ের পবিবার মিলান-লিভারপুলের বিদায়, সেমিফাইনালে আটলন্টা-রোমা

সকল