২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আল্লাহর নির্দেশাবলি

-

(প্রথম অংশ)
আমাদের সৃষ্টির মূল আল্লাহ তায়ালা। তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। প্রাণীকুলে, মহাবিশে^, আকাশ এবং পৃথিবীর মধ্যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে স্থলভাগে ও জলভাগে এমন কিছু কেউ দেখাতে পারবে না যার স্রষ্টা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আল্লাহ তায়ালা নন। আল্লাহর সৃষ্ট বস্তু হতে আমরা অনেক কিছু তৈরি করি, যা সৃষ্টি নয় বরং প্রস্তুতকৃত বা রূপান্তরিত। যার পেছনে আছে কাঁচামাল, যা আল্লাহর সৃষ্টি। উদাহরণস্বরূপ- ইটের কাঁচামাল মাটি। ইট আমরা প্রস্তুত করি কাঁচা মাটি দিয়ে, যা আল্লাহর সৃষ্টি।
ফেরেশতা, জিন, মানুষ নিঃসন্দেহে আল্লাহর সৃষ্টি। সবাই আল্লাহর আদেশাধীন। ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনে শতভাগ সফল। কিন্তু আমরা মানুষরা ও জিনেরা অনেকাংশে ব্যর্থ এবং উদাসীন। অবশেষে পরকালে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি আমাদের জন্য রক্ষিত। আমরা আল্লাহর কতখানি অনুগত, বাধ্য, তাঁকে যথাযথভাবে ভয় করি এর মাপকাঠি তাঁর আদেশ-নিষেধ পালনের পরিমাণ। সফলতা বা ব্যর্থতা ইত্যাদি নির্ভর করে কতখানি পালন করতে পারলাম আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ, যা পালনে পাল্লা (মিযান) ভারী অন্যথায় তা হালকা হয়। আদেশ পালনীয়, নিষেধ বর্জনীয়। এমতাবস্থায় আমাদের অবশ্যই জানতে হবে আল্লাহর আদেশ-নিষেধাবলি, কারণ পালন করা বা মানার পূর্বশর্ত হলো জানা। জানলে মানার বা পালন করার প্রশ্ন, আর না জানলে তো মানার বা পালন করার প্রশ্নই ওঠে না।
আসুন আমরা পর্যায়ক্রমে আল্লাহর আদেশ ও নিষেধগুলো জানতে থাকি, যদি জানা না থাকে। তাই আমি ধারাবাহিকভাবে আল্লাহর আদেশ-নিষেধসূমহ যা আমার জানা তা আপনাদের খেদমতে পেশ করব ইনশা আল্লাহ।
আল্লাহর আদেশসমূহ :
১. ‘হে গোলামগণ! প্রতিষ্ঠিত করো সালাত বা নামাজ এবং পরিশোধ করো জাকাত ও রুকুকারীদের (বিনয়ী) সাথে রুকু করো।’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ৪৩)
সালাত প্রতিষ্ঠা ও আদায় করা এবং জাকাত প্রদান করা আমাদের ওপর ফরজ উপরিক্ত আয়াত থেকে। এ ফরজ আদায় না করলে আমরা হবো মহাপাপী, যার পরিণাম ভয়াবহ। আল্লাহর এ আদেশে আমাদের জন্য রয়েছে অবর্ণনীয় কল্যাণ। সংক্ষেপে বলছি- সালাত আদায়কারীর সালাত কবুল হলে সে হবেন নিষ্পাপ অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য সালাত আদায় সালাত আদায়কারীকে বিরত রাখবে সব অশ্লীলতা ও নিষিদ্ধ কাজ হতে। নিষিদ্ধ কাজগুলো যথা : চুরি, ডাকাতি, মিথ্যা বলা, ওজনে কম দেয়া, খাদ্যে ভেজাল মেশানো, ভূমি দস্যুতা, অত্যাচার, অবিচার, ব্যভিচার, খুনাখুনি, ঝগড়া-ফাসাদ, হিংসাবিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, ওয়াদা ভঙ্গ করা ইত্যাদি। চিন্তা করুন কল্যাণের অধিক্য, যে সমাজে নিষিদ্ধ কাজের চিহ্ন নেই, সে সমাজ কি শান্তির সাগরে অবগাহন করছে না? উত্তর- অবশ্যই শান্তির সাগরে অবগাহন করছে। জাকাত ব্যবস্থা মানবজাতির বিশেষ কল্যাণ সাধনের উপায় দারিদ্র্য বিমোচন ও সাময়িক অভাব দূর করার মাধ্যমে। সম্পদ মানুষের অতি প্রিয় বস্তু, এমনকি নেশাগ্রস্ততারও কারণ। সম্পদ আধিক্যের নেশা মানুষকে অমানুষ ও আল্লাহর দাসত্ব থেকে উদাসীন করে ফেলে। এহেন সম্পদ তারাই ত্যাগ করে যারা সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে ভয় করে। এমন উদাহরণ পাওয়া যেতে পারে পার্থিব স্বার্থে বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে অনেকে জাকাত প্রদান করে, যা আল্লাহর কাছে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। জাকাত প্রদান হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তাঁর আদেশ পালন ও মানব কল্যাণ সাধন করে।
২. ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা আল্লাহভীরুতা অর্জন করতে পারো।’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
রোজা রাখা আল্লাহভীরুতার প্রমাণ। রোজা আমাদের শারীরিক দাসত্ব। গরমকালে রোজায় অনেক মানুষ ক্ষুধা-পিপাসায় অসাধারণ কষ্ট পায় ও কাতর হয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহকে ভয় করে বলে কষ্ট ভোগ করা সত্ত্বেও সিয়াম সাধনা করতেই থাকে। সাথে সাথে ২০ রাকাত তারাবিহ, কুরআন তিলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদত করতে থাকে। সত্যিকার সিয়ামসাধকগণ আল্লাহভীরু। ফলে তারা বিরত থাকেন সর্বদা আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ থেকে যার অসাধারণ বা অবর্ণনীয় কল্যাণ সাধন ‘সালাত’ আলোচনার ক্ষেত্রে উপরে করা হয়েছে। রাসূল সা:-এর ঘোষণা- সিয়াম সাধকের দু’টি মহাআনন্দ। একটি যখন ইফতার করে তখন নিবারণ হয় সারা দিনের অভুক্ত ও গলা শুকানো পিপাসার্ত অবস্থা। অপরটি আল্লাহর সাক্ষাৎপ্রাপ্ত হবে জান্নাতে। কি বিশাল সুসংবাদ সিয়াম সাধকগণের জন্য। সালাত আদায় ও রোজা পালন সামগ্রিক অর্থাৎ প্রত্যেক বয়োপ্রাপ্ত নারী-পুরুষের জন্য ফরজ।
হে আল্লাহ! দয়া করে আমাদের তাওফিক দিন আমরা যেন কঠিন পরিস্থিতিতেও স্মরণে রাখতে পারি আপনার আদেশাবলি ও নিষেধাজ্ঞাগুলো যথাযথভাবে পালন করে আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আমিন।

লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ
ও চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার, আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস।


আরো সংবাদ



premium cement