২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মুহাম্মদ সাঃ অনন্য হয়ে উঠার রোলমডেল

-

গতকালের পর
অধ্যায় ৪
সারসংক্ষেপ
বয়ঃসন্ধিকালকে সাধারণত শৈশব থেকে প্রাপ্তবয়স্কতার মধ্যে যাওয়ার স্বাভাবিক পরিবর্তনের পরিবর্তে ঝামেলাপূর্ণ পর্যায় এবং একটি বিশ্রী সময় বলে মনে করা হয়। বাস্তবে কোনো কিছুই কিশোর-কিশোরীদের জন্য অভ্যন্তরীণভাবে নেতিবাচক নয়, তারা সঠিক যতœ, বিশ্বাস ও সম্মান পেলে সমানভাবে ভালো ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারে। মায়ের মৃত্যুর পর, মুহাম্মদ সা: ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তার চাচার পরিবারের সাথে বসবাস করেছিলেন, যারা তাঁর সাথে ভালোবাসা ও সম্মানের সাথে আচরণ করেছিল। বয়ঃসন্ধিকালে যখন কেউ মা-বাবার কাছ থেকে দূরে থাকে সঠিক যতœ ও সমর্থন নিজস্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য সেই কিশোরের মধ্যে সক্ষমতা তৈরি করে।
মুহাম্মদ সা:-এর কৈশোর
নির্ভরযোগ্য হন
বেশির ভাগ মানুষ বয়ঃসন্ধিকালকে একটি বিশ্রী, সংবেদনশীল পর্যায় বলে মনে করে। কেউ কেউ হয়তো এ অধ্যায়ের শিরোনাম দেখেও দ্বিধান্বিত হয়েছেন। নবী কি একবার কিশোর হতে পারতেন?
যাই হোক, বয়ঃসন্ধিকাল হলো শৈশব ও যৌবনের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ক্রান্তিকাল, যার মধ্য দিয়ে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অতিবাহিত হয় এবং এটিকে কোনোভাবে বিব্রতকর বা অপ্রীতিকর বলে মনে করা উচিত নয়।
এটি সত্য যে, বয়ঃসন্ধিকাল সাধারণত হরমোনের ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তনের অনুষঙ্গী হয়, তবে সব পরিবর্তন কল্পনা অনুযায়ী নেতিবাচক নয়। কিশোর-কিশোরীদের মানবিক শক্তি অভ্যন্তরীণভাবে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনটাই নয়; বরং তাদের পারিপার্শ্বিক ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব দ্বারা তারা অবয়ব গ্রহণ করে।
আসল চ্যালেঞ্জটি জীবনের একটি পর্যায় হিসেবে বয়ঃসন্ধিকালের সাথে নয়, বরং একজন কিশোর কিশোরী যে পরিবেশে বাস করে তার সাথে। কিশোররা সহজাতভাবে বিরক্তিকর নয়, তবে তারা খুব সংবেদনশীল এবং তাদের বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিচালনা করা দরকার।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমরা মুহাম্মদ সা:-এর বর্ধিত পরিবার সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এ অধ্যায়ে আমরা তার কৈশোরের বছরগুলোতে বাড়ির ভেতরে ও বাইরের জীবন কেমন ছিল সে সম্পর্কে আরো জানব।
এ অধ্যায়ের লক্ষ্য হলো কিশোর-কিশোরীদের আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করা এবং অন্যদের বুঝতে সাহায্য করা যে, কিশোর-কিশোরীরা একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে যদি তারা স্নেহময়, সম্মানজনক পরিবেশে থাকে, যা গঠনমূলকভাবে তাদের শক্তি ও ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করে।
কিশোর বয়স
যদিও বয়ঃসন্ধিকালের সংজ্ঞা সংস্কৃতি থেকে সংস্কৃতিতে পরিবর্তিত হয় এবং কিছু পরিবেশ অন্যদের চেয়ে দ্রুত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। এ অধ্যায়ে আমরা বিশেষভাবে মুহাম্মদ সা:-এর কিশোর বয়সকে ফোকাস করব।
কিছু মুসলিম পাঠক এখানে বলতে পারেন, ‘মুহাম্মদ সা:-এর আল্লাহর সুরক্ষায় ছিলেন এবং কিশোর হওয়ায় তাকে পরীক্ষা ও ক্লেশের মধ্য দিয়ে যেতে হবে এমন কোনো সুযোগ নেই।’
এটি সত্য যে, আল্লাহ মুহাম্মদ সা:কে রক্ষা করেছিলেন, কিন্তু নবীর সম্পূর্ণ মানব প্রকৃতির সীমাবদ্ধতার মধ্যে এবং মানবিক উপায়ে তিনি লালিত পালিত হয়েছেন। যেভাবে যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরীর লালন-পালন কল্যাণময় হতে পারে।
আল্লাহ সেই ব্যক্তিদের মাধ্যমে কাজ করেছেন যারা স্নেহের সাথে নবীকে লালন-পালন করেছেন এবং তাঁকে এমন একটি পরিবেশ দিয়েছেন, যা তাঁর শক্তিকে কাজে লাগিয়েছেÑ যেমনটি আমাদের মধ্যে যে কেউ করতে পারেন। নবীর অসাধারণ জীবনকে উপেক্ষা করে আমাদের বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয় যে, এটি যে কতটা অনুপ্রেরণাদায়ক হতে পারে। সাধারণ ব্যক্তিরা নিজেদের বিকাশ করতে চান; অন্যথায় মুহাম্মদ সা:-এর গল্প শুধু শ্রোতাদের বিস্মিত করার জন্য উপযোগী হবে এবং কিভাবে আমরা তাঁকে আত্ম-উন্নতির জন্য একটি মডেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারি তার একটি বাস্তব উদাহরণ হিসেবে নয়।
বাড়িতে ভালোবাসা ও সম্মান
মুহাম্মদ সা: তাঁর চাচা আবু তালিবের পরিবারের সাথে বসবাস করতেন, যেখানে সদস্য ছিল আটজনÑ আবু তালিব, তার স্ত্রী ফাতিমা বিনতে আসাদ এবং তাদের সন্তান জাফর, জুমানা, ফাখিতা, আকিল, আলি ও তালিব।
আবু তালিবের বাড়ির আকার, কয়টি ঘর ছিল বা আসবাবপত্রের ধরন কেমন ছিল সে সম্পর্কে আমরা বেশি কিছু জানি না, তবে ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন যে, পরিবারটি সচ্ছল ছিল না। তাদের আর্থিক অবস্থার কারণে মাঝে মধ্যে পারিবারিক বিরোধ ছিল, কিন্তু তবুও সামগ্রিক পারিবারিক পরিবেশ স্থিতিশীল ছিল, যা গুরুত্বপূর্ণÑ বিশেষ করে কিশোর বয়সে। মুহাম্মদ সা: তাঁর কিশোর বয়স একটি স্থিতিশীল, যতœশীল বাড়িতে কাটিয়েছেন যেটি কারো জন্য বোঝাপড়া ও উপলব্ধিপূর্ণ পরিবেশ ছিল। জীবনের এই সংবেদনশীল পর্যায়ে আল্লাহ কিভাবে মুহাম্মদ সা:কে রক্ষা করেছিলেন তা কুরআন তুলে ধরেছে : ‘তিনি কি তোমাকে এতিম হিসেবে পাননি এবং আশ্রয় দেননি?’ (৯৩:৬) এখানে আশ্রয় কেবল মুহাম্মদ সা:-এর মাথার ওপর একটি ছাদ ছিল না, বরং একটি স্থিতিশীল পারিবারিক পরিবেশ ছিল, যা একজন কিশোর-কিশোরীর ভালোবাসা ও সম্মানের চাহিদা পূরণ করে।
সমীক্ষার পর সমীক্ষায় দেখা যায় যে স্থিতিশীল বাড়িতে বেড়ে ওঠা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে, তারা স্কুলে বেশি সফল হয় এবং মাদকের ব্যবহার ও আত্মহত্যার চিন্তার মতো সমস্যাগুলোর জন্য কম ঝুঁঁকিপূর্ণ হয়।
স্থিতিশীলতা ও বোঝাপড়ার সাথে অবশ্যই প্রেম ও স্নেহ থাকতে হবে, মুহাম্মদ সা: তাঁর কিশোর বয়স যেখানে কাটিয়েছিলেন সেই উভয় পরিবারে এই পরিবেশ ছিল।
আবু তালিব তার ভাইপো মুহাম্মদ সা:কে খুব ভালোবাসতেন, তার ভালোবাসা বিভিন্ন উপায়ে প্রদর্শন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছেÑ
ক্স পরিবার হিসেবে একসাথে খাবারের আগে তার জন্য অপেক্ষা করা।
ক্স তার কাছে ঘুমানো।
ক্স কাজ ও ভ্রমণে তাকে সাথে নিয়ে যাওয়া।
সাতটি শিশুর চার পাশে ছুটে চলা একটি ঘর পৃথিবীতে স্বর্গ বা নরক দুটোই হতে পারে এবং একটি স্নেহময়, স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে ফাতিমা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন আর আবু তালিবের ভূমিকার চেয়ে তার ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
নবীর ঐতিহ্যবাহী জীবনীগুলোতে চাচী ফাতিমার ওপর খুব কম ফোকাস করা হয়েছে এবং আমরা তরুণ মুহাম্মদ সা:-এর সাথে তার মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে তুলনামূলক কম জানি। কিন্তু আমরা জানি যে, একজন যতœশীল মহীয়সী হিসেবে তার খ্যাতি ছিল যিনি ছিলেন অনন্য স্ত্রী ও মা। যিনি তার সন্তানদের লালন-পালনের জন্য একটি অসামান্য কাজ করেছেন (আলী রা: ও জাফর রা:-এর মতো প্রাথমিক ইসলামী ইতিহাসের মূল ব্যক্তিত্বসহ)। একটি হাদিস বা নবীর কথা এর সাক্ষ্য দেয়।
মুহাম্মদ সা: বলেছেন, ‘আবু তালিব ছাড়া আর কেউ আমার প্রতি ফাতিমার মতো সদয় ছিলেন না।’ খাদিজাকে বিয়ে করা পর্যন্ত মুহাম্মদ সা: ফাতিমা বিনতে আসাদের বাড়িতে মোট ১৭ বছর কাটিয়েছেন। এমনকি খাদিজাকে বিয়ে করে এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পরও তাঁর চাচী ফাতিমার সাথে মুহাম্মদের সম্পর্ক শুধু শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
যখন ফাতিমার স্বামী আবু তালিব মারা যান, ফাতিমা ইসলাম গ্রহণ করাকে বেছে নেন এবং তার ছেলে আলী রা: এবং পুত্রবধূ নবীকন্যা ফাতিমার সাথে চলে যান। ছোট ফাতিমা তার শাশুড়ির ভালো যতœ নেন, ফাতিমা বিনতে আসাদ তার যৌবনে তার বাবার প্রতি যে দয়া দেখিয়েছিলেন তার প্রতিদান দিয়েছিলেন।
মুহাম্মদ সা: মদিনায় তাঁর চাচীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যখন তিনি মারা যান, তার শ্রদ্ধা ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে নিজেই তার কবর খনন করেছিলেন এবং তার রূহের মাগফিরাতের জন্য মুনাজাত করেছিলেন।
আপনারও কিশোর-কিশোরী সন্তান-সন্ততির সাথে একটি দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত যা সময়ের সাথে সাথে আরো শক্তিশালী হয়। [চলবে]
অনুবাদ : ফারাহ মাসুম


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য বেনাপোল সীমান্তে ৭০ লাখ টাকার স্বর্ণের বারসহ পাচারকারী আটক

সকল