২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মুহাম্মদ সা: অনন্য হয়ে ওঠার রোলমডেল

-

গতকালের পর
প্রভাবের বৃত্ত
কঠিন পরিস্থিতি এবং অবস্থার (আমাদের উদ্বেগের বৃত্ত) ব্যাপারে অভিযোগ করার পরিবর্তে, আমাদের অবশ্যই আমাদের প্রভাবের বৃত্ত প্রসারিত করার জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের উদ্বেগের বৃত্তের মধ্যে এমন সব সমস্যা রয়েছে যা আমাদের উদ্বিগ্ন করে কিন্তু আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না (যেমন- নৈতিক শিথিলতা, অন্য মানুষের মনোভাব এবং আচরণ)। আমাদের প্রভাবের বৃত্তের মধ্যে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এমন জিনিসগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে।
আমরা হয়তো নৈতিক শিথিলতা রোধ করতে বা অন্যদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, তবে আমরা অবশ্যই নিজেদের জন্য চিন্তা করতে পারি এবং আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারি। মুহাম্মদ সা:-এর ক্ষেত্রে, রাস্তার মোড়ে ধর্মপ্রচারকদের কথা শোনার জন্য লোকেরা মেলায় আসেনি এবং অল্প কয়েকজন ক্রেতা কিসের কথা শোনার জন্য তাদের কাজে বিরতি দিয়েছিল, তারা হৃদয়ের কাছে কম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।
মেলার পরিবেশ খুব কমই সেটাকে উৎসাহিত করে। লোকেরা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে মেলায় এসেছিল (অমনোযোগী হওয়ার বিষয়টি যেভাবে কিস বলেছেন)। কিন্তু যখন তাঁর বয়সী অন্য যুবকরা বাজারের বন্য দিকে আকৃষ্ট হয়েছিল, তখন মুহাম্মদ সা: ভিড়ের মাঝখানে থামলেন, জ্ঞানের সন্ধান করলেন। তিনি তাঁর পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে সরে আসেননি, তবে তিনি ভুল পথে যাওয়া এড়িয়ে গেছেন যেভাবে তার অনেক সহকর্মী নিচে নেমেছে।
বহু দেবতা
ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষভাগে আরব উপদ্বীপে ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি বিস্তৃত পরিসর ছিল, কিন্তু প্রধান ধর্ম ছিল বহু ঈশ্বরবাদ। অবশ্যই, আরবদের বহু দেবতাবাদের এই রূপটি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে এবং আজকের বেশির ভাগ লোক এটাকে ভালোভাবে বুঝতে পারে না। মক্কার অনেক মুশরিক ঈশ্বরে বিশ্বাস করত, কিন্তু ঈশ্বরের পাশাপাশি তারা অন্যান্য বস্তুর পূজা করত যেগুলোকে তারা পবিত্র বলে মনে করত, যেমন- সূর্য।
সূর্য উপাসকরা সূর্যের সামনে মাথা নত করে এবং তাদের সন্তানের নাম আবদুল শামস (সূর্যের দাস) রাখতে পারে, যখন ফেরেশতাদের উপাসনাকারীরা তাদের ঈশ্বরের কন্যা বলে মনে করে। অন্য কথায়, তারা ঈশ্বরের উপাসনা করত, কিন্তু অন্যান্য বস্তু বা দেবতাকেও তার সাথে উপাসনার যোগ্য বলে মনে করত।
অধ্যায়ের পরিশিষ্টে, আমরা ষষ্ঠ শতকের শেষের দিকে ও সপ্তম শতকের শুরুর দিকের মক্কার ধর্মীয় বিশ্বাসের দিকে দেখবো, যার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রয়েছে যারা নিজেদের একেশ্বরবাদী বা হানাফি বলে অভিহিত করত এবং যাদের বিশ্বাস সংখ্যাগরিষ্ঠদের থেকে তীব্রভাবে ভিন্ন ছিল।
আবারো একবার এ বিষয়টি দেখানোর জন্য যে কীভাবে মুহাম্মদ সা:, প্রধানত বহু ঈশ্বরবাদী সমাজে তার বৃত্ত প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং নিজের স্বতন্ত্র চিন্তা করেছিলেন।
একেশ্বরবাদ
সব মক্কাবাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুশরিকের বিশ্বাস অনুসরণ করত না। মুশরিক ছাড়াও ছোট ছোট ইহুদি এবং খ্রিষ্টান সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সেখানে ছিল এবং মান্দায়ান নামে আরেকটি দল ছিল (যারা এখনো বিদ্যমান এবং ৬০-৭০ হাজার লোক নিয়ে গঠিত, বেশির ভাগই উত্তর ইরাকে বসবাস করে, কিন্তু ২০০৩ সালের পরে বিক্ষিপ্ত) আর সেই সাথে বিভিন্ন বিশ্বাসের সাথে একেশ্বরবাদীরা কিন্তু একত্র হয়েছিলেন। ইব্রাহিম আ: কাবা নির্মাণ করেছিলেন এবং আল্লাহ ছাড়া আর কিছুর উপাসনা তিনি করেননি।
একেশ্বরবাদীরা অবশ্য ভেঙে পড়েছিল এবং ইব্রাহিম আ: কিভাবে আল্লাহর ইবাদত করেছিলেন সে বিষয়ে একমত ছিল না (অথবা সম্ভবত জানতো না)। তার অনুসারীদের পরে কেউ কেউ ইহুদি ধর্মে এবং কেউ কেউ খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হন। ইসলামিক ঐতিহাসিকরাও ইব্রাহিমের অনুসারীদের ‘আহনাফ’ হিসেবে পরিচিতি দেন, কিন্তু মুহাম্মদ সা:-এর সময়ে তারা কতজন ছিলেন তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন।
তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন :
ক্স ওয়ারাকা নওফাল : একজন বুদ্ধিজীবী যিনি হিব্রু ভাষাও জানতেন এবং ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত ছিলেন।
ক্স জায়েদ আমর : মক্কার সমাজের সমালোচনাকারী এবং তার ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য তাকে হয়রানি করা হয়েছিল।
আহনাফরা ছিল একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু এবং তবুও তারা সংখ্যাগরিষ্ঠের মুখে ভিন্ন বিশ্বাসের সাথে তাদের ঐতিহ্য রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল।
এটা সমাজের বিরুদ্ধে বিবেকহীন বিদ্রোহের আহ্বান নয়। বরং, সমাজের মধ্যে প্রচলিত যা কিছু আছে তা অনুকরণ না করে, আপনার দৃঢ়বিশ্বাস থেকে আপনার নীতিগুলো তৈরি করা উচিত। নিজের জন্য চিন্তা করাতে আপনার বুদ্ধি ব্যবহার করুন।
আপনার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করুন
যদিও মক্কা সম্পর্কে এখনো আরো অনেক কিছু বলা যেতে পারে, আমরা মুহাম্মদ সা:-এর সময়ে মক্কার সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর (নারী, সংখ্যালঘু, অর্থনীতি ইত্যাদি) রূপরেখা দিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা আলোকপাত করেছি কিভাবে নবী মুহাম্মদ সা: তাঁর পরিবেশের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন এবং কিভাবে নারী, বিদেশী এবং মান্দায়ানরা তাদের সামাজিক পরিবেশের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।
প্রকৃতি বনাম লালন-পালন
পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা মুহাম্মদ সা:-এর বর্ধিত পরিবার এবং কিভাবে এটি তার জীবনের অভিজ্ঞতাকে বৈচিত্র্যময় করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল তা দেখব। কিন্তু প্রথম, একটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা দিয়ে এই অধ্যায় শেষ করতে হবে-
প্রকৃতি বনাম লালন-পালনের বিতর্ক বহু শতাব্দী ধরে অমীমাংসিত, তবে সম্ভবত এটি নিয়ে চিন্তা করার সময় এর আসল উত্তরটি আমাদের পরিবেশ বা আমাদের উৎপত্তি নয়, বরং সবচেয়ে বেশি দেয় আপনার নিজস্বতা। আপনিই নির্ধারণ করেন যে, আপনার পরিবেশ এবং আপনার আশপাশের লোকদের সাথে কীভাবে আপনি যোগাযোগ করবেন- আপনার স্ত্রী এবং সন্তান, আপনার প্রতিবেশী, আপনার সহকর্মীদের সাথে।
আপনার পরিবেশ এবং আপনার উৎপত্তি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, তবে আপনি কখনোই এটিকে নিয়ে ভুল বোঝবেন না যে, আপনার নিজের কোর্স সেট করার ক্ষমতা নেই।
এই অধ্যায়ে, আমরা এমন লোকদের বাস্তব জীবনের উদাহরণ দেখেছি যারা সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি এবং একটি অসহায় পরিবেশের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তাদের পরিবেশকে আয়ত্ত করেছে। তারা এই বাধাগুলো অতিক্রম করে সমাজে দাঁড়িয়েছে।
নিচের টেবিলটি সংক্ষেপে আপনাকে এই অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণগুলোর কথা মনে করিয়ে দেবে-
মুহাম্মদ সা:-এর পরিবেশ থেকে শিক্ষা

মুহাম্মদের পরিবেশ
-মুহাম্মদের পরিবেশে অনেক প্রলোভন ছিল, কিন্তু ভালো বিকল্পও ছিল, যেমন মুহাম্মদ সা: মেলায় কিস ইবনে সাদার চলন্ত খুতবা শুনেছেন।
-মুহাম্মদের পরিবেশে বহু ঈশ্বরবাদের পক্ষে সামাজিক চাপ ছিল, তবুও একেশ্বরবাদীরা এই চাপকে প্রতিহত করেছিল।
-মুহাম্মদ সা:-এর আরব সমাজে বর্তমান অনারব জাতিগোষ্ঠীকে প্রান্তিক করে রেখেছিল, তবুও কিছু কিছু দক্ষতা এবং কুশলতার কারণে তারা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিল।
-মক্কায় মুহাম্মদ সা:-এর সমাজ নারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল : তবুও কেউ কেউ একটি বিশিষ্ট স্থান আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল।


আপনার পরিবেশ
-আপনার আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে অভিযোগ করবেন না। আপনার উচ্চাকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত এবং আপনাকে বিকাশ করতে দেয় এমন সুযোগ এবং বিকল্পগুলো সন্ধান করুন।
-সমাজে প্রভাবশালী প্রবণতা অনুকরণ করবেন না। এই কারণে যে এটি অন্য সবাই করছে। আপনার নিজের প্রত্যয় প্রকাশ করার চেষ্টা করুন।
-আপনার প্রতিভা এবং দক্ষতার উপর আস্থা রাখুন, এমনকি যদি আপনি সংখ্যালঘুও হন। আপনি আবিষ্কার করবেন যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ এটির জন্য আপনাকে সম্মান করবে।
-আপনার প্রতিভা প্রকাশ করুন, এমনকি সমাজ যদি তাতে সামান্য সমর্থন এবং উৎসাহ দেয় তবুও।


আরো সংবাদ



premium cement
মোরেলগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু আল-আকসায় কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় জুমআর জামাত ‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান

সকল