২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নাফসে মুতমায়িন্নাহ

-

মানুষের মাঝে তিন ধরনের নাফসের সম্মিলন ঘটেছে। নাফসে আম্মারাহ, নাফসে লাও ওয়ামাহ এবং নাফসে মুতমায়িন্নাহ। এর মধ্যে নাফসে আম্মারাহ বা কুপ্রবৃত্তি মানুষকে জৈবিক কামনা-বাসনা ও দুনিয়ার লোভ-লালসার দিকে আকৃষ্ট করে তাকে মন্দ কাজে ডেকে নিয়ে যায়। মানব মন আপন সত্তার দিকে মন্দ কাজের আদেশদাতা। কিন্তু মানুষ যখন আল্লাহ ও আখিরাতের ভয়ে মনের আদেশ পালনে বিরত থাকে তখন তা দলাও ওয়ামাহদ হয়ে যায়, অর্থাৎ মন্দ কাজের জন্য তিরস্কারকারী ও মন্দ কাজ থেকে তাওবাকারী হয়। আর যখন কোনো মানুষ নিজের মনের বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা করতে করতে মনকে এ স্তরে পৌঁছিয়ে দেয় যে, তার মধ্যে মন্দ কাজের কোনো স্পৃহাই অবশিষ্ট থাকে না, তখন তা মুতমায়িন্নাহ হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রশান্ত ও নিরুদ্বেগ মন। পুণ্যবানরা চেষ্টা সাধনার মাধ্যমে এ স্তর অর্জন করতে পারে (ইবনুল কাইয়েম)।
কুরআনের একটি আয়াতে নাফসে মুতমায়িন্নাহ অর্জন করার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ পাওয়া যায়। যখন বাদশাহ আজিজের স্ত্রী হজরত ইউসুফ আ:-এর বিরুদ্ধে অভিযোগের অপরাধ নিজের বলে স্বীকার করে নেয়। তখন আজিজের স্ত্রী জানান, মানুষের মনে নাফসে আম্মারাহ বা খারাপ চিন্তা আসতেই পারে কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
‘আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্মপ্রবণ, কিন্তু সে নয় যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেন। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা ইউসুফ-৫৩)।
মিসরের বাদশাহর স্ত্রীর কথা (যেমন ইবনে কাসিরের মত) তাহলে তা বাস্তবের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। কেননা, সে নিজের অপরাধ এবং ইউসুফ আ:কে ফুসলানো ও ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করানোর কথা স্বীকার করেছিল। এটা সে তার নিজের কৃত অপরাধের কারণ উল্লেখ করে বলছে যে, মানুষের মনের প্রবণতা এমন যে, সে তাকে মন্দ কর্মের প্রতি প্ররোচিত করে এবং খারাপ কাজের দিকে অগ্রসর করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ইউসুফ আ:-এর অন্তর ছিল নাফসে মুতমায়িন্নাহ কিন্তু আজিজের স্ত্রীর অন্তর ছিল নাফসে আম্মারাহ। অর্থাৎ, মনের কুপ্রবণতা থেকে সেই বেঁচে থাকে, যার প্রতি আল্লাহর রহমত ও অনুকম্পা হয়। যেমন তিনি ইউসুফ আ:কে বাঁচিয়ে নিলেন।
আবার সূরা ফজরে আল্লাহ মুমিনদের রূহকে মুতমায়িন্নাহ বলে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেছেন, ‘হে প্রশান্ত আত্মা’ (সূরা ফজর-২৭)। অর্থাৎ যে আত্মা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ ও তার প্রতি সন্তুষ্ট। কারণ বান্দার সন্তুষ্টির মাধ্যমে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট। আল্লাহ যখন বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন তখনই বান্দা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর আনুগত্য করতে পারে এবং আল্লাহর ফায়সালাকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়। সর্বশেষে এমন আত্মা মৃত্যু থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রেই প্রতিটি ধাপ অতি উত্তমভাবে পার হয়ে যাবে সন্তুষ্ট অন্তরে।
নাফসে মুতমায়িন্নাহ অর্জনের লক্ষ্যে সুলাইমান আ: দোয়া করেছিলেন যে, ‘আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের শামিল করুন’ (সূরা নামল-১৯)। কারণ একমাত্র প্রসিদ্ধ অন্তর ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না। তাই আল্লাহর কাছে নেককার হয়ে জান্নাতে প্রবেশের জন্য দোয়া করেছেন তিনি। ইউসুফ আ: দোয়া করে বলেন, ‘আর আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের সাথে মিলিয়ে দিন’ (সূরা ইউসুফ-১০১)। ইবরাহিম আ: বলেছিলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের সাথে মিলিয়ে দিন’ (সূরা আশ শুআরা-৮৩)। এতে আরো স্পষ্ট যে, সৎসংসর্গ একটি মহা নিয়ামত, যা নবী রাসূলগণও প্রার্থনা করে চেয়েছেন।
আমাদের সবার উচিত নাফসে মুতমায়িন্নাহর জন্য প্রার্থনা করা এবং অন্তরকে সেই দিকে ধাবিত করা। যেন আমাদের সর্বশেষ আবাসস্থল হয় জান্নাত।
ইসলামী গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement

সকল