২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সফলতা লাভের উপায় ও উপকরণ

-

মানবজীবন আল্লাহর দেয়া এক বিশেষ নেয়ামত। এ জীবনের মূল্য অনেক। মানুষকে বিনা কারণে সৃষ্টি করা হয়নি। তার একটি লক্ষ্য আছে। রয়েছে অনেক কাজ। মানবজীবন তখনই সার্থক হয়ে ওঠে যখন এ জীবনকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করা যায়। আর এ জন্য মানুষের জীবনযাপন ও আচার-আচরণে কিছু মৌলিক পরিবর্তন দরকার। যে পরিবর্তনের ফলে মানুষ চিন্তায় ও কাজে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারবে। জীবন হয়ে উঠবে অর্থবহ। ফলে তাকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে তা সফল হবে। মানুষ হবে প্রকৃত সফলতার অধিকারী।
স্মরণে রাখা প্রয়োজন : মানুষ অন্য দশটি প্রাণীর মতো নয়। তাকে সৃষ্টি করার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আর অন্য প্রাণীদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য এক নয়। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের জন্য। অন্যান্য প্রাণিকুল আল্লাহর ইবাদত করলেও তাকে মূলত বানানো হয়েছে মানুষের প্রয়োজনে। সুতরাং যে আল্লাহ মানুষের জীবন গতিশীল ও আনন্দময় করার জন্য সব ধরনের উপাদান সৃষ্টি করলেন তার প্রতি মানুষের কি কোনো দায়বদ্ধতা নেই? আপনি নির্দিষ্ট একটি ভূখণ্ডে জন্ম নিয়ে সে দেশের জাতীয়তার পরিচয় নিলেন। ওই দেশের আইন মান্য করলেন। যে আল্লাহ এই বিশ^টাকে বানালেন, আপনার যাবতীয় প্রয়োজন নেয়ামত দিয়ে ভরে দিলেন তার হুকুম আপনি কিভাবে অমান্য করবেন? দুনিয়ার জীবন নিয়ে ভাবছেন। আরাম-আয়েশ নিয়ে ভাবছেন। সব গোঁড়ামি ত্যাগ করে নিজেকে নিয়ে একবার ভাবুন। উত্তর পাওয়া খুব বেশি কঠিন নয়। আসুন সেই আল্লাহর দিকে ফিরে যাই। বেছে নিই জীবনের সফলতা লাভের উপায়।
আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরণ : মানুষের সামনে যদি জবাবদিহিতার ভয় না থাকত মানুষ যাচ্ছেতাই করতে পারত। মানুষের মন যা চায় তা সে করতে পারে না। তাকে ভালো-মন্দের বিচার করতে হয়। যখন এই মানদণ্ডকে উপেক্ষা করে সে নফসের অনুগামী হয়ে শয়তানের পথ বেছে নেয়, তখন তার ধ্বংস অনিবার্য। যখন মানুষ কুরআনকে জীবনবিধান হিসেবে মানে আর রাসূল সা:-এর দেখানো পথে চলে তখন সে তার জীবনে কল্যাণ সুনিশ্চিত হয়। এই জীবনে যখন মানুষ অভ্যস্ত হয়ে ওঠে সে এক অন্যরকম স্বাদ অনুভব করে। জীবন গেলেও সে কখনো তাগুতি শক্তির কাজে মাথানত করে না। তেজোদীপ্ত ঈমানের বলে সে সমস্ত অন্যায়কে দু’পায়ে মাড়িয়ে সত্য ও সুন্দরের দিকে এগিয়ে যায়। ক্ষণিকের এই সুখকে সে কখনো চিরস্থায়ী সুখের উপর প্রাধান্য দেয় না। তার সব কাজ হবে আল্লাহর জন্য। এমনকি দুনিয়ার কাজগুলোও। পবিত্র কুরআনে রাসূল সা:কে লক্ষ করে বলা হয়েছে, ‘হে নবী আপনি বলুন! নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সব কিছুই বিশ^জাহানের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য’ (সূরা আনয়াম, আয়াত-১৬২)।
মেধার সঠিক ব্যবহার : মানুষের মেধা ও মননশীলতা আল্লাহর দেয়া এক বিশেষ নেয়ামত। তাই একে হিসাব করে খরচ করতে হবে। নিজের বিবেক, বুদ্ধিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে ব্যয় করে জান্নাত হাসিল করে নিতে হবে। কখনো শয়তানের প্ররোচনায় ভ্রান্ত পথ ও মতের অনুসারী না হয়ে সরল সঠিক পথে হাঁটতে হবে। অভিশপ্ত শয়তানের পথকে নিজের জন্য বেছে নেয়া যাবে না। তাহলে ধ্বংস অনিবার্য।
সৃষ্টিজগত নিয়ে চিন্তা : আল্লাহকে চেনার জন্য তার সৃষ্টিজগত নিয়ে চিন্তা করাই যথেষ্ট। এ কারণে কুরআনের বহু জায়গায় সৃষ্টিজগত নিয়ে চিন্তা করতে বলা হয়েছে। এই সুবিশাল আকাশ, গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য, বিশাল সমুদ্ররাজি সবই তার শ্রেষ্ঠত্বের মহিমা প্রকাশ করে। পৃথিবীর বুকে পাহাড়ের সৃষ্টি সবই মহান রবের সীমাহীন কুদরত। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি জমিনের ওপর পাহাড়গুলোকে সুদৃঢ় করেছি যেন তা ওদের নিয়ে নড়াচড়া করতে না পারে...। আমি আকাশকে একটি সুরক্ষিত ছাদ হিসেবে বানিয়ে দিয়েছি...। দিন-রাত, চন্দ্র-সূর্য সবই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন, এরা প্রত্যেকেই মহাকাশের কক্ষপথে সাঁতার কেটে যাচ্ছে’ (সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত : ৩১-৩৩)। সত্যের সামনে মনগড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে নফসের আনুগত্য করবে না।
নিজ নিজ দায়িত্ব পালন : যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য স্বীকার করে সে কখনো নিজের দায়িত্বকে এড়িয়ে যেতে পারে না। এটি মানুষের মর্যাদা ও সাফল্যের দ্বার উন্মোচিত করে। এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সে শুধু একটি ইসলামী পরিবার নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের তার শ্রেষ্ঠ অবদান রেখে যেতে পারে। তার এই দায়িত্বজ্ঞান তাকে যেমন পৃথিবীতে একজন আদর্শ মানুষে পরিণত করবে তেমনি সে একজন নেককার বান্দা হিসেবে বিবেচিত হবে। মহানবী সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’ (বুখারি ও তিরমিজি)।
সামাজিক দায়বদ্ধতা : এই সমাজ তখনই সুন্দর হয় যখন সমাজে বসবাসকারী মানুষগুলো সুন্দর হয়ে ওঠে। এ কারণে প্রত্যেকের কিছু দায়িত্ব থাকে। সমাজের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বার্থে সবাইকে তা মানতে হয়। নিজে অন্যায় করব না। অন্যায় দেখব মুখ বুজে সহ্য করব না। দ্বীনের অবমাননা হলে অবশ্যই এগিয়ে যাব। নিজের সাধ্যমতো অপরের সাহায্য-সহযোগিতা করব। মহানবী সা: বলেন, ‘আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সহায়তা করেন যতক্ষণ বান্দা অন্য কোনো ভাইয়ের সহায়তা করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান ভাইয়ের বিপদ দূরীকরণের চেষ্টা করে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের কঠিন বিপদের দিনে তার বিপদ দূর করে দেবেন।’
যাবতীয় মন্দকে পরিহার : জীবনে সফলতা লাভের সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো সমস্ত অন্যায় থেকে নিজেকে ফিরিয়ে রাখা। আর বেশি বেশি নেক কাজ করা। সব প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহকে সাহায্যকারী হিসেবে পায় তার জন্য অন্য কোনো সাহায্যকারীর প্রয়োজন পড়ে না। যাবতীয় মন্দকে ধিক্কার জানিয়ে সত্যের নূরে অন্তরকে আলোকিত করার মানসে নেক কাজ করতে হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সৎ কর্মগুলো মন্দ কর্মগুলোকে বিদূরিত করে’ (সূরা হুদ, আয়াত-১১৪)।
একজন মুমিন মুসলমানের জন্য পরকালের সফলতাই প্রকৃত সফলতা। এ কারণে কখনো কখনো মুমিন মুসলমান দুনিয়ায় অর্থসম্পদ না পেলেও বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আখিরাতের বিশাল সাফল্য তো রয়েছে।
সাহিত্যিক ও গবেষক

 


আরো সংবাদ



premium cement