১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আল্লাহর বিধান

-

সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রেও রয়েছে আল্লাহর রহস্য। তিনিই সম্পদ বণ্টনের মাধ্যমে শ্রেণিবৈষম্য তৈরি করেছেন। আর একটি রাষ্ট্র গড়ে ওঠে সম্পদ বণ্টনের ওপর ভিত্তি করে। কিভাবে একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে অর্থব্যবস্থা। পুঁজিবাদ, সাম্যবাদ, ইসলামী ও মিশ্র অর্থব্যবস্থা অর্থের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত।
‘আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম গত রোববার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র আটজনের হাতে যে পরিমাণ সম্পদ জমে উঠেছে, তা পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক (৩৬০ কোটির বেশি) মানুষের মোট সম্পদের সমান। বলা হচ্ছে, এই আট ব্যক্তির মোট সম্পদের পরিমাণ ৪২ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমান’ (প্রথম আলো, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭)।
এসব ধনীর একেকজন একেকটি রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে পারে। কিন্তু করে না। এতে সাধারণ জনগণের কষ্ট লাগাটাই স্বাভাবিক। নিজের যোগ্যতাবলে মানুষ নিজে যা অর্জন করে তা নিজের। এটি আমরা জানি। তবুও আমরা অসহায় দারিদ্র্যের মাঝে নিজের কিছু সম্পদ বিলিয়ে দিই, আত্মসুখের জন্য। আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্য।
কুরআনের অমর বাণীÑ আল্লাহ তাঁর সব দাসকে রুজিতে প্রাচুর্য দিলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত’ (১) কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণই দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর দাসদেরকে সম্যক জানেন এবং দেখেন’ (সূরা আশ-শূরা; আয়াত-২৭)।
ওই আয়াত দ্বারা এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যদি আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সব মানুষকে তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থসম্পদ প্রদান করতেন তাহলে সবাই তা দিয়ে বিলাসিতায় মত্ত হতো। অন্যায়ভাবে ব্যবহার করত। অর্থের কারণে আমরা অন্যের বশ্যতা স্বীকার করে থাকি। গরিবরা সাধারণত ধনীদের অনুগত হয় কেবল অর্থ বৈষম্য থাকার কারণে। এমনটাই আল্লাহর অভিপ্রায়।
‘বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ৭৩ কোটি ৪০ লাখ বা ১০ শতাংশ মানুষ আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যাদের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯০ ডলারের কম’ (প্রথম আলো, ২১ জুলাই ২০২০)।
এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, পৃথিবীর সুষ্ঠুতা বজায় রাখতেই আল্লাহ তায়ালা মানুষের চাহিদার তুলনায় সম্পদের পরিমাণ কমিয়ে দেন। আল্লাহ তো মানুষ অন্তর দেখেন। কাউকে সম্পদ দিয়ে কাউকে দরিদ্রতা দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। কে কতটুকু আল্লাহর হুকুম পালন করেÑ এটি জানার জন্য।
এতদসত্ত্বেও কেন আজকের পৃথিবীতে এত অরাজকতা; এর কারণ হলোÑ মানুষ মানুষের প্রতি মানবতার অভাব। আর অর্থের প্রাচুর্যতা মানুষের ভেতর অহঙ্কার, হিংসা-বিদ্বেষ, কৃপণতা ও বিলাসিতা পয়দা করে। যা একজন মানুষকে হিংস্র করে তোলে। আর হিংস্রতা মানবিকতা, নৈতিকতা, পরস্পরের সহানুভূতিকে ভুলিয়ে দেয়।
অর্থের এই ঠাট ও অহঙ্কারকে অনবদমিত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা জাকাত-ফেতরার বিধান নাজিল করেন। মানুষের জীবনকে পরীক্ষার কেন্দ্র বানিয়ে দেন। কে ভালো করে আর কে মন্দÑ এটা দেখার জন্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement