২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মহানবী সা:-এর বহু বিয়ের কারণ

-

নবী-রাসূলগণ আল্লাহ তায়ালার মনোনীত মহামানব। তাঁদের কাছে অহি আসে এবং আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁরা সবাই মহাজ্ঞান ও মহাপ্রজ্ঞার অধিকারী। তাঁদের শিক্ষক মহান আল্লাহ তায়ালা। নবী-রাসূলগণ আল্লাহর কিতাব ও মুজিযাপ্রাপ্ত হন। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তাঁরা কোনো কাজ করেন না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনÑ আর তিনি (রাসূল) প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না, বরং যা কিছু বলেন তা সবই (আল্লাহর কাছ থেকে) প্রত্যাদেশ হয়। (সূরা-আন নজম : ৩-৪) মহানবী সা:-এর বহু বিয়ের অনেক কারণ রয়েছে। তা হলোÑ
১. দ্বীন প্রচারের সুবিধা : মহানবী সা: ছিলেন একাধারে বিশ্বনবী ও রাষ্ট্রনায়ক। চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ইসলাম ধর্মকে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তিনি আদিষ্ট হয়েছেন। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতিকে শামাল দিতে অনেক জটিল সমস্যার সম্মুখীন হন। ফলে মহানবী সা:-এর পক্ষে দ্বীন প্রচার করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাঁর বহু বিয়ে ধর্মীয় বিধান প্রচার ও প্রসারে বিরাট ভূমিকা রাখে। বহু বিয়ের ফলে বিভিন্ন গোত্রের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যা রাজনৈতিক জটিলতাকে দূর করে দ্বীন প্রাচারের সুযোগ করে।
২. আশ্রয়হীনাদের আশ্রয় দান : নবুয়তের দশম বছরে প্রথমা স্ত্রী হজরত খাদিজা রা:Ñএর ওফাতের পর মহানবী সা: অন্য নারীকে বিয়ে করার চিন্তা করেন। তিনি হজরত আয়েশা রা: ছাড়া অন্য দশজন বিধবাকে বিয়ে করেছিলেন। একজন নারী বিধবা হওয়ার পর আশ্রয়হীনা ও অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করে। মহানবী সা: আশ্রয়দাতা হিসেবে তাদের বিয়ে করেন। হজরত সাওদা রা:-এর স্বামী হাবশায় হিজরত করে সেখানে ইন্তেকাল করেন। অতঃপর তিনি আশ্রয়হীনা হয়ে পড়েন। মহানবী সা: তাঁর খালা খাওলা বিনতে হাকিমের মধ্যস্থতায় দশম হিজরীতে সাওদা রা:-কে বিয়ে করে আশ্রয় দান করেন। তিনি একান্ত জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য বহু বিয়ে করেননি বরং এভাবে তিনি আশ্রয়হীনাকে আশ্রয় দিয়েছেন।
৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন : হজরত আয়েশা রা: ও হজরত হাফসা রা:-কে রাসূল সা: বিয়ে করেন আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। মূলত আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় এ বিয়ে সংঘটিত হয়েছিল। হজরত হাফসা রা:-এর স্বামী ইন্তেকাল করার পর হজরত ওমর রা: তাঁর কন্যাকে বিয়ে করার জন্য প্রথমে হজরত উসমান রা:-কে তারপর হজরত আবু বকর রা:-কে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা উভয়ে অস্বীকৃতি জানালে মহানবী সা: হাফসাকে বিয়ে করেন। প্রধান দুই সহযোগীর কন্যাকে বিয়ে করে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করেন।
৪. বন্ধুত্ব স্থাপন : হজরত জুয়াইরিয়া রা: ছিলেন গোত্রপতি হারিসের কন্যা। বনু মুস্তালিক যুদ্ধে জুয়াইরিয়া বন্দী হলে মহানবী সা: তাকে এ উদ্দেশ্যে বিয়ে করেন যাতে তার বংশের সাথে বন্ধত্ব হয়। তা ছাড়া জুয়াইরিয়াকে বিয়ে করার মতো যোগ্য কেউ ছিল না। ফলে রাসূল সা: স্বয়ং বিয়ে করে যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যার মর্যাদা দান করেন।
৫. জাহেলী রীতি ভঙ্গ ও ইসলামী বিধান কার্যকর করা : জাহেলী যুগে আরবদের রীতি অনুযায়ী পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করা ছিল গুরুতর অপরাধ। তারা পালক পুত্রকে ঔরষজাত পুত্রের মতো মনে করত, পালক পুত্রও ঔরষজাত পুত্রের মতো মীরাস পাবে এবং তার স্ত্রীকে বিয়ে করা হারাম। মহানবী সা: যখন যয়নব বিনতে জাহাশকে বিয়ে করেন, তা ছিল তাঁর পঞ্চম বিয়ে। এতে মুনাফিকেরা দু’টি মোক্ষম বিষয় খুঁজে পায়। একটি হলো কুরআন মজিদে একজন মুসলমানের জন্য চারজনের বেশি স্ত্রী রাখার অনুমতি নেই। রাসূলুল্লাহ সা:-এর এ বিয়ে কিভাবে বৈধ হলো? দ্বিতীয়টি হলো হজরত যয়নব রা: রাসূলুল্লাহ সা:-এর পালক পুত্র হজরত যায়েদ রা:-এর স্ত্রী, তাকে কিভাবে বিয়ে করলেন? তাদের উত্তর হলো- নবীর জন্য যে বিধান তা উম্মতের জন্য কার্যকরী নয়। অনেক বিধানে রাসূলুল্লাহ সা: ও উম্মতের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেমন রাসূল সা: একাধারে না খেয়ে রোজা রেখেছেন তা উম্মতের জন্য ফরজ নয়। তাহাজ্জুদের নামাজ রাসূলুল্লাহ সা:-এর ওপর ফরজ ছিল কিন্তু উম্মতের ওপর তা আবশ্যক নয়। রাসূলুল্লাহ সা:-কে এগারো বিবাহের অনুমতি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই দিয়েছেন। তিনি পালক পুত্র যায়েদ ইবনে হারেসার স্ত্রীকে বিয়ে করে জাহেলি যুগের রীতি ও কুসংস্কার ভঙ্গ করেছেন। একই সাথে ইসলামের বিধান কার্যকর করে দেখিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন- মুহাম্মদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। (সূরা আল আহজাব-৪০) এ আয়াত নাজিলের পর দু’টি বিষয়ের অবসান হয়। একটি হলো হজরত যায়েদ রা:-এর রাসূল সা:-এর পুত্র নন। যা লোকেরা মনে করত, দ্বিতীয়টি হলো- পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করা বৈধ।
৬. মর্যাদা দান : খায়বারের যুদ্ধ শেষে হজরত সাফিয়া রা: যুদ্ধ লব্ধ সম্পদের পরিণত হন। হজরত সাফিয়া ছিলেন নেতার মেয়ে ও উচ্চবংশীয়। মহানবী সা: তাঁকে স্বাধীনতা প্রদান করেন এবং স্বগোত্রের সাথে বসবাসের অধিকার দান করেন। কিন্তু হজরত সাফিয়া রা: মহানবী সা:-এর সাথে থাকার ইচ্ছা পোষণ করলে তিনি সহধর্মিণীর মর্যাদা দান করে ধন্য করেন।
বহু বিয়ের দৃষ্টান্ত : অনেক নবী-রাসূল বহু বিয়ে করেছেন। যেমন হজরত ইবরাহিম আ:-এর স্ত্রী ছিলেন তিনজন। হজরত ইয়াকুব আ:-এর স্ত্রী ছিলেন চারজন। হজরত মূসা আ:-এর স্ত্রী ছিলেন চারজন। হজরত দাউদ আ:-এর স্ত্রী ছিলেন উনিশ জন, কারো মতে একশত জন। হজরত সুলায়মান আ:-এর স্ত্রী ছিলেন সাতশত জন। কারো মতে এক হাজার জন, আর দাসী ছিল তিনশত জন। ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্মেও বহু বিয়ের প্রচলন রয়েছে। চীনের জনৈক শাসকের স্ত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ত্রিশ হাজার জন। চীনের লেসকী আইনে একশত ত্রিশজন স্ত্রী রাখার অনুমতি ছিল। ত্রিপুরার মহারাজ বীর চন্দ্র মানিক্যের স্ত্রী ছাড়াও বহু উপপতœী ছিল (প্রথম আলো- উপন্যাস সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)। ‘কেস স্টাডি’তে উল্লেখ রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের ১৬,১০৮ জন স্ত্রী ছিল। অতএব নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীদের এই দুঃখ ক্ষোভে মরা উচিত নয় যে, হজরত মুহাম্মদ সা: কেন এগারো বিয়ে করেছেন?
-প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।


আরো সংবাদ



premium cement