১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুচকি হাসির উপকারিতা

-

‘হাসি’ মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কেউ আপনার কাছে এসে মুখ কালো করে কোনো কথা জিজ্ঞেস করলে আপনার যেমন লাগবে, ঠিক সেই কথাটিই হাসিমুখে এসে অন্য কেউ বললে আপনার কাছে ভীষণ ভালো লাগবে।
হাসির শক্তিটাই এমন। হাসি মূলত শুদ্ধতার প্রতীক, হাসিমুখ ভুলিয়ে দেয় সব যাতনা, কষ্ট, ক্লেদ। বন্ধুত্ব, আন্তরিকতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় হাসিমুখের বাক্যালাপ।
হাসির রয়েছে বিভিন্ন প্রকার। তার মধ্যে অন্যতম হাসি হলো মুচকি হাসি। যাকে আরবিতে বলা হয় ‘তাবাসসুম’।
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা: সর্বদা হাসিমুখে থাকতেন। তিনি কখনো কারো সাথে গোমড়া মুখে কথা বলতেন না। সে যেই হোক না কেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছেÑ * হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হারিস রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, ‘আমি এমন কাউকেই দেখিনি যিনি রাসূল সা:-এর থেকে অধিক হাসিমুখে থাকতেন।’ (তিরমিজি)
* হজরত জরির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, ‘আমার ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহর রাসূল সা: তার সাথে সাক্ষাতের জন্য আমার অনুমতিকে কখনোই প্রত্যাখ্যান করেননি এবং কখনোই হাসি ছাড়া আমার সাথে দেখা করেননি।’ (মুসলিম)
* হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমার সম্পদ দিয়ে কখনোই তুমি লোকদের সন্তুষ্ট করতে পারবে না বরং তোমার প্রফুল্ল চেহারা ও উত্তম চরিত্রের মাধ্যমেই তুমি তাদের সন্তুষ্ট করতে পারবে।’ (আল-হাকিম)
* হজরত আবুজর রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘কোনো উত্তম কাজকেই অবহেলা করো না (যত ছোটই হোক না কেন) যদি তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎও হয়।’ (মুসলিম)
একজন প্রকৃত মুসলমানের বৈশিষ্ট্য হলোÑ এক ভাই আরেক ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হলে হাসিমুখে কথা বলবে। ইসলামের সৌন্দর্যই এমন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলোÑ রাসূলুল্লাহ সা: মুচকি হাসিকে সদকা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। সদকা অর্থÑ দান, যার বিনিময়ে আল্লাহ আখিরাতে পুরস্কৃত করবেন।
এক হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সদকা। আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলোÑ অন্য ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।’ (তিরমিজি, হাদিস নং-১৯৭০)
অন্য হাদিসে প্রিয়নবী সা: বলেন, ‘তোমার ভাইয়ের মুখে (সাক্ষাতে) মুচকি হাসি নিয়ে আসাও একটি সদকা।’ (তিরমিজি, হাদিস নং-১৯৫৬)
কারো সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করলে সে খুশি হয়। মুখ কালো করে রাখলে, মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তাই সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বললে অপর ভাই আনন্দ লাভ করবে।
হাদিস শরিফে রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের কোনো মুসলিম ভাইকে খুশি করার জন্য এমনভাবে সাক্ষাৎ করে, যেমনটি সে নিজের জন্য পছন্দ করে। কিয়ামতের দিন (বিনিময়ে) আল্লাহ তায়ালা তাকে খুশি করবেন।’ (তাবারানি, হাদিস নং-১১৭৮; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, হাদিস নং-১৩৭২১)
মুমিনের ভূষণ হোক, মুচকি হেসে কথা বলা। তবে খেয়াল রাখতে হবে, অট্টহাসি হাসা যাবে না। যে হাসিতে জোরে শব্দ হবে, অন্য কেউ বিরক্ত অনুভব করে, এমন হাসি থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। সব কিছুর মাঝে একটা ভারসাম্যতা রয়েছে, ঠিক তেমন হাসির মাঝেও, একদম গোমড়া মুখ যেমন ভালো নয়, তেমনি অতিরিক্ত হাসিও ভালো নয়। * আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘মাত্রাতিরিক্ত হেসো না, কারণ অতি হাসি আত্মাকে মৃত বানিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস-২৩০৫) * মহানবী সা: বলেছেন, ‘সাবধান! অতিরিক্ত হাসি থেকে বেঁচে থাকো। কেননা অধিক হাসি আত্মা নষ্টের কারণ।’ (সহিহুল জামে, হাদিস-৭৮৩৩)
হাসির রয়েছে শারীরিক উপকারিতাও। তার মধ্যে হাসির উল্লেখযোগ্য শারীরিক উপকারিতা হলোÑ * শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, * মানসিক চাপ কমায়, * ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। * রক্ত চলাচল ভালো থাকে। * হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। * মন ভালো রাখে। * হতাশা দূর হয়।
পরিশেষে বলা যায়, এই এক মুচকি হাসি দিয়ে আমরা কত দিকে লাভবান হচ্ছি, সদকার সাওয়াব পাচ্ছি, সুন্নাত পালন হচ্ছে, হাসিমুখে কথা বলার জন্য মুমিন খুশি হয়, আর এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। তার বিনিময়ে তিনি বান্দাকে কিয়ামতের দিন খুশি করবেন। সুবাহানাল্লাহ।
এ দিকে শারীরিক উপকারিতা তো রয়েছেই।
আল্লাহু সুবাহানাহু তায়ালা সর্বদা আমাদেরকে রাসূলের সুন্নাত ‘মুচকি হাসি’ ধারণ করার তৌফিক দান করুক। আমরা যাতে কারো সাথে মুখ গোমড়া করে কথা না বলি সেই দোয়া প্রত্যাশা করি। জাজাকাল্লাহ খায়রান।
লেখক : শিক্ষার্থী, শরিফবাগ কামিল মাদরাসা, হাদিস বিভাগ, কামিল দ্বিতীয় বর্ষ, ধামরাই


আরো সংবাদ



premium cement