রমজান থেকে ঈদ পর্যন্ত ঘটে অভাবনীয় কাণ্ড!
- শাহ আলম বাদশা
- ০৯ মে ২০২১, ০৪:০৯
সোনাকে কর্মকার যেমন আগুনে পুড়িয়ে কষ্টিপাথরে নিখাদ করে, রমজান মাসের সিয়ামও একজন মুমিনকে খাঁটি ও নিষ্পাপ মানুষ বানিয়ে দেয়। আর রোজা হচ্ছে ফারসি শব্দ, যার আসল উচ্চারণ হচ্ছেÑ রোজআ-মানে রোজ-রোজ আগমনকারী। রোজ-রোজ আসে বলেই এর নাম রোজা, যদিও তা সাওমের বিকল্প হতে পারে না।
যাই হোক, এবার এমন একটি হাদিস তুলে ধরব, যাতে রোজার শুরু থেকে ঈদ পর্যন্ত মুমিন, ফেরেশতা, আল্লাহ এবং বেহেশত-দোজখের কার্যক্রম সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে।
‘হজরত আবদুুল্লøাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছেন, ‘রমজানের আগমন উপলক্ষে জান্নাতকে বছরের প্রথম থেকেই সজ্জিত করা হয়। রমজানের প্রথম রাতে আরশের নিচ থেকে এক ধরনের বায়ু প্রবাহিত হয়। তাকে ‘মুছিরা’ বলা হয়। ফলে জান্নাতের গাছের পাতা এবং দরজার পাল্লাগুলো মর্মর করতে থাকে আর এমন আওয়াজ করতে থাকে, যার চেয়ে সুন্দর আওয়াজ মানুষ কখনো শুনেনি।
ফলে ডাগরনয়না হুররা বেরিয়ে জান্নাতের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে, আল্লøার কাছে কি কোনো বিয়ের প্রস্তাবদানকারী আছে, যাদের সাথে আল্লøাহপাক আমাদের বিয়ে দেবেন? এরপর তারা বলে, হে রিজওয়ান (জান্নাতের প্রধান প্রহরী ফেরেশতা) আজ কিসের রাত? তখন রিজওয়ান তাদের বলেন, ওহে সুন্দরী কল্যাণময়ী রমণীরা, এটা হলো রমজান মাসের প্রথম রাত।
আল্লাহ বলেন, হে রিজওয়ান! হজরত মুহাম্মদ সা:-এর রোজাদারদের জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দাও। রিজওয়ান! মুহাম্মদের উম্মতের রোজাদারদের জন্য জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দাও। হে জিবরাইল! পৃথিবীতে নেমে যাও এবং অবাধ্য শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করো এবং তাদের বেড়ি পরিয়ে দাও। তারপর তাদের সমুদ্রের গভীরে ফেলে দাও, যেন তারা আমার হাবিব মুহাম্মদের উম্মতের পাক রোজাকে নষ্ট করতে না পারে।
আল্লাহ রমজান মাসের প্রত্যেক রাতে তিনবার বলেন, ‘ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছো কি? আমি তার তওবাহ কবুল করব। ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছো কি? আমি তাকে মাফ করে দেবো। তারপর ঘোষণা করেন, ন্যায়পরায়ণতার সাথে ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে কে চির ঐশ্বর্যবান আল্লাহকে ঋণ দেবে?’
রমজান মাসের প্রত্যেক দিন আল্লাহপাক ইফতারের সময় এমনই ১০ লাখ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যাদের ওপর জাহান্নামের শাস্তি ফরজ হয়েছিল। আর জুমার দিন এবং জুমার রাতে প্রত্যেক ঘণ্টায় এমন ১০ লাখ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যাদের ওপর জাহান্নামের শাস্তি ফরজ হয়েছিল। আর রমজানের শেষ দিনে আল্লাহপাক শুরু থেকে শেষ ১০ দিন পর্যন্ত যত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তত লোককে মুক্তি দেন। লাইলাতুল কদরে আল্লাহপাক জিবরাইল আ:-কে আদেশ দেন। তিনি একদল ফেরেশতা নিয়ে পৃথিবীতে আসেন। তার সাথে একটা সবুজ পতাকা থাকে। তিনি তা কাবার ওপর স্থাপন করেন। তার ৬০০ পাখা আছে। তন্মধ্যে শুধু দু’টি পাখা তিনি লাইলাতুল কদরেই প্রসারিত করেন। ফলে তা পূর্ব-পশ্চিম ছাড়িয়ে যায়। তারপর জিবরাইল আ: ফেরেশতাদের এই উম্মতের মধ্যে পাঠিয়ে দেন। তারা প্রত্যেক দাঁড়ানো, বসা, নামাজে ও জিকিররত মানুষকে সালাম দেন, তাদের সাথে মোসাফাহা করেন এবং তাদের দোয়ায় আমিন বলেন।
এভাবে ভোর হয়ে যায়। সকালে জিবরাইল আ: ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, হে ফেরেশতার দল! চলো চলো! তখন ফেরেশতারা ডেকে বলেন, আল্লাহ মুহাম্মদের উম্মতের প্রয়োজনের ব্যাপারে কী ফায়সালা করেছেন? জিবরাইল আ: বলেন, আল্লাহ পাক তাদের দেখেছেন এবং চারজন ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করেন, এই চারজন কারা? জিবরাইল আ: বলেনÑ ১. মদ্যপানকারী; ২. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান; ৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ও ৪. যে তিন দিনের বেশি সময় নিজ ভাইয়ের সাথে কথা বন্ধ রাখে।
ঈদুল ফিতরের রাতকে লাইলাতুল ‘জা-জাহ’ (পুরস্কারের রাত বলা হয়)। তারপর ফিতরের সকালে প্রত্যেক এলাকায় ফেরেশতাদের পাঠানো হয়। তারা পৃথিবীতে এসে উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, জিন ও ইনসান ছাড়া গোটা সৃষ্টি তাদের আওয়াজ শুনতে পায়। তারা বলেন, হে মুহাম্মদ সা:-এর উম্মতরা! তোমরা দয়াময় প্রতিপালকের দিকে এগিয়ে এসো। তিনি প্রচুর দান করেন এবং অসীম গুনাহ মাফ করেন।
তারা যখন ঈদগাহে পৌঁছে, আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, ‘হে ফেরেশতারা! মজুরদের কী বিনিময় দেয়া হয়, যখন তারা তাদের কাজ শেষ করে? ফেরেশতারা বলেন, হে আমার প্রতিপালক! তার বিনিময় হলো তাকে পরিপূর্ণ পারিশ্রমিক দেয়া। তখন আল্লাহ বলেন, হে ফেরেশতারা আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, রমজান মাসে তারা যে রোজা রেখেছে এবং বিনিদ্র থেকে নামাজ আদায় করেছে, এর বিনিময়ে আমি তাদের আমার সন্তুষ্টি ও ক্ষমা প্রদান করলাম। তারপর আল্লাহ পাক বলেন, হে আমার বান্দারা! তোমরা ক্ষমা চাও। আমার ইজ্জতের কসম! আমার বড়ত্বের কসম! আজ তোমরা তোমাদের দুনিয়া বা আখিরাত সম্পর্কে আমার কাছে যা চাইবে, আমি তাই তোমাদের কাছে দান করব।’
দীর্ঘ হাদিস শেষে এটাই বলব যে, পবিত্র রমজান মাসের শবেকদরের রাতেই আল্লাহ তার পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ইসলামের মূল গ্রন্থ আল কুরআনকে নাজিল করায় এ মাসসহ কদরের রাতের মর্যাদা অসীম। আল্লাহ প্রত্যেক নবী-রাসূলের ওপর যে হিদায়াত দিতেন, তা ছিল সেই জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষাতেই, যাতে তারা বুঝেশোনে ইবাদত করে পরকালীন মুক্তি অর্জন করে। আমাদের নবীকেও তার মাতৃভাষাতেই কুরআন নাজিল করেছেন আল্লাহ। কিন্তু তা না বুঝে মন্ত্র কিংবা খতম তারাবিতে রকেটের মতো পড়ার জন্য নয়। বরং বুঝে বুঝে জ্ঞান বা ইলম অর্জনের মাধ্যমে ঈমান বা তাওহিদকে শক্তিশালী করার জন্যই এসেছে কুরআন। তাই তাওহিদ বা কালিমার জ্ঞানার্জনই হচ্ছে ইসলামের মূল কথা। কেননা, যেকোনো প্রকারের শিরকযুক্ত ঈমানদার আমলের পাহাড় নিয়ে গেলেও পরকালে সরাসরি কাফেরদের সাথেই জাহান্নামে যাবেন বলে আল্লাহ রাসূল ঘোষণা করেছেন।
কেননা, আল্লাহ রমজানে সর্বপ্রথম নাজিলকৃত আয়াত ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক’ পড়ো তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন’ না বলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বা রোজা ইত্যাদিই কি আগে নাজিল করতে পারতেন! কিন্তু তা না করে, আগে ইলম বা জ্ঞানার্জনকেই তিনি ইসলামের প্রথম ফরজ হিসেবে নাজিল করলেন এবং তা আবার রমজানেই। এর অর্থই হচ্ছে, আগে ইবাদত সম্পর্কে জ্ঞানার্জন, পরে সহিশুদ্ধ ইবাদত পালনে অভ্যস্ত করাটাই হচ্ছে আল্লাহর মূল উদ্দেশ্য।
তাই আসুন, রমজানে খাদ্যোৎসবের বদলে কিংবা পবিত্র কুরআনকে লালসালুতে বন্দী না করে অর্থসহ মাতৃভাষায় বুঝেশোনে পড়ি যে, আল্লাহ আমাদের কী করতে বলেছেন? কারণ ইসলাম বা কুরআনচর্চার ব্যাপারটি মধ্যস্বত্ব¡ভোগী একটি গোষ্ঠীর কাজ নয়, বরং ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি মুসলিমেরই কাজ। তাই আলেমদের ঘাড়ে ইসলাম ও কুরআনকে ছেড়ে দিয়ে কারুর বাঁচার কোনোই উপায় নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা