২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এ সময়ে জাকাতের গুরুত্ব

-

মহামারী রূপ ধারণ করেছে করোনা। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে গাণিতিক হারে। লাশের মিছিলের সারি দিন দিন বেড়েই চলছে। নিরাপত্তার জন্য দেশে দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলে মানুষ ঘরবন্দী হয়ে আছে। যেতে পারছে না কর্মস্থলে। যার ফলে সাধারণ দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের সংসারে নেমে এসেছে অভাব-অনটন। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসতে হবে সমাজের বিত্তশালীদের। তাই দরিদ্রের মুখে হাসি ফোটাতে জাকাতের প্রয়োজন অনিবার্য।
ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী নিসাব পরিমাণ সম্পদ যদি কারোর কাছে এক বছর গচ্ছিত থাকে, তাহলে ওই মালিককে জাকাত দিতে হবে। জাকাত একটি আরবি শব্দ। আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়ার জন্য ধনী ব্যক্তিদের দু’টি মাধ্যম রয়েছে তন্মধ্যে প্রথমত- আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা, দ্বিতীয়ত- বান্দার সাথে সুসম্পর্ক গড়া। আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক তৈরি হয় ইবাদতের মাধ্যমে। অন্যদিকে বান্দার সাথে বান্দার সম্পর্ক তৈরির মাধ্যম হলো ভ্রাতৃত্ব বন্ধন, জাকাত প্রদান ও দান সদকার।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কারিমের মধ্যে ৩২ জায়গায় জাকাতের কথা বলেছেন। তন্মধ্যে ২৮ জায়গায় নামাজ এবং জাকাতের কথা একত্রে বলেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত প্রদান করো’। (সূরা মুজ্জাম্মিল : ২০)। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বান্দার কাছে কর্জ চেয়েছেন। ‘তোমরা আল্লাহকে কর্জে হাসানা দাও’। (মুজ্জাম্মিল : ২০) আল্লাহ তো ধনী, তাহলে তিনি কর্জ নিয়ে কী করবেন? প্রকৃত অর্থে তিনি কর্জ চাচ্ছেন গরিব, মিসকিন, অসহায় ইয়াতিমদের জন্য। এই কর্র্জ দিলে কী হবে? আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা এর বিনিময় আমার (আল্লাহর) কাছে পাবে’। (মুজ্জাম্মিল : ২০)
জাকাত-সদকা মূলত আল্লাহকে দেয়া হয়। আল্লাহই তা গ্রহণ করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং সদকা গ্রহণ করেন।’ (সূরা তাওবা : ১০৪)
গরিব মিসকিনরা কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে তা কবজা করেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত আছে- জাকাত গরিবের হাতে পৌঁছার আগেই তা দয়াময় আল্লাহর হাতে পৌঁছে যায়। সুতরাং জাকাত যে ব্যক্তি গ্রহণ করবে তার থেকে বেশি ভাগ্যবান যে প্রদান করে এবং সে নিজেকেও যেন মুখাপেক্ষী মনে করে।
জাকাতের উদ্দেশ্য : ইসলামে জাকাতব্যবস্থা প্রবর্তনের মূল হিকমত আর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যাতে সম্পদ তোমাদের গুটিকয়েক লোকের হাতে পুঞ্জীভূত না হয়ে পড়ে।’ (সূরা হাশর : ৭)
ইসলাম চায় সম্পদ সর্বত্র সম্প্রসারিত হোক। সমাজে গরিব-অসহায় মানুষ যেন দারিদ্র্যের কশাঘাতে পড়ে সুদখোরদের কাছে অভাব বিমোচনের জন্য যেতে না হয়। এ ছাড়াও ভিক্ষাবৃত্তিতে নিজেকে সমর্পণ না করে। অভাবের তাড়নায় যাতে মানুষ ঈমানহারা না হয়ে যায়। কেননা, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘দারিদ্র্য মানুষকে কুফরির দিকে নিয়ে যায়।’ (বায়হাকি, হাদিস-৬৬১২)
জাকাতের ফজিলত : বান্দার ধারণা জাকাত দিলে সম্পদ হ্রাস পেতে পারে। তাই এই ভয়ে জাকাত দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখে। অথচ জাকাতের অর্থই হলো বৃদ্ধি পাওয়া বা সম্পদ পবিত্র করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(হে আমার হাবিব) আপনি তাদের মাল থেকে সদকা (জাকাত) উসুল করুন, যাতে আপনি এর মাধ্যমে তাদেরকে পবিত্র ও পরিশোধিত করতে পারেন। আপনি তাদের জন্য দোয়া করুন। নিঃসন্দেহ আপনার দোয়া তাদের জন্য সান্ত¡না স্বরূপ। বস্তুত আল্লাহ সব কিছু শোনেন এবং জানেন।’ (সূরা তাওবা, আয়াত-১০৩)। জাকাতের খাতসমূহ : ১. ফকির; ২. মিসকিন; ৩. আমিলিন বা জাকাত সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি; ৪. যাদের চিত্তাকর্ষক প্রয়োজন; ৫. দাস মুক্ত করা; ৬. ঋণগ্রস্তদের জন্য; ৭. আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও ৮. মুসাফির। ফকির মানে যার কাছে দৈনন্দিনের খরচ বহন করার মতো কোনো অর্থসম্পদ নেই। বর্তমানে ফকিরদের মধ্যে আবার বিভিন্ন ভাগ দেখা যায়। একশ্রেণীর ফকির হলো পেশাদার ফকির। এদের বাড়ির অবস্থা ভালো তবে; সে এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। হাদিসে এদের সম্পর্কে লানত ও অভিশাপ করা হয়েছে। কিয়ামতের ময়দানে এরা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। আর মালদার ফকির যার নিজের ওপর জাকাত আসে তাকে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না।
যেসব অসহায় মানুষের প্রশংসায় আল্লাহ আয়াত নাজিল করেছেন তারা জাকাত পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘খয়রাত এ সমস্ত ফকির গরিব লোকদের জন্য যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ হয়ে গেছে। জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র ঘোরাফেরা করতে সক্ষম নয়। তারা কিছু চায় না দেখে অবিবেচকরা মনে করে। এদের দিকে তাকালেই এদের ভেতরের অবস্থা বুঝতে পারবা। এরা কখনো ভিক্ষা চায় না। এদের সাহায্যে তোমরা যে অর্থবিত্ত ব্যয় করবে তা আল্লাহর কাছে গোপন থাকবে না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৩)
জাকাত না দেয়ার কুফল : জাকাত আদায় না করা ব্যক্তি ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে অপরাধী এবং আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন। কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনে তার গচ্ছিত সম্পদ উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাটে ও পার্শ্বদেশে এবং পৃষ্টদেশকে দগ্ধ করা হবে। সেদিন তাদেরকে বলা হবে- এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং এখন আস্বাদন গ্রহণ করো যা তোমরা জমা করে রেখেছিলে।’ (সূরা তাওবা, আয়াত-৩৪-৩৫)
আল্লাহ যাদের ওপর জাকাত ফরজ করেছে তাদের সবাইকে জাকাত আদায়ের তৌফিক দান করুক। আমিন।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মেখল, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম


আরো সংবাদ



premium cement