২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্স রমজান

-

মুমিনের হৃদয়ে তাকওয়ার বীজ বপন করতে স্র্রষ্টা প্রদত্ত মাসব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কোর্সের নাম রমজান। গোটা মাসটিই ভরপুর তাকওয়ার আয়োজনে। অন্তরে ঈমানের সজীবতা আনয়নে ও জীবনজুড়ে আল্লাহ প্রেমের সক্রিয়তা সৃষ্টিতে খোদায়ি এক পয়গামের নাম সিয়াম সাধনা। দিনে সিয়াম আর রাতে কিয়াম এবং আন্তঃসময় ধরে আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকেন সিয়াম সাধক। এভাবেই ভেতরে-বাইরে হয়ে ওঠেন তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত একজন দরদি মানব। সিয়াম সাধনায় মুমিন হয়ে ওঠেন প্রকৃত সাধক। কুরআনে বর্ণিত সিয়াম এমনটাই দাবি করে সায়েম বা রোজাদারের কাছে। কুরআনের ভাষায়, ‘হে ঈমানের পথের যাত্রীরা! তোমাদের পূর্ববর্তী যুগের ঈমানদারদের মতো করে রোজা পালন তোমাদের ওপর আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে যেন তোমরা হৃদয়ে খোদাভীতি ধারণ করে চলতে পারো।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১২৩) তাকওয়া মানে হলোÑ সব প্রকার অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তাকওয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘দিনভর রোজা পালন অথবা রাত জেগে ইবাদত করা কিংবা একত্রে এ দু’টি পালনের নাম তাকওয়া নয়। বরং তাকওয়া হলো, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা ছেড়ে দেয়া এবং যা কিছু আদেশ দিয়েছেন তা পালন করা।’ (আজ-জুহদুল কাবির, পৃষ্ঠা-৪৮০) আমাদের বাস্তব জীবনে এই তাকওয়ার চর্চা কিভাবে করতে হবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা কুরআন ও হাদিসে বারবার এসেছে। তাকওয়া অর্জনের মাস রমজানেই নাজিল হয়েছে তাকওয়ার পাথেয় আল কুরআন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রমজান মাসে মানবজাতির পথনির্দেশিকা হিসেবে কুরআন নাজিল করা হয়েছে যাতে রয়েছে সুস্পষ্ট পথনির্দেশনা এবং ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণকারী।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫) তাই রমজানে যেসব রোজাদার কুরআনের সাথে নিজেদের সংযুক্ত করবে তারাই নিজেদের মুত্তাকি বান্দা হিসেবে গঠন করতে পারবে। কুরআনের রঙে, কুরআনের ঢঙে জীবন যাপনে যারা অভ্যস্থ হয়ে উঠবে তারাই রমজানের সফলতা অর্জন করতে পারবে।
রোজাদারের জন্য আরো কিছু করণীয় রয়েছে যেসবের মাধ্যমে রোজাদার তাকওয়ার পথে অগ্রসর হতে থাকে। হাদিসে এসেছে, ‘রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যাতে সিয়ামরত অবস্থায় অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদে না জড়ায়। কেউ যদি তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে ঝগড়ায় জড়াতে আসে তাহলে সে যেন বলে ‘আমি একজন রোজাদার’। (বুখারি-১৮৯৪)
আরো এসেছে, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার পানাহার পরিত্যাগ আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি-৫৭১০, সুনানে ইবনে মাজাহ-১৬৮৯) আরেক হাদিসে এসেছে, ‘তুমি যখন রোজা রাখবে, সাথে যেন মিথ্যা ও পাপাচার থেকে তোমার কান, চোখ এবং জিহ্বাও রোজা রাখে। রোজার দিনে তোমার খাদেমকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবে। রোজার দিনটি মর্যাদা ও প্রশান্তির অতিবাহিত করবে। রোজার দিনকে অন্যান্য সাধারণ দিনের মতো বানিয়ে নিও না।’ (শুয়াবুল ইমান লি বাইহাকি-৩৩৭৪)
ইমাম গাজ্জালি র. রোজাকে তিনটি স্তরে ভাগ করেছেন। তার মতে, ‘রোজার প্রথম স্তর হচ্ছেÑ সর্বসাধারণের রোজা। এরূপ রোজাদার চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পানাহার ও যৌন কামনা থেকে বিরত থাকেন। দ্বিতীয় স্তর হচ্ছেÑ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রোজা। এরূপ রোজাদার চোখ, কান, জিহ্বা, হাত-পা এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়কে পাপকাজ থেকে বিরত রাখেন। তৃতীয় স্তর হচ্ছেÑ উঁচু স্তরের ব্যক্তিদের রোজা। এরূপ রোজাদার শুধু পানাহার ও কামভাব থেকেই বিরত থাকেন তা নয়; বরং চোখ, কান, জিহ্বা এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়কে পাপকাজ থেকে বিরত রাখেন ও মনকে যাবতীয় কুচিন্তা ও বৈষয়িক দুশ্চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রেখে স্রষ্টার ধ্যানে মগ্ন থাকেন।’ (ইহইয়া- ১/২৩৪) প্রকৃত রোজাদার মিথ্যা বলে না, অন্যায়ে লিপ্ত হয় না, অশালীন কথা বা কাজে জড়ায় না। ঝগড়া-বিবাদ, হইচই, পরনিন্দা ও পরচর্চা করে না।
হালাল জীবিকার দ্বারা জীবন নির্বাহ করে, হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকেÑ এ সবই রোজার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়ার সহায়ক পন্থা। এই শিক্ষা সব সময়ের। কাজেই এক মাসের কষ্টকর সাওমের মধ্য দিয়ে যে শিক্ষাকে আমরা স্মরণ করেছি, পালনের চেষ্টা করেছি, তা বছরব্যাপী স্মরণ রাখতে হবে এবং জীবনভর পালন করে যেতে হবে। কাঁটা-ঝোপ বেষ্টিত বিপদসঙ্কুুল পথে সতর্ক পথিক যেভাবে তার কাপড় ও শরীর বাঁচিয়ে চলে সেভাবেই অন্যায় ও গর্হিত কার্যকলাপের হাতছানি থেকে বেঁচে জীবনযাপন করতে পারলেই আমাদের জীবনে রোজার শিক্ষা সার্থক ও ভাস্বর হয়ে উঠবে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যদি রমজানের এই শিক্ষা বাস্তবায়ন না হয় তবে আমাদের সিয়াম, কিয়াম, রাতজাগরণ আর সব আমল বিফলে যাবে।
হাদিসের ভাষায়, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, যাদের রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ছাড়া কিছুই অর্জন হয় না। আবার এমন অনেক রাত জাগরণকারীও আছে যারা রাত জাগার কষ্ট ছাড়া কিছুই পায় না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-১৬৯০) সুতরাং দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা করেও যার আত্মীক ও নৈতিক শক্তির উন্নতি হয় না, তার সিয়াম পণ্ডশ্রম ছাড়া কিছু নয়। একবারও আমরা ভেবে দেখেছি, কেন এমন হয়? কেন আমাদের সিয়াম সাধনা ব্যর্থ হয়? কারণ সিয়ামের উদ্দেশ্য অর্জনে আমরা পূর্ণ সচেতন নই। তাকওয়া বা আত্মসংযম অর্জনে আমাদের প্রতিযোগিতা হয় না। হয় বাহারি উপাদান দিয়ে ইফতার ও সাহরি ভোজনের প্রতিযোগিতা। আমরা যদি আমাদের সিয়াম সাধনা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করতে পারি, তবেই মহান রবের দেয়া সিয়ামের প্রকৃত স্বাদ উপলব্ধি করা যাবে। লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট
akpatwary.qp@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
ভুয়া সনদ সিন্ডিকেট : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদ ঢাকার পয়োবর্জ্য-গ্যাস লাইন পরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার : পরিবেশমন্ত্রী সাকিবকে ডিপিএলে চান বিসিবি প্রধান নির্বাচক কাতারের সাথে যৌথ বাণিজ্য কাউন্সিল গঠনে এফবিসিসিআইয়ের চুক্তি টি-২০ খেলতে সিলেটে পৌঁছেছে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দল খুলনায় হিটস্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কী বলল যুক্তরাষ্ট্র? জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য বাংলাদেশের প্রাথমিক দল ঘোষণা বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় গাজীপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে মৃত হাতি উদ্ধার

সকল