নিয়ত সহিহ হওয়া
- মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম
- ১১ এপ্রিল ২০২১, ০১:০২
এই পৃথিবীতে আপনি দু’জন ব্যক্তিকে দেখতে পাবেন। একজন আখেরাতের কাজ করেও জাহান্নামি। অন্যজন দুনিয়াবি কাজ করেও জান্নাতি। দেখলে মনে হবে, প্রথম ব্যক্তি আখেরাতের কাজ করছে। আর অপরজন দুনিয়াবি কাজ করছে। মূলত তার উল্টো। এখন আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে, এ রকম কেন হবে বা এর হেতু কী? এর একটিই মাত্র হেতু। আর সেটি হলো নিয়ত। আল্লাহ তায়ালা মানুষের কার্যকলাপ দেখে না, তার নিয়ত দেখে। তার কাজের ফয়সালাও নিয়ত অনুযায়ী হবে।
প্রথমজন আখেরাতের কাজ করে মানুষকে দেখানোর জন্য। মানুষ তাকে বুজুর্গ বলবে। দ্বীনদার নেককার ব্যক্তি বলবে। যদি বেশি বেশি করে নামাজ আদায় করে, লোকেরা তাকে নামাজি বলবে।
অপরজন দুনিয়াবি কাজ তথা ক্ষেত-খামারে কাজ করেও আখেরাতের সামানা অর্জন করে নিলো। জমিনে লাঙ্গল চালায় আর মনে মনে আল্লাহর জিকির। ক্ষেতে কাজ করার সময় অন্যের জমিতে কোনো ক্ষতি করে না। দেখলে মনে হবে, এগুলো দুনিয়াবি কাজ। মূলত এগুলো দুনিয়াবি কাজ নয়। কারণ, তাদের নিয়ত ছিল শুদ্ধ। তারা মনে করেন, এটা আমার হালাল উপার্জন, আমার এই ক্ষেতখামার থেকে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এর বদলা স্বয়ং আল্লাহ আমাকে কিয়ামতের দিন দেবেন।
বুখারি শরিফের শুরুতেই একটি হাদিস, প্রত্যেক কাজই তার নিয়তের ওপর বর্তাবে। (বুখারি)
কাল কিয়ামতের ময়দানে তিনজন ব্যক্তিকে সর্বপ্রথম দাঁড় করাবেন। তন্মধ্যে একজন হবে শহীদ, দ্বিতীয়জন হবে বড় আলেম, অপরজন হবে দানকারী।
আল্লাহ তায়ালা শহিদী ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কেন শহীদ হয়েছ?
শহীদ ব্যক্তিটি বলেন, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার জন্য শহীদ হয়েছি। আপনার দ্বীনকে বুলন্দ করতে আমি দিগি¦দিক ছুটেছিলাম রণক্ষেত্রে। কালিমার পতাকা উড্ডীন করতে আমি জিহাদে যোগদান করেছিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি।
আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি আমাকে রাজি খুশি করতে শহীদ হওনি। আমার দ্বীন বুলন্দ করতেও তুমি শহীদ হওনি। বরং তুমি শহীদ হয়েছ, মানুষ তোমাকে বীর-বাহাদুর বলবে। শহীদদের খ্যাতি অর্জন করবে। তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের আদেশ দেবেন, এই ব্যক্তিকে জাহান্নামের অন্দরমহলের গন্ধকাষ্টে নিক্ষেপ কর। ফেরেশতারা আদেশ পেয়ে এই ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। এবার জিজ্ঞাসা করবেন বড় আলেমকে। তুমি কী জন্য ইলম অর্জন করেছ?
ব্যক্তিটি প্রশ্নোত্তরে বলবেন, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনাকে রাজি খুশি করতে আমার অর্ধেক হায়াতকে ইলমের রাস্তায় কোরবান করে দিয়েছি। মানুষকে আপনার দিকে আহ্বান করতে আমি ইলম অর্জন করেছি। মানুষকে গোমরাহি থেকে সঠিক পথের দিশা দিতে আমি এই ইলমকে হাসিল করেছি। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন,
না, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি ইলম হাছিল করেছ মানুষ তোমাকে বড় আলিম বলবে, বড় বুযুর্গ বলবে। দ্বীনদার-নেককার বলবে। মানুষ তোমাকে হাদিয়া তোহফাহ দিবে। সুতরাং তুমি তোমার বদলা দুনিয়েতেই পেয়ে গেছো। এখানে তোমার কোনো বদলা নেই। ফেরেশতাদের আদেশ দেবেন জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য। ফেরেশতারা আদেশ পেয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
এভাবে ডাকা হবে দানশীল ব্যক্তিকে। জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কেন দান করেছ? দানশীল ব্যক্তিটি উপরোল্লিখিত ব্যক্তির মতো উত্তর দেবে। বলবে, আমি পুরো জীবনের অর্জিত মাল দান করেছি আপনাকে রাজি খুশি করতে। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, না। তুমি দান করেছ মানুষ তোমাকে দানশীল বলবে। মানুষ তোমার দানের আশায় তোমার মুখাপেক্ষী হবে। সুতরাং তুমি তোমার যা যা দুনিয়াতেই পেয়ে গেছো। এখানে তোমার কোনো বদলা নেই। তার পূর্বের ন্যায় আচরণ করা হবে।
তাদের কাজগুলো ছিল আখেরাতের। কিন্তু নীড় হলো জাহান্নাম। তাই বলছি, আল্লাহ তায়ালা মানুষের কার্যকলাপ দেখে না। দেখে মানুষের নিয়ত। সবকিছুর ক্ষেত্রে একই হুকুম। যদি আমি কাপড় পরিধান করি মানুষকে দেখানোর জন্য, তাহলে আমি সাওয়াবের ভাগিদার হতে পারব না। যদি আমি এই কাপড় সতর ঢাকার নিয়তে পরিধান করি, তাহলে এক ডিলে দুই পাখি মারার মতো। সাওয়াবও পেলাম কাপড় পরিধানও করলাম!
এভাবে আমার প্রতিটি কাজে যদি নিয়ত সহিহ থাকে, তাহলে আমার কাজও সম্পাদন হলো, সাওয়াবও হাছিল হলো। তাই নিজেকে যাচাই করে নিই, আমি কোন ব্যক্তির কাতারে শামিল হচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন!
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা