‘এপ্রিল ফুল’ কিভাবে এলো
- সাদ হোসাইন
- ০৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
খলিফা ওয়ালিদ তৎকালীন সেনাপতিকে ৭১১ ঈসায়ী সনে স্পেন অভিযানের নির্দেশ দেন। স্পেনে চলছিল তখন চরম অত্যাচারী রাজা রডারিকের নির্যাতন, সামাজিক বৈষম্য ও ধর্মের নামে অনাচার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই মুসলমান হয়েছিলেন। আবার অনেকে রাজার অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মুসলমানদের আমন্ত্রণও জানিয়েছিল।
বর্ণিত আছে, অত্যাচারী রাজা রডারিক সিউটা দ্বীপের রাজা ফার্ডিনান্ড জুলিয়ানের দুহিতা ‘ফ্লোরিডার’ শ্লীলতাহানি করায় ক্ষুব্ধ হয়ে জুলিয়ান মুসলিম সেনাপতিকে স্পেন বিজয়ের আমন্ত্রণ জানায়। খলিফা ওয়ালিদের সেনাপতি স্পেন বিজয়ের জন্য হজরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লøাহি আলাইহি তাকে নিযুক্ত করেন এবং মাত্র সাত হাজার সেনা দেন। এত অল্প সেনা নিয়ে এত বিরাট কাজ সম্পাদন কঠিন কল্পনা করে হজরত তারিক বিন জিয়াদ রহ. হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তিনি মহান আল্লøাহ পাকের দরবারে কান্নাকাটি এবং দোয়া-মুনাজাত করতে থাকেন।
একদিন গভীর রাতে স্বপ্নে তিনি সাইয়িদুল মুরসালিন মুহাম্মদ সা:-এর জিয়ারত লাভ করেন। রাসূল সা: তাকে আশ^স্ত করে বলেন, ‘হে জিয়াদ! তুমি অগ্রসর হও। চিন্তিত হয়ো না, তুমিই কামিয়াবি লাভ করবে।’
এই স্বপ্ন দেখে হজরত তারিক বিন জিয়াদ রহ. বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে অগ্রসর হন। স্পেন পৌঁছা মাত্র তিনি আদেশ দেন তার সব নৌজাহাজ পুড়িয়ে ফেলতে। অতঃপর তিনি সেনাদের উদ্দেশ করে এক বিশেষ ঈমানদীপ্ত উদ্দীপনাপূর্ণ ও জ্বালাময়ী ভাষণ দেন।
ভাষণে বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমাদের এখন যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। কারণ সব জাহাজ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কাজেই মহান আল্লাহ পাকের ওপর ভরসা করে অবশ্যই তোমাদের বিজয় লাভ করতেই হবে ইনশাআল্লøাহ।’ মুসলমান সেনারা তার এ ঈমানদীপ্ত জজবাপূর্ণ ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন এবং বিজয় লাভ করেন। জালিম রডারিক শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে নদীতে নিমজ্জিত হয়। বিজয়দীপ্ত হজরত তারিক বিন জিয়াদ রহ. কারমোনার সিডোনিয়া ও ইজিসা বিজয় করেন।
মুসলিম সেনাবাহিনীকে চার ভাগে ভাগ করে মালাগা, গ্রানাডা এবং টলেডোর দিকে পাঠানো হয় এবং গথিক রাজ্যের বহু অঞ্চলে মুসলিম সুশাসন কায়েম হয়। এরপর ৭১২ ঈসায়ী সনে একটি বিশাল মুসলিম বাহিনী স্পেনে আগমন করেন এবং সিডোনিয়া, সেভিল, মেরিডা, তালাভেরা অধিকার করেন। হজরত তারিক বিন জিয়াদ রহ. সম্মিলিত বাহিনীসহ পর্যায়ক্রমে গ্যালিসিয়া, লিওন, অ্যাস্টুরিয়াস, সারাগোসা, আরাগান, ফ্যালোনিয়া, বার্সিলোনা জয় করে উত্তরে পিরেনিজ পবর্তমালা পর্যন্ত অগ্রসর হন। ৭১২ ঈসায়ী সন থেকে ৭১৪ ঈসায়ী সনের মধ্যে জালিম খ্রিষ্টান রাজার শোষিত স্পেনের প্রায় সমগ্র অঞ্চল শান্তির দ্বীন ইসলামের সুশীতল পতাকাতলে আসে।
এরপর কয়েক শতাব্দী স্পেনে মুসলিম শাসন চললেও একদিকে শাসকরা অনৈসলামিক অর্থাৎ শরিয়তবিরোধী আমল-আখলাকে মত্ত হয়ে উঠে। অপরদিকে মুনাফিক ও ধর্মব্যবসায়ীরাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ১৪৭০ ঈসায়ী সনের দিকে এ সুযোগকে চরমভাবে গ্রহণ করে মহা জালিম খ্রিষ্টান শাসক ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা দম্পতি। তারা বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় তাদের খ্রিষ্টান গুপ্তচর ব্যক্তিকে ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদরাসার উস্তাদ পদেও ঢুকাতে সক্ষম হয়। সেই সাথে তারা উলামায়ে ‘ছু’দেরকেও হাত করতে সমর্থ হয়। তারা সবাই ইসলামী আদর্শের ওপর অটলতা ছেড়ে ঢিলেঢালা চলার পক্ষে জনমত তৈরি করে। শরাব খাওয়া, গান-বাজনা করা ও শোনা, বেপর্দা হওয়া এবং অবৈধ নারী সম্পর্ককে দোষের নয় বলে প্রচার করে। ফলে মুসলমান তাদের ঈমানি বল হারিয়ে ফেলে।
উলামায়ে ছু’রা আরো প্রচার করে যে, খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের শত্রু নয়। এ রূপ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে ধুরন্ধর, জালিম ও শঠ ফার্ডিনান্ড দম্পতি অবশেষে মুসলমানদের থেকে পর্যায়ক্রমে স্পেন ছিনিয়ে নেয়। তারা প্রথমে আল হামরা দুর্গের পতন ঘটায়। এরপর গ্রানাডা তুলে দিতে বলে। কিন্তু দিশেহারা, ঈমানহারা, বিভ্রান্ত মুসলমান মুনাফিক ও উলামায়ে ছু’দের প্রতারণার কারণে তখন খুব সহজেই তাদের কাছে দেশটা সোপর্দ করে দেয়। এমতাবস্থায় দিশেহারা মুসলমান সেনাদের সন্ধির শর্ত দিয়ে অস্ত্রমুক্ত হতে বলা হয়। কিন্তু তীক্ষè বুদ্ধিসম্পন্ন তৎকালীন মুসলিম সেনাপতি এ সন্ধিকে মরণশর্ত বুঝতে পেরে সন্ধি শর্তে আবদ্ধ না হওয়ার জন্য সপক্ষীয় সেনাদল ও জনগণকে এক তেজোস্বীনী ভাষণে ভয়াবহ ভবিষ্যৎ পরিণতির ইঙ্গিত দেন। কিন্তু তার অবশ্যম্ভাবী পতনের আশঙ্কায় মুসলমানরা তার এ গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের কোনো মর্যাদা দেয়নি। তাই তিনি উপায়ান্তর না দেখে এলাভিরা তোরণ দিয়ে অশ্বারোহণে নগর ত্যাগের সময় ওঁৎ পেতে থাকা ১০ জন খ্রিষ্টান অশ্বারোহীর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যুদ্ধ করতে করতে তাদের কয়েকজনকে হতাহত করেন এবং নিজেও মারাত্মকভাবে আহত হন। অবশেষে শেনিল নদীতে পড়ে চিরশান্তি লাভের শাহদতের অমীয় সুধা পান করেন।
এরপর প্রতারক রাজা ফার্ডিনান্ড আদেশ জারি করে মসজিদগুলোকে নিরাপদ ঘোষণা করে। এ আদেশে আরো বলা হয়, যারা মসজিদে আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ থাকবে। অসংখ্য স্পেনীয় মুসলমান সরল বিশ্বাসে মসজিদগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করে আবদ্ধ হয়। জালিম খ্রিষ্টান শত্রুরা মসজিদগুলোকে তালাবদ্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয় অবশিষ্ট স্পেনীয় মুসলমানদের। আর বাইরে থেকে জালিম খ্রিষ্টানরা উল্লাসভরে কৌতুক করে সমস্বরে ঋড়ড়ষ! ঋড়ড়ষ!! (ফুল, ফুল) বলে অট্টহাসি আর চিৎকারে মেতে উঠে।
দিনটি ছিল পয়লা এপ্রিল ১৪৯২ ঈসায়ী সন। অদ্যাবধি প্রতারক খ্রিষ্টানরা তাদের সেই শঠতার স্মরণে ধোঁকা বা প্রতারণার দিবস হিসেবে পালন করে ‘এপ্রিল ফুল’। খ্রিষ্টানদের জন্য এ দিনটি পালনীয় হলেও মুসলমানদের জন্য ভাষাহীন বেদনাদায়ক। কেননা, মুসলমানদেরই হাতে গড়ে উঠা একটি সভ্যতা বর্বর অসভ্য জালিম খ্রিষ্টানদের নির্মম প্রতারণায় সমূলে উৎখাত হয়ে ভেসে যায় লাখ লাখ মুসলমানদেরই বুকের তাজা রক্ত স্রোতে।’ এটাই হচ্ছে এপ্রিল ফুলের বা পয়লা এপ্রিলের নির্মম ইতিহাস।
কাজেই এদিনের ইতিহাস থেকে প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য হলোÑ হাকিকিভাবে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ইসলামবিরোধী ও মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব সম্পর্কে শিক্ষা নেয়া। তাদের সম্পর্কে সচেতন হওয়া। পাশাপাশি সমস্ত মুসলমান পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড় সবার জন্যই ফরজ-ওয়াজিব হলোÑ পয়লা এপ্রিল বা এপ্রিল ফুল পালন করা থেকে নিজে বিরত থাকা এবং অন্যকেও বিরত রাখা।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মেখল, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা