২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রতিশ্রুতি পালনে প্রভুর সন্তুষ্টি

-

ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে চলার পথে নিত্যদিন আমরা কতজনের সাথে কত শত ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতির লেনদেন করি! কিন্তু এসব ওয়াদার কথা ক’জনই বা মনে রাখতে পারি? অথচ ওয়াদা রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারো সাথে কোনো বিষয় ওয়াদাবদ্ধ হলে তা পালনে হেলাফেলা করা ঈমানদারের পরিচয় নয়। ওয়াদা রক্ষা করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। বৈধভাবে যার সাথেই ওয়াদা করা হোক না কেন তা রক্ষা করা আবশ্যক।
কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো- আমাদের যাপিত জীবনে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পারিবারিক জীবনেও ওয়াদা রক্ষার্থে আমরা বেখবর থাকি। এ জন্যই ওয়াদাকারীদের হুঁশিয়ার করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা ওয়াদা পালন করো। নিশ্চয়ই ওয়াদা সম্পর্কে (তোমাদের) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সূরা : বনি ইসরাঈল-৩৪)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা কেন এমন কথা বলো! যা কাজে পরিণত করো না, এটা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণিত কাজ যে তোমরা বলবে এমন কথা যা করবে না।’ (সূরা: সফ-২-৩)।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, ‘তোমরা যদি কোনো সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে (চুক্তিভঙ্গজনিত) বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা করো, তাহলে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথ (ঘোষণা দিয়ে) বাতিল করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ চুক্তি ভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা : আনফাল-৫৮)।
ওয়াদা পালনে রয়েছে প্রভুর সন্তুষ্টি। যে সন্তুষ্টি মানবজীবনে এনে দেয় সুখশান্তি। ওয়াদা পালনকারীর প্রতি ঝরতে থাকে প্রভুর অফুরন্ত রহমতের বারিধারা। ওয়াদা পালন করা মুমিনের নিদর্শন। যে ওয়াদা পালন করে না সে মুনাফিকের কাজ করে। আর মুনাফিকের আলামত বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি। এক. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। দুই. যখন ওয়াদা করে, তা ভঙ্গ করে। তিন. তার কাছে যখন আমানত রাখা হয় সে তার খিয়ানত করে।’ (সহিহ বুখারি, আয়াত : ৩৩)।
অন্য এক হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা: বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য অথবা তার ভাইয়ের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করবে, আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাৎ এমন অবস্থায় ঘটবে যে, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা ওয়াদা ও কসম সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দেয়, পরকালে তাদের জন্য কোনো অংশই থাকবে না, সেদিন এদের সাথে আল্লাহ তায়ালা কোনো কথা বলবেন না, আল্লাহ তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না এবং আল্লাহ তাদের পবিত্রও করবেন না, এদের জন্য রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সূরা আলে ইমরান : ৭৭; বুখারি : ৬৬৫৯)।
কেয়ামতের দিন যদি আল্লাহ তায়ালা কারো ওপর নাখোশ হয়ে যান, তাকে সাহায্য করার মতো কেউ থাকবে না। ওই ব্যক্তিকে নিশ্চিত জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মতো মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : আলেম, শিক্ষক ও নির্বাহী সম্পাদক,
মাসিক ছন্দপাতা


আরো সংবাদ



premium cement