১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষার জন্য সফর

-

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম তার অনুসারীদের জন্য কল্যাণকর সব বিষয় পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন। পৃথিবীতে মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক তথা কর্মজীবনের অর্পিত দায়দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ঠিক তখনই মানুষ মানসিক শান্তি লাভের পাশাপাশি আল্লøাহর সৃষ্টি অবলোকন করার মানসে কোথাও না কোথাও ঘুরে বেড়াতে চায় । দেখতে চায় আল্লøাহর সৃষ্টি নিদর্শন। ঘুরে দেখা বা ঘুরে বেড়ানোকে আরবিতে ‘সফর’ বলে। বাংলায় সফরকে ‘ভ্রমণ’ আর ইরেজিতে ‘ট্যুর’ বলে। শিক্ষা সফরকে ইংরেজি ‘স্টাডি ট্যুর’ বলে। আরবিতে যাকে ‘তরবিয়তি’ সফর বলা হয়। শিক্ষা সফর বা ভ্রমণ একটি আনন্দময় ইবাদত এবং জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার উৎস। সফর বা ভ্রমণের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলোÑ পূর্ববর্তী জাতিসমূহের কীর্তি ও পরিণতি সম্বন্ধে জানা এবং তা থেকে যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ করা। মহান আল্লøাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের মনোদৈহিক প্রশান্তি লাভ এবং পূর্ববর্তী জাতিসমূহ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করার জন্য সফরের প্রতি উৎসাহিত করে বলেন, হে রাসূল আপনি বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লøাহ সবকিছু করতে সক্ষম। (সূরা আনকাবুত, আয়াত-২০)
আল্লাহপাক অন্যত্র বলেন, ‘তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের জীবনাচরণ। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কী হয়েছে। এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশবাণী।’ (সূরা আল-ইমরান, আয়াত : ১৩৭-১৩৮)
‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল তা কি দেখে না? যারা মুত্তাকি তাদের জন্য পরলোকই শ্রেয়; তোমরা কি বোঝো না?’ (সূরা ইউসুফ, আয়াত-১০৯)
‘এরা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখত এদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল। পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে ও কীর্তিতে প্রবলতর। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের অপরাধের জন্য এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে তাদের রক্ষা করার কেউ ছিল না।’ (সূরা মুমিন, আয়াত-২১)
‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না ও দেখে না তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে অধিক প্রবল। তারা যা করত তা তাদের কোনো কাজে আসেনি।’ (সূরা মুমিন, আয়াত-৮২)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, তোমরা ভ্রমণ করো, সুস্থ থাকবে এবং তোমরা গণিমত লাভ করবে। (সিলসিলাতুল আহাদিস, হাদিস নং-২৫৫) তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা ভ্রমণ করো, সুস্থ থাকবে এবং তোমরা যুদ্ধে শরিক হও, গনিমত লাভ করবে।’ (সিলসিলাতুল আহাদিস, হাদিস নং-৩৩৫২)
‘সফর’ বা ভ্রমণ পৃথিবীর আদিকাল থেকে চলে আসছে। নবী রাসূলরা মহান আল্লøাহর নির্দেশে বিভিন্ন জনপদ ও লোকালয়ে সফর করে ‘দাওয়াতি মিশন’ বাস্তবায়ন করেছেন। তাঁদের একনিষ্ঠ অনুসারীরা ধর্ম প্রচারে কিংবা ধর্ম ও জীবন বাঁচানোর তাগিদে আল্লøাহর নির্দেশে সফর তথা হিজরত করেছেন। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-কে মহান আল্লাহ মিরাজ রজনীতে ঊর্র্ধ্বাকাশে একান্তে নিজের কাছে ‘সফর’ করিয়েছেন। তাই তো পৃথিবীর আদি থেকে অদ্যাবধি ইতিহাসের পাতায় অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত, নবী-রাসূলের নাম পাওয়া যায়, যাঁরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত ভ্রমণ করে ভ্রমণেতিহাসে চির স্মরণীয় ও অমর হয়ে আছেন।
সফরের উপকারিতা : ১. সফরের মাধ্যমে আল্লøাহর আদেশ পালন করা হয়। ২. আল্লøাহর সৃষ্টিরাজির সৌন্দর্য ও রহস্য সম্পর্কে জানা যায়। ৩. মনোদৈহিক সুস্থতা ও প্রশান্তি লাভ করা যায়। ৪. অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহ সম্পর্কে জানা যায়। ৫. নতুন নতুন লোকাচার তথা সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটে। ৬. বিভিন্ন ভাষা বর্ণ রুচি মানসিকতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। ৭. অগণিত সাওয়াব লাভ করা যায়। ৮. অপরিচিতদের সাথে পরিচিত হওয়া যায়। ৯. স্বীয় জীবনের প্রকৃত মূল্যায়ন করার সুযোগ হয়। ১০. জীববৈচিত্র্য, পাখ-পাখালির কলতান, নদী-সাগরের মিতালী দেখা যায়।
তবে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আয়োজিত শিক্ষা সফরে ছেলেমেয়েরা একসাথে যায়, এ ক্ষেত্রে পর্দা ও নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকলে সফরে যাওয়া ঠিক হবে না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে সফরের মাধ্যমে অগণিত সাওয়াব ও যাবতীয় কল্যাণ হাসিলের তাওফিক দান করুন।
লেখক : মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, নোয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement