২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অশ্লীলতা বিস্তারের কারণ

-

সূচনা কথা : আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের বড় মহামারী কী? আপনি হয়তো বলবেন (করোনা কোভিট-১৯)। কিন্তু না, করোনার চেয়ে বড় মহামারী আকার ধারণ করেছে ধর্ষণ। এখন অভিভাবকদের মাথা ব্যথার এক ভয়ানক নাম ধর্ষণ। ধর্ষণ দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তথ্যসূত্র : দৈনিক প্রথম আলোর ২০১৯ সালের রিপোর্টের হিসাব অনুযায়ী, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন নারী পাঁচ হাজার ৪০০ জন আর শিশু ৮১৫ জন। মামলা হয়েছে ছয় হাজার ২১৫টি। আর ২০১৮ সালের রিপোর্টের হিসাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন নারী তিন হাজার ৯০০ জন আর শিশু ৭২৭ জন। মামলা হয়েছে মোট চার হাজার ৬২৭টি। আইন ও সালিস কেন্দ্রের তথ্যমতে- সারা দেশে আগের চেয়ে ধর্ষণের ঘটনা দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। ২০২০ সালের প্রথম ১০ দিনে ১২৮ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন যারা আমাদের মা-বোনদের একটি অংশ। ইসলামে ব্যভিচারের মতো ধর্ষণও কবিরা গুনাহের শামিল।
ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ কারণ তুলে ধরা হলো-
কুরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী না চলা : কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় নারী ও পুরুষ উভয়কে পর্দা মেনে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। এমনকি অশ্লীলতাপূর্ণ কাজের আশপাশেও যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে এর কাছেও যেয়ো না, তা প্রকাশ্যেই হোক আর গোপনেই হোক’ (সূরা আল আনআম, আয়াত-১৫১)।
আল্লাহর ভয় মনের মধ্যে না রাখা : যার মনের মধ্যে আল্লাহর ভয় থাকবে সে কখনো ধর্ষণ ও ব্যভিচার নামক কবিরা গুনাহের পথে পা বাড়াতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর তোমরা ভয় করো সে দিনকে, যেদিন কেউ কারো কোনো কাজে আসবে না এবং কোনো ব্যক্তি থেকে বিনিময় গ্রহণ করা হবে না আর কোনো সুপারিশ তার উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১২৩)।
পুরুষরা পর্দা না মানা : নারীর পাশাপাশি পুরুষদেরও পর্দা মানা ফরজ। সেটি আমরা অনেকেই জানি না। পুরুষরা তাদের চোখের দৃষ্টিকে নিম্নগামী করে রাখবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে নবী! আপনি মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে চলে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হিফাজত করে। এটি তাদের জন্য কল্যাণকর’ (সূরা নূর, আয়াত-৩০)। এ আয়াতে প্রমাণিত হয়, পুরুষদেরও চোখের পর্দা মেনে চলাফেরা করতে হয়। আর আমাদের সমাজে পর্দা না মানার কারণেই দিন দিন ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বেড়েই চলেছে।
নারীর নিরাপত্তার অভাব : আমাদের দেশে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই নারীর অবাধ মেলামেশা করতে হয় পুরুষের সাথে কিন্তু নারীদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। আর এর ফলে নারীরা নানা রকম নির্যাতনের শিকার হন।
নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়া : নারী হলো মায়ের জাতি। মায়ের পদতলে রয়েছে জান্নাত। নারী হলো বোনের জাতি। বোনের সাথে ভালো ব্যবহার করতেন রাসূল সা:। আমাদের সমাজে নারীদের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়। তাই ধর্ষণ বৃদ্ধির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো- নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়া।
পরিবারে সঠিক শিক্ষার অভাব : আমাদের পরিবারে নৈতিক শিক্ষার প্রচুর অভাব রয়েছে। পরিবারের প্রত্যেকেই চান আমার সন্তান আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে বড় হোক। সে একজন নীতিবান, আদর্শবান ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হোক সেটা আমাদের পরিবার খুব কমই চায়। আমরা নিজেরাই যখন মন্দনীতি, আদর্শহীন সেখানে ভালো ফল কিভাবে আশা করব। পারিবারিক শিক্ষার অভাবে, নীতি শিক্ষার অভাবে ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে ধর্ষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সমাজে ভালো মানুষের কদর না থাকা : ভালো মানুষের প্রতি অবজ্ঞা ও অবমূল্যায়ন। বর্তমান সমাজে খারাপ মানুষের মূল্যায়ন বেশি। খারাপ মানুষকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ধর্ষণ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হলো- ভালো মানুষকে মূল্যায়ন না করা।
বিয়েকে কঠিন করা : ধর্ষণ বৃদ্ধির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো বিয়েকে কঠিন করা। বিয়েবহির্ভূত যত কাজ আছে তা সহজ করা। অনেক বখাটে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছে এরকম শত শত প্রমাণ পত্রিকায় দেখা যায়।
যৌন উত্তেজনামূলক ওয়েবসাইট বন্ধ না করা : বর্তমান সময়ে আমাদের কোমলমতি কিশোর-কিশোরীরা অশ্লীল কাজে বেশি জড়িয়ে পড়ছে তার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো- নিয়ন্ত্রণহীন অবৈধ ওয়েবসাইট বন্ধ না করা, যা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
নারীর দেহ প্রদর্শনেচ্ছা : ধর্ষণের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ- নারীর দেহ প্রদর্শনেচ্ছা। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে নারীদের দিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন করা হয়। আর ওই বিজ্ঞাপনে নারীদের প্রায় অর্ধ উলঙ্গ করে প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া সিনেমা, নাটক ও পত্রপত্রিকায় নারীদের প্রলোভন করে প্রদর্শন বা উপস্থাপন করা হয়। আর এগুলো দেখে একজন দুর্বল প্রকৃতির মানুষের মধ্যে যৌন কামভাব জাগ্রত হয় আর সে পথেই পা বাড়ায়। এখান থেকেই ধর্ষণের সূত্রপাত হয়।
আইনের সঠিক ব্যবহার না হওয়া : প্রথমত, ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমাদের সমাজে কার্যকর নেই। দ্বিতীয়ত, ধর্ষণের শাস্তি আইনে যা আছে তারও সঠিক ব্যবহার করা হয় না। যার কারণে সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্ষণের পরিমাণ দিন দিন মহামারী আকার ধারণ করছে যা আমাদের জন্য মোটেও কাম্য নয়।
ধর্ষণ নামক মহামারী থেকে বাঁচতে হলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বন্ধ করা সম্ভব এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নে কোনো প্রকার পক্ষপাত বা কোনো প্রকার দয়া প্রকাশ করা যাবে না। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে গিয়ে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের প্রভাবিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো’ (সূরা নূর)।
তিনটি কথা বলে শেষ করব : ১. মা-বাবার দায়িত্ব হলো উপযুক্ত ছেলে-মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া; ২. বোনদের দায়িত্ব হলো পর্দা মেনে রাস্তায় চলাফেরা করা এবং ৩. ভাইদের দায়িত্ব হলো মা-বোনদের শ্রদ্ধা করা। ধর্ষণ ও ব্যভিচার থেকে মুক্তির একমাত্র (ভ্যাকসিন) মাধ্যম হলো আল্লাহর বিধান (কুরআন) ও রাসূল সা:-এর হাদিস। আল্লাহ বাংলাদেশকে ধর্ষিত মা-বোন ও শিশুদের আহাজারি, আর্তনাদ ও অভিশাপ থেকে রক্ষা করুন, আমীন।
লেখক : প্রধান শিক্ষক, পিরামিড বর্ণমালা স্কুল, বিজয়নগর, পতেঙ্গা চট্টগ্রাম।


আরো সংবাদ



premium cement