২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

প্রসঙ্গ : হাদিসের ব্যাখ্যা

-

জনাব এস এম শফীউল্লাহ ১৬ জানুয়ারি নয়া দিগন্তে একটি হাদিসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘তলাবুল ইলমি ফারিদাতুন আলা কুল্লি মুসলিম।’ এই হাদিসের অর্থ করতে গিয়ে আমরা ছোট্ট একটি শব্দ জুড়ে দেই। শব্দটি হচ্ছে ‘দ্বীন’। তার কথা হলো দ্বীন শব্দটি জুড়ে দেয়া ঠিক হবে না। কিন্তু সঠিক অনুবাদ করতে হলে দ্বীন শব্দটি আবশ্যই জুড়ে দিতে হবে। কারণ আরবি ব্যাকরণে ‘আল ইলমু’ এর মধ্যে যে আলিফ লাম আছে তাকে আলিফ লামে আহদি বলে। যার অর্থ নির্ধারিত ইলম অর্থাৎ কুরআনি ইলম বা আসমানি ইলম। যাকে আমরা দ্বীনি ইলম বলি। ইলমকে এভাবে নির্ধারিত করার পেছনে রয়েছে কুরআনের আয়াত ও অন্যান্য হাদিসের মর্ম। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মুমিনদের সবার একসাথে বের হয়ে পড়ার কোনো দরকার ছিল না। কিন্তু তাদের জনবসতির প্রত্যেক অংশের কিছু লোক বেরিয়ে এলে ভালো হতো। তারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করত এবং ফিরে গিয়ে নিজের এলাকার লোকদেরকে সতর্ক করত, যাতে তারা (অমুসলমানি আচরণ থেকে) বিরত থাকত, এমনটি হলো না কেন?’ (সূরা তাওবা : ১২২) তেমনি মহানবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘ইলম তিনটি বিষয়Ñ সুস্থির (রহিত না হওয়া) আয়াতসমূহ, প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ কিংবা (এতদুভয়ের) সমর্থিত বিধান। এ ছাড়া যা রয়েছে তা অতিরিক্ত।’ (মেশকাত শরিফ) এ আয়াত ও হাদিস থেকে স্পষ্ট হয় প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য যে জ্ঞান শিক্ষা করা ফরজ; তাহলো দ্বীনি শিক্ষা। অন্যান্য বিষয় তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক। অতএব তিনি যে লিখেছেন দ্বীন শব্দটি বসিয়ে দেয়ার কারণে বোঝা যায় স্কুল কলেজ ভার্সিটি পড়–য়া মুমিনরা যেন দ্বীনের বাইরে রয়ে গেছেন, বিষয়টি এমন নয়। দ্বীনি ইলম দ্বারা হাদিসের ব্যাখ্যা করলে স্কুল কলেজ ভার্সিটি পড়–য়া মুমিনরা দ্বীনের বাইরে থেকে যাওয়া বোঝা যায় না এবং শুধু মাদরাসায় পড়লেই দ্বীনি ইলম শিক্ষা হয় এটিও বোঝা যায় না বরং স্কুল কলেজ ভার্সিটিতেও দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা যায়। মোট কথা হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা হলো, দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। মানবিক, ব্যবসায় ও বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষা কারো জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বরং তা ব্যক্তির ইচ্ছা ও পছন্দের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যার যেটিতে আগ্রহ হয়, সে সেটি শিখতে পারে। এসব শিক্ষার পেছনে নিছক পার্থিব সুবিধার চিন্তা না রেখে যদি সমাজ ও রাষ্ট্রের সেবা করার সদিচ্ছা যুক্ত থাকে, তাহলে এগুলো শেখায়ও ছওয়াব রয়েছে। কিন্তু একজন মুসলমানের জীবনে আকায়েদ ও ইবাদতের বাইরে যেসব ক্ষেত্র ও পর্যায় থাকে, সেই বিষয়ে ইসলামের বিধান ও নির্দেশনা জেনে নেয়া তার জন্য ফরজ। ‘তলাবুল ইলমি ফারিদাতুন আলা কুল্লি মুসলিম’ এর মর্ম এটাই।
Ñ মওলানা নূরুদ্দিন সাইফি


আরো সংবাদ



premium cement