২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিরাজ ও বিজ্ঞান

-

(শেষাংশ)
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, রহিম স্পেসশিপে ৫০০ আলোকবর্ষ ভ্রমণ করে এসে দেখল, সমবয়সী ভাইটি বৃদ্ধ, আর সে টকবগে যুবক। কিন্তু রাসূল সা: ভ্রমণ করে এসে দেখলেন পরিবেশের সব কিছু আগের মতোই রয়ে গেল, কোনো পরিবর্তন হয়নি? এ ক্ষেত্রে আরেকটি উদাহরণ দিলে স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। ধরুন আমাদের প্রধানমন্ত্রী লক্ষ্মীপুরে আসবেন, এখন সরকারিভাবে ঘোষণা হলোÑ প্রধানমন্ত্রীর সম্মানার্থে তার গাড়িবহর দেখার। সাথে সাথে সবার গাড়ি সড়কের একপাশে চলে যেতে হবে, যাতে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িটি অতিক্রম করতে সুবিধা হয়। এখন ধরে নিন যে, প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি ঠিক ১২টায় লক্ষ্মীপুরের মূল সড়ক দিয়ে আসছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর দেখে সাধারণ গাড়ির ড্রাইভার গাড়ি সড়কের একপাশে নিয়ে গেল, একটু লক্ষ্য করুন যে, ড্রাইভার যে গাড়িটি সড়কের একপাশে নিয়ে গেল, সে গাড়িটির ইঞ্জিন বন্ধ নেই, তাহলে চাকা ঘুরে না কেন? কারণ ড্রাইভার ইঞ্জিন থেকে চাকার কানেকশন আলাদা করে ফেলছেন। যদিও সময় অতিবাহিত হয় কিন্তু ইঞ্জিন চালু থাকা সত্ত্বেও চাকা ঘুরে না। অর্থাৎ আল্লাহ তার রাসূলকে যখন তার কাছে কিছু সময়ের জন্য নিয়েছেন, হয়তো বা তিনি তার কুদরতি কালের চাকা বন্ধ রেখেছেন; দিন-রাত, বয়স বৃদ্ধি অর্থাৎ প্রকৃতির সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। আবার যখন প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর চলে গেল তখন ড্রাইভার ইঞ্জিনের সাথে চাকার কানেকশন দেয়ার পর সাথে সাথে গাড়িটি চলা শুরু করল। অর্থাৎ রাসূল সা: যখন দুনিয়াতে চলে এলেন, তখন আবার আল্লাহর আদেশে প্রকৃতি আগের মতো চলা শুরু করল, অর্থাৎ কুদরতি কালের চাকা চালু করে দিলো। সুবহান আল্লাহ।
মিরাজের ব্যাপারে চাক্ষুস প্রমাণও রয়েছে, আর তা হলোÑ হুদায়বিয়ার সন্ধির পর প্রিয় নবী সা: যাদের কাছে পত্র পাঠিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ইয়ামামার গভর্নর হাওয়া বিন আলী, বাহরাইনের গভর্নর মুনজির বিন সাওয়া, ওমানের গভর্নর জাফর বিন জুলান্দি, দামেস্কের গভর্নর হারিস বিন আবি শামর গাসসানি, আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাসি, মিসররাজ মাকাওকাস, ইরানের শাহানশাহ কিসরা খসরু পারভেজ ও রোম সম্রাট (কায়সার) হিরাক্লিয়াস। তাফসিরে মাআরিফুল কুরআনে রয়েছে, সেখানে উল্লেখ আছেÑ তাফসির ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা: রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে পত্র লিখে হজরত দেহইয়া ইবনে খলিফাকে পাঠান। এরপর দেহইয়ার পত্র পৌঁছানো, রোম সম্রাট পর্যন্ত পৌঁছা এবং তিনি যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ সম্রাট ছিলেন, এসব কথা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে, যা সহিহ বোখারি এবং হাদিসের অন্যান্য নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে বিদ্যমান রয়েছে। এ বর্ণনার উপসংহারে বলা হয়েছে, রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস পত্র পাঠ করার পর রাসূলুল্লাহ সা:-এর অবস্থা জানার জন্য আরবের কিছুসংখ্যক লোকের দরবারে সমবেত করতে চাইলেন। আবু সুফিয়ান ইবনে হরব ও তার সঙ্গীরা সে সময় বাণিজ্যিক কাফেলা নিয়ে সে দেশে গমন করেছিলেন। নির্দেশানুযায়ী তাকে দরবারে উপস্থিত করা হলো। হিরাক্লিয়াস তাদেরকে যেসব প্রশ্ন করেন, সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ সহিহ বোখারি, মুসলিম প্রভৃতি গ্রন্থে বিদ্যমান রয়েছে।
আবু সুফিয়ানের আন্তরিক বাসনা ছিল যে, সে এই সুযোগে রাসূলুল্লাহ সা: সম্পর্কে এমন কিছু কথাবার্তা বলবে যাতে, সম্রাটের সামনে তার ভাবমর্যাদা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আবু সুফিয়ান নিজেই বলে যে, ‘আমার এই ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করার পথে একটি মাত্র অন্তরায় ছিল। তা এই যে, আমার মুখ দিয়ে কোনো সুস্পষ্ট মিথ্যা কথা বের হয়ে পড়লে সম্রাটের দৃষ্টিতে হেয়প্রতিপন্ন হবো এবং আমার সঙ্গীরা আমাকে মিথাবাদী বলে ভর্ৎসনা করবে। তখন আমার মনে মিরাজের ঘটনাটি বর্ণনা করার ইচ্ছা জাগে। এটি যে মিথ্যা ঘটনা তা সম্রাট নিজেই বুঝে নেবেন।
আমি বললাম, আমি তার ব্যাপাটি আপনার কাছে বর্ণনা করছি। আপনি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন যে, ব্যাপারটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনাটি কী? আবু সুফিয়ান বললেন, নবুয়তের এই দাবিদারের উক্তি এই যে, সে এক রাত্রিতে মক্কা মোকাররমা থেকে বের হয়ে বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং প্রত্যুষের আগে মক্কায় আমাদের কাছে ফিরে এলেন।
ইলিয়ার (বায়তুল মোকাদ্দাসের) সর্বপ্রধান যাজক ও পণ্ডিত তখন রোম সম্রাটের পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমি সে রাত্রি সম্পর্কে জানি। রোম সম্রাট তার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এ সম্পর্কে কিরূপ জানেন? সে বলল, ‘আমার অভ্যাস ছিল যে, বায়তুল মোকাদ্দাসের সব দরজা বন্ধ না করা পর্যন্ত আমি শয্যা গ্রহণ করতাম না। সে রাত্রি আমি অভ্যাস অনুযায়ী সব দরজা বন্ধ করে দিলাম, কিন্তু একটি দরজা আমার পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব হলো না। আমি আমার কর্মচারীদের ডেকে আনলাম। তারা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা চালাল, কিন্তু দরজাটি তাদের পক্ষেও বন্ধ করা সম্ভব হলো না। (দরজার কপাট স্থান থেকে মোটেই নড়ছিল না) মনে হচ্ছিল যেন আমরা কেনান পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লাগাচ্ছি। আমি আপনার হয়ে কর্মকার ও মিস্ত্রিদের ডেকে আনলাম। তারা পরীক্ষা করে বলল, কপাটের ওপর দরজার প্রাচীরের বোঝা চেপে বসেছে। এখন ভোর না হওয়া পর্যন্ত দরজা বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। সকালে আমরা চেষ্টা করে দেখব, কী করা যায়। আমি বাধ্য হয়ে ফিরে এলাম এবং দরজার কপাট খোলাই থেকে গেল। সকাল হওয়া মাত্র আমি সে দরজার কাছে উপস্থিত হয়ে দেখি, মসজিদের দরজার কাছে ছিদ্র করা একটি প্রস্তরখণ্ড পড়ে রয়েছে। মনে হচ্ছিল, ওখানে কোনো জন্তু বাঁধা হয়েছিল। তখন আমি সঙ্গীদেরকে বলেছিলাম, আল্লাহ তায়ালা এ দরজাটি সম্ভবত এ কারণে বন্ধ হতে দেননি যে, হয়তো বা আল্লাহর কোনো প্রিয় বান্দা আগমন করেছিলেন। অতঃপর তিনি বর্ণনা করেন, ওই রাতে তিনি আমাদের মসজিদে নামাজ পড়েন। অতঃপর তিনি আরো বিশদ বর্ণনা দিলেন।’
এখানে বায়তুল মোকাদ্দাসের সর্বপ্রধান যাজক ও পণ্ডিত ইলিয়ার মুসলমান ছিলেন না। তার এই চাক্ষুষ ঘটনাই প্রমাণ করে, মিরাজ সত্য যা রাসূল সা:-এর সশরীরে হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধান বিরোধী নয় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুরের ইন্তেকাল থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথেপ্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের

সকল