২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মহানবীর সমাজনীতি

-

পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, আমি আপনাকে সমগ্র বিশ^বাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ১০৭)। আল্লাহ তায়ালা বিশ^নবী সা:কে যে, সারা জগতের জন্য শান্তির বাতাস প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে এ ধরায় প্রেরণ করেছেন তা তাঁর বাণী থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়। আর বিশ^নবী সা: নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছেন, আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। আমি উত্তম আদর্শ শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছি। (বুখারি, মুসলিম) সুতরাং ঠিক তাই তিনি করে গেছেন, যা তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য ছিল। যার প্রমাণ ছোট থেকেই লক্ষ্য করা যায়। আজ সর্বত্র সংস্কারের পরিকল্পনা থাকলেও নাই বাস্তব সম্মত কর্মপদ্ধতি। তাইতো কোনোভাবেই সমাজ মাদক, র্ধষণ ও অপরাধমুক্ত হচ্ছে না। আসুন ফলো করি তার আদশর্, যার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল স্বার্থক ও সফল। শিক্ষা নিবো তার থেকে যিনি ছিলেন মানবতার শিক্ষক। নি¤েœ তাঁর সমাজ পরিবর্তনের রূপরেখা দৃষ্টান্তমূলক আলোকপাত করা হলো।
দুধমাতার কোলে নিষ্ঠার শিক্ষা : হযরত হালিমাতুস সাদিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে, বিশ^নবী সা: প্রথম দিন যে স্তন থেকে দুধ পান করেছিলেন, যত দিন দুধ পান করেছেন ঠিক একই স্তন থেকে পান করেছেন। কখনো অপর স্তন থেকে দুধ পান করেননি। কারণ তাঁর সাথে আরেকজন ভাই ছিল তার জন্য রেখে দিতেন। এভাবেই তিনি শিশুকালীন নিষ্ঠার শিক্ষা দিয়েছেন। (তারিখুল ইসলাম)
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য হিলফুল ফুজুল গঠন : বিশ^নবী সা: এমন সময় পৃথিবীতে আগমন করেন, যখন সারা আরব লুট-তরাজ, খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, মাদক আর নির্যাতনে ভরা ছিল। তিনি আদর্শ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বড় বড় গোত্রের লিডারদেরকে সাথে নিয়ে একটি শক্তিশালি কমিটি (সংগঠন) গঠন করেন। যা আজও হিলফুল ফুজুল নামে পরিচিত। সে সময় এ সংগঠনে অংশ নেয়, বনু হাশিম, বনু মুত্তালিব, বনু আসাদ, বনু যাহরাহ ও বনু তামিমসহ আরো কিছু শক্তিশালী গোত্র। সবাই মিলে সংগঠনের লক্ষ্য স্থির করেÑ ১। আমরা দেশ থেকে নিরাপত্তাহীনতা দূরীভূত করব। ২। আমরা মুসাফির (পরদেশী) দেরকে আমাদের ভূমিতে সুরক্ষা দেবো। ৩। আমরা দরিদ্রদের সাহায্য করব। ৪। আমরা বড়দেরকে ছোটদের ওপর অন্যায় অত্যাচার করা থেকে বাধা প্রদান করব। এভাবেই শুরু করেন বিধ্বংসীত আরব জাতিকে আদর্শ জাতিতে রূপান্তরের কার্যক্রম। তারপরে যখন তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হলেন তখন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ওহিয়ে এলাহির মাধ্যমে আরব জাতির আমূল পরিবর্তন করে সোনার জাতিতে রূপান্তরিত করলেন। নবুয়ত প্রাপ্তির পরের কার্যক্রমের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করছি।
নারী ও শিশুর যথার্থ মর্যাদা প্রদান : তখন নারী ও শিশু নারীদের করা হতো অমানবিক নির্যাতন। তা ছিল তাদের জন্য সচারচর সহজ ব্যপার অর্থাৎ নারীরা ছিল নিছক ভোগ্যসামগ্রী বা বিনোদনের বস্তু। আর কি আশ্চর্য যাদের বিনোদনের জন্য ব্যবহার করবে তারাই যখন শিশু নারী হয়ে নিজের ঘরে জন্ম নেয় তাকে করে জীবন্ত হত্যা। বিশ^নবী সা: ইসলাম নিয়ে নবী হিসেবে আগমন করার পরে উভয় প্রকারের নারীদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গাটি প্রদান করলেন। বিশ^নবী ঘোষণা করলেন যার তিনটি কন্যা সন্তান হবে সে খুশি মনে তাদের লালন পালন করে সঠিক পাত্রে বিবাহ প্রদান করলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য তিনটি জান্নাত বরাদ্দ করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ ! সাহাবারা খুশি হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ যদি কারো দুইটি কন্যা হয় তার? বিশ^নবী সা: বললেন, তার জন্য দু’টি জান্নাত। আর যার একটি কন্যা সন্তান হবে তার জন্য একটি জান্নাত। (বুখারি, মুসলিম) অপরদিকে মা-দের জন্য ঘোষণা করলেন আরো মর্যাদার স্থান। বিশ্বনবী সা: বলেন, জান্নাত তোমাদের মায়ের পায়ের নিচে। সুবহানাল্লাহ ! (বুখারি, মুসলিম) অর্থাৎ মাকে খুশি রাখতে পারলে তোমার জন্য জান্নাত ওয়াজিব।
প্রিয় পাঠক, একবার ভাবেন তো কোন সময় বিশ^নবী এ ঘোষণা করলেন? যখন সমাজপতিরা নারীদের ভোগের সামগ্রী বানিয়ে রেখেছে তখন। আর এখন যখন বিশ^নবীর এ আদর্শ মোতাবেক সমাজ ব্যবস্থার কথা বলতে যাই তখন নারীরা মনে করে ইসলাম আমাদের সমান অধিকার দেয়নি। প্রিয় বোন, যে নবী তোমাকে ভোগ থেকে তুলে সম্মানের আসন দিলো তাঁকে যদি পছন্দ না হয় তাহলে তুমি বড়ই হতভাগা। তবে ঠাণ্ডা মাথায় একবার ভাবার আহবান করলাম। যে সব নারীবাদী পুরুষ তোমার পক্ষে স্লোগান দেয় মূলত সে তোমাকে আবার ভোগের লালসায় ঘুরে। নিজের অবস্থান বুঝো আগে, সমান নয় বরং পুরুষের তুলনায় তোমার অধিকার বেশি।
সুদ প্রথা নিষিদ্ধ করণ : বিশ^নবী সা: যখন দেখলেন, আরবের সামাজিক অবস্থার অবনতির পেছনে মূল কারণ হলো, অর্থনৈতিক যথেচ্ছ ব্যবহার। আর তখনকার আরবের অর্থ উপার্জনের মূল মাধ্যম ছিল অবৈধ পদ্ধতিতে উপার্জন। তার মধ্যে সুদ প্রথার প্রচলন ছিল সব থেকে বেশি ব্যাপক। আর এই সুদের কারণে কেউ হয়ে যেত বড় ধনী আর কেউ শোষণের বেড়াজালে পরে নিঃশেষ হয়ে যেত। ইচ্ছেমতো জুলুম করত ধনীরা গরিবদের ওপর। তাই বিশ^নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা সুদকে হারাম করেছেন আর ব্যবসাকে হালাল করেছেন। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২৭৫)
মাদক, জুয়া ও ব্যভিচার দমন : সমাজকে ঢেলে সাজাতে বিশ^নবী লক্ষ করলেন যে, সব থেকে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয় মদ ও জুয়ার আসরে। তাই বিশ^নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ঘোষণা দিলেন, মহান আল্লাহর নির্দেষ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ওহে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর এসব শয়তানের কারসাজি ঘৃণ্য বস্তু। সুতরাং তোমরা এসব বর্জন করো যাতে তোমরা সফল হতে পারো (সূরা মায়িদা আয়াত ৯০)। এক হাদিসে বিশ^নবী ঘোষণা করেন, নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক। আর যাবতীয় মাদকই হারাম। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মাদক সেবন করে অতঃপর নেশা অবস্থায় মারা যায় তওবা করার সুযোগ না পায়, আখিরাতে সে মদ পান করা থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়াও বিভিন্ন হাদিসে ধাপে ধাপে আল্লাহর নির্দেষ মোতাবেক মদকে হারাম ঘোষণা করেন। এক পর্যায়ে তা সমাজ থেকে দূরীভূত হয়ে যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজেও মাদক নিষিদ্ধ, কিন্তু মাদকের উৎপাদন চালু রাখা হয়েছে। এভাবে নয় আসুন কুরআনের পদ্ধতিতে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ি।
সৎ পথে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান : আরব সমাজ যত অন্যায়ের মধ্যে লিপ্ত ছিল তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য অপরাধ হলো লুটতরাজ। আর এই অপরাধকারীদের বড় অংশ বেকার সমাজ। তাই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বাঁচতে কর্মমুখী হতে বিশ^নবী সা: সত্যবাদী ব্যবসায়ীদের ভূয়সী প্রশংসা করে জান্নাতি বলে ঘোষণা করলেন। যাতে সকলে কর্মমুখী হয় আর অপরের সম্পদের প্রতি লোভ না করে। আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, সৎ পথে ফকির ও মিসকিনদের জন্য উপার্জনকারী জিহাদরত ব্যক্তির মতো। (ইবনে মাজাহ) এ ছাড়াও কুরআন ও সুন্নাহয় হালাল উপার্জনের প্রতি ব্যাপকভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
অপকর্ম রোধে ব্যক্তির ভূমিকা : সমাজে কোনো আইন বা কোনো গোষ্ঠীর দ্বারা এককভাবে কোনো অন্যায় দূর করা সম্ভবপর নয়। এখানে যেমন আইন দরকার তেমনি প্রত্যেকটি স্থান থেকে ব্যক্তিগত ভূমিকা খুবই প্রয়োজন। নিজ নিজ দায়িত্বে যদি সবাই অপকর্ম ছেড়ে দেয় তাহলে অতি সহজে সমাজ কলুষমুক্ত হয়ে যাবে। অন্যায়ের বিরোধিতা করা প্রত্যেকের দায়িত্ব। বিশ^নবী সা: বলেন, তোমরা প্রত্যেকেই জিম্মাদার এবং প্রত্যেককেই আল্লাহর দরবারে হিসাব দিতে হবে (বুখারি, মুসলিম)। সুতরাং শুধু একটি গোষ্ঠীর ওপর সমাজ সংস্কারের দায়িত্ব দিয়ে রাখলে তা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। বরং সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। সব ধরনের অন্যায়ের বিরোধিতা করে, ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি আদর্শ সমাজ গঠন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সে তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : প্রধান মুফতি, কাশফুল উলুম নেছারীয়া মাদরাসা কমúেøক্স, নেছারীবাদ, সিংড়া, নাটোর।


আরো সংবাদ



premium cement
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি : মিশা সভাপতি, ডিপজল সম্পাদক ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল