২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসলামে প্রাণীর মূর্তি বা ভাস্কর্য তৈরির হুকুম

-

আলেমদের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত অভিমত হলোÑ ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি তৈরি করা এবং তার বেচাকেনা হারাম। এমনকি কোনো অমুসলিমের কাছে বিক্রি করার জন্য মূর্তি তৈরি করাও হারাম। এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। তেমনিভাবে মাঠে-ময়দানে বাগানে-পার্কে, রাস্তাঘাটে মূর্তি স্থাপন করাও হারাম। তা পূজার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হোক বা সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে কিংবা মানুষের কাছে তার স্মৃতি জাগরুক রাখার জন্য হোক। এমনকি রাস্তাঘাট বা বাড়িঘরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য হলেও হারাম।
কারণ, ইসলাম ধর্ম হলো তাওহিদের ধর্ম। ইসলামের দৃষ্টিতে শিরকের চেয়ে বড় কোনো গুনাহ নেই। এ কারণেই ইসলাম পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, কঠোর ভাষায় পৌত্তলিকতার নিন্দা করেছে। ইসলাম মূর্তিপূজার কঠোর বিরোধিতা করেছে। ইসলাম মূর্তি তৈরিরও বিরোধিতা করেছে। কারণ মূর্তি মানুষকে ধীরে ধীরে মূর্তিপূজা বা পৌত্তলিকতার দিকে ধাবিত করে। অতীতের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী মূর্তি তৈরির মাধ্যমেই ধাপে ধাপে মূর্তিপূজা শুরু করেছিল।
‘ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, আল্লাহর বাণী ‘আর তারা বলে, ‘তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না; বর্জন করো না ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাসরকে। বস্তুত তারা অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে।’ আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেÑ এগুলো নূহ আ:-এর কওমের কিছু লোকের নাম। এরা মারা যাওয়ার পর শয়তান তাদের উত্তরসূরিদেরকে এ মর্মে প্ররোচিত করে যে, তাদের বসার স্থানে তোমরা তাদের মূর্তি তৈরি করে রাখ। আর সে মূর্তিগুলোর নাম তাদের নিজেদের নামে রাখো। তখন তারা তাই করল। তখনো এ মূর্তিগুলোর পূজা করা হতো না। অতঃপর এসব লোকেরা যখন মারা গেল আর পরের লোকেরা সেগুলোর জ্ঞান হারিয়ে ফেলল; তখন মানুষ সে মূর্তিগুলোর পূজা করতে আরম্ভ করল। (বুখারি, কিতাবুত তাফসির, বাবু ওয়ালা সুয়ায়ান ওয়ালা ইয়াগুছান ওয়ালা ইয়ায়ুছান, ফাতহুলবারি খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৬০, হা : ৪৯২০) এ গল্প প্রমাণ করে, আল্লøাহকে বাদ দিয়ে মানুষ মূর্তিপূজা শুরু করেছে সেই নেতা বা নেত্রীদের মূর্তি স্থাপনের মধ্য দিয়ে।
আল কুরআনে ইবরাহিম আ:-এর কওমের মধ্য থেকে যারা মূর্তির পূজা করত তাদের কঠোর নিন্দা করে বলা হয়Ñ ‘আর আমি ইতোপূর্বে ইবরাহিমকে সঠিক পথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্পর্কে ছিলাম সম্যক অবগত। যখন সে তার পিতা ও তার কওমকে বলল, এ মূর্তিগুলো কী; যেগুলোর পূজায় তোমরা রত আছ? তারা বলল, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি। সে বলল, তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা সবাই রয়েছে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে। তারা বলল, তুমি কি আমাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছ না কি তুমি খেল-তামাশা করছ? সে বলল, না বরং তোমাদের রব তো আসমানসমূহ ও জমিনের রব। যিনি এসব কিছু সৃষ্টি করেছেন, আর এ বিষয়ে আমি অন্যতম সাক্ষী। আর আল্লøাহর কসম তোমরা চলে যাওয়ার পর আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে অবশ্যই কৌশল অবলম্বন করব। অতঃপর সে মূর্তিগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলো বড়টি ছাড়া, যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে। তারা বলল, আমাদের দেব-দেবীগুলোর সাথে কে এমনটি করল? নিশ্চয় সে জালিম।’ (সূরা আম্বিয়া : ৫১-৫৯)
যারা দেব-দেবীর মূর্তির পূজা করে তাদের কঠোর নিন্দা করে আল্লøাহ বলেন, ‘সে বলল, তোমরা নিজেরা খোদাই করে যেগুলো বানাও তোমরা কি সেগুলোর উপাসনা করো? অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে এবং তোমরা যা করো তা সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আস সাফফাত : ৯৫-৯৬)
আল্লøাহ আরো বলেন, ‘আর স্মরণ করো ইবরাহিমকে, যখন সে তার কওমকে বলেছিলÑ তোমরা আল্লøাহর ইবাদত করো এবং তার তাকওয়া অবলম্বন করো; এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। যদি তোমরা জানো, তোমরা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিগুলোর পূজা করছ এবং মিথ্যা বানাচ্ছ। নিশ্চয়ই তোমরা আল্লøাহ ছাড়া যাদের উপাসনা করো তারা তোমাদের রিজিকের মালিক নয়। তাই আল্লøাহর কাছে রিজিক তালাশ করো। তাঁর ইবাদত করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সূরা আল আন কাবুত : ১৬-১৭)
পূজার উদ্দেশ্যে মূর্তি তৈরি ও মূর্তিপূজা প্রসঙ্গে এটাই হলো কুরআনের অবস্থান, আর যদি পূজার উদ্দেশ্যে নয়; বরং কারো স্মৃতিকে চিরস্থায়ী করার জন্য বা কারো প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য মূর্তি তৈরি করা হয়; তা হলেও মূর্তি তৈরি করা হারাম। কারণ তা শিরক তথা মূর্তিপূজার দরজা খুলে দেয়। মানুষকে মূর্তিপূজার দিকে ধাবিত করে।
(কাল দ্বিতীয় পর্ব)
লেখক : ইসলামিক স্কলার ও সিনিয়র অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

 


আরো সংবাদ



premium cement