২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শ্রেষ্ঠ আদর্শ মুহাম্মদ সা:

-

এ বিশাল পৃথিবীটা যখন অশান্তির চরম দুঃসময় অতিক্রম করছিল, পৃথিবীর মানুষ অপেক্ষা করছিল এমন একজন মুক্তিকামী মহামানবের জন্য, যিনি পৃথিবীর অবিন্যস্ত অবয়বটি পাল্টে দিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজাবেন পৃথিবীকে। ঠিক সেই মুহূর্তে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: পৃথিবীতে আগমন করলেন সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার রহমত হিসেবে। পবিত্র কুরআনুল কারিমে মহানবী সা:কে উদ্দেশ করে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত নং- ১০৭)
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য শ্রেষ্ঠ আদর্শের নিদর্শন। গোটা মানবজাতির সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বাধিক সম্মানিত এবং সব নবী-রাসূলের নেতা পরিশেষে আগমন করেন। সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: কোনো একটি বিশেষ দল বা সম্প্রদায়ভুক্ত নবী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য বিশ্বনবী। কারণ তাঁর পর দুনিয়ায় আর কোনো নবীর আগমন ঘটবে না। এই মর্মে রাসূলে কারিম সা: ইরশাদ করেন, ‘অন্য নবীরা তাঁদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন, আর আমি বিশ্বের সব মানুষের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’
আর অনাগতকাল ধরে তাঁর সে আদর্শের ছায়াতলে পরম শান্তি ও নিরাপদ আশ্রয় পেতে পারে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
মহানবী সা: পৃথিবীতে আবির্ভূত হন এমন এক কঠিন সময়ে যখন সমগ্র পৃথিবী জাহেলিয়াতের মধ্যে নিমজ্জিত ছিল। কোথাও শান্তি ছিল না, স্বস্তি ছিল না, ধর্মের নামে অধর্ম বিরাজ করছিল সর্বত্র। শিরক ও কুফরের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল সবাই। নারীদের সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হচ্ছিল অবলীলায়, কন্যাসন্তানকে দেয়া হচ্ছিল জীবন্ত কবর। মারামারি, হানাহানি, খুন-খারাবির উন্মত্ততায় গোটা সমাজ ছিল টালমাটাল, পৃথিবীর সেই করুণ অবস্থা নিরসনের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় হাবিব হজরত মুহাম্মদ সা:-কে সিরাজুম মুনিরা বা প্রদীপ্ত চেরাগরূপে প্রেরণ করলেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ‘কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের অথবা কোনো আরবের ওপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোনো কালোর ওপর কোনো সাদার অথবা কোনো সাদার ওপর কোনো কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সবাই আদম থেকে এবং আদম মাটি থেকে সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হলো আল্লাহভীতি।’
তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘সুন্দর আখলাকের পরিপূর্ণরূপ দিতে আমি প্রেরিত হয়েছি।’ পৃথিবীর সব মানুষের চেয়ে তিনি ছিলেন সুন্দরতম ও সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা: ইরশাদ করেন, ‘আমি কখনোই এমনটি দেখিনি যে, নিজের ব্যক্তিগত আক্রোশে কোনো অন্যায়কারীকে শাস্তি প্রদান করেছেন।’ মহানবী সা:-এর চাচা আবু তালিবের পুত্র হজরত আলী রা: শৈশবকাল থেকে মহানবী সা:-এর কাছে প্রতিপালিত হয়েছেন। কিশোরদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। মহানবী সা: সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মহানবী সা: ছিলেন অতিশয় উদার, মহানুভব ও দয়ার্দ্রচিত্ত। সর্বাবস্থায় তাঁর হৃদয়ের কোমলতা ও দয়ালু স্বভাবই প্রতিভাত হতো, কঠোরতা তিনি পরিহার করে চলতেন। তাঁর মুখ দিয়ে কখনো খারাপ ও অশ্রাব্য বাক্য নির্গত হতো না। তিনি কখনো অন্যের দোষত্রুটি অন্বেষণ করতেন না। যদি এমন কোনো অনুরোধ তাঁর কাছে পেশ করা হতো, যা গ্রহণযোগ্য নয়, তা হলে তিনি যেমন তা অনুমোদন করতেন না, আবার সরাসরি তা নাকচও করে দিতেন না। যারা তাঁকে জানতেন, তারা সহজেই এর অর্থ অনুধাবন করতে পারতেন। তিনি এটা এ জন্য করতেন যেন অন্যের অনুভূতিতে এতটুকু আঘাত না লাগে অথচ অনুমোদনযোগ্য নয় এমন কাজ থেকেও সে নিবৃত্ত হয়।’ হজরত আলী রা: আরো বলেন, ‘তিনি ছিলেন অতিশয় পরোপকারী মহানুভব ব্যক্তি, কঠোরভাবে সত্যবাদী ও দয়ার্দ্রচিত্ত। তাঁর সাহচর্যে আসার সৌভাগ্য যারা অর্জন করেছেন তারাই হয়েছেন মুগ্ধ ও আনন্দিত। যে কেউ তাঁকে দেখেছে, প্রথম দর্শনেই তাঁর সৌম্যকান্তি তাকে আকর্ষণ করেছে এবং পরিচয় ঘনিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে তিনি তাঁকে মহব্বত করতে শুরু করেছেন।’
তিনি ছিলেন সবার আদর্শ, তাঁর ধৈর্য, আত্মত্যাগ, ন্যায়পরায়ণতা, সত্যবাদিতা, বিনয় ও নম্রতা, দানশীলতা, আন্তরিকতা ও উদারতা বিশ্বের সব মানুষকে দান করেছে অতুলনীয় আদর্শ। তিনি মানুষকে স্বাবলম্বী হতে শিক্ষা দিয়েছেন। হজরত আয়শা রা: বলেছেন, ‘রাসূল সা: সব কাজ নিজ হাতে করতেন, নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন, বকরির দুধ দোহন করতেন, নিজের কাজকর্ম নিজেই সম্পন্ন করতেন।’
বিদায় হজের ভাষণে রাসূল সা: বলেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যত দিন তোমরা এর অনুসরণ করবে তত দিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব (আল-কুরআন) এবং তাঁর প্রেরিত রাসূলের সুন্নাহ।’ (ময়াত্তা)
বস্তুত বর্তমান সমস্যাসঙ্কুল বিশ্বে যেখানে মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যেখানে সন্ত্রাস ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, দেশে দেশে হানাহানি ও যুদ্ধবিগ্রহ চলছে, নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরছে, যেখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য নষ্ট হচ্ছে, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতপার্থক্য এবং আচার-আচরণের ভিন্নতা সহ্য করা হচ্ছে না, সেখানে রাসূলুল্লাহ সা:-এর অনুপম আদর্শ ও সর্বজনীন শিক্ষা অনুসরণই সমগ্র পৃথিবীতে এবং বিভিন্ন সমাজে বহু প্রত্যাশিত শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমীন!
লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ আইসিজের দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু দূষণে

সকল