২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কুরআনের আলোকে ব্যক্তি সমাজ ও কল্যাণরাষ্ট্র

-

আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূর করে রাসূলুল্লাহ সা: তাবলিগে দ্বীনের চূড়ান্ত পর্যায়ে মদিনায়ে মুনাওয়ারায় কায়েম করেছিলেন দুনিয়ার প্রথম ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র। বর্তমান উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ বিশেষ করে অমুসলিম বহু দেশেও রাসূলুল্লাহ সা:-এর সেই কল্যাণরাষ্ট্রের বহু মৌলিক বিষয় অনুসরণ করা হয়। অন্য দিকে রাসূলুল্লাহ সা:-এর প্রণীত মদিনা সনদ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের রক্ষাকবচ হিসেবে এখন সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। এতে বোঝা যায়, মানবসভ্যতা যে পর্যায়েই উন্নীত হোক না কেন, তা ইসলামী সভ্যতাকে অতিক্রম করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ সভ্যতার চূড়ান্ত উৎকর্ষ হচ্ছে ইসলাম। এখানেই ইসলামী জীবন বিধানের পূর্ণাঙ্গতা প্রমাণিত। আর এটা এ জন্যই যে এই বিধান আল্লাহ প্রদত্ত। ফলে মানবীয় চিন্তাপ্রসূত জীবন বিধানের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা থেকে মুক্ত।
এ ক্ষেত্রে ভাবনার বিষয় হচ্ছে তৎকালীন আরবে যখন ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তখনকার আরববাসী এই কল্যাণরাষ্ট্রের মাহাত্ম্য, গুরুত্ব ও তাৎপর্য আমাদের মতো করে উপলব্ধি করতে পারেনি। কারণ আধুনিক বিশ্বের মতো রাষ্ট্র ও সমাজ বিজ্ঞান তখন বিকশিত হয়নি। জাহেলিয়াত-পরবর্তী আরবের মানুষ রাসূলুল্লাহ সা:-এর ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্রের বদৌলতে জুলুম, শোষণ ও নির্যাতন থেকে মুক্তি পেলেও তৎকালীন সমাজ সভ্যতার সূচনাপর্বে মানুষ আজকের মতো করে ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্রকে অনুধাবনের বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য অর্জন করতে পারেনি। যদিও রাসূলুল্লাহ সা:-এর নবুয়তি ছোহবতে তারা আলোকিত হয়েছিলেন। কিন্তু আধুনিক বিশ্বের মানুষ বস্তুবাদী সভ্যতার দুই কুফল পুঁজিবাদ ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার নির্মম অভিজ্ঞতার শিকার হয়ে ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা হাড়ে হাড়ে অনুভব করছে। এ জন্যই সমসাময়িক বিশ্বে বিরাজমান সভ্যতার দ্বন্দ্বে ইসলাম হয়ে উঠেছে একমাত্র কাণ্ডারি।
ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিল রাসূলুল্লাহ সা:-এর একটি আল্লাহ নির্দেশিত ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে তিনি গড়ে তুলেছিলেন কল্যাণরাষ্ট্রের উপযোগী জনশক্তি। যারা সাহাবি হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। এসব সাহাবি ছিলেন রাসূল সা:-এর আদর্শে উজ্জীবিত আর ইসলামের জন্য উৎসর্গিত। রাসূলুল্লাহ সা: তাদের ব্যাপারে আস্থার সাথে ঘোষণা করেছিলেন ‘আমার সাহাবিরা হচ্ছে নক্ষত্রের মতো, যাকেই অনুসরণ করো সঠিক পথে দিশা পাবেই। এসব সাহাবির ইখলাস বা নিষ্ঠার ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল ইসলামী সমাজের ভিত্তি যার চূড়ান্ত পরিণতি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র।
এই বিষয়গুলো সামনে রাখলে সাবেক সচিব ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ আবদুল হান্নান রচিত ‘কুরআনের আলোকে ব্যক্তি সমাজ ও কল্যাণরাষ্ট্র’ পুস্তিকাটি কৌতূহলী ও সত্যসন্ধানী পাঠকের বেশ উপকারে আসবে বলে মনে করি। বিগত ২০১৯ সালের বিভিন্ন সময়ে নয়া দিগন্তে প্রকাশিত লেখকের একগুচ্ছ নিবন্ধের সঙ্কলন হচ্ছে এই পুস্তিকা। দৈনিক পত্রিকায় সাধারণত আমপাঠকের জন্যই যেকোনো লেখা প্রকাশিত হয়। এই নিবন্ধগুলোও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু পুস্তিকার নিবন্ধগুলো থেকে যেকোনো মানুষ ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্রের আদর্শ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন বলে আশা করা যায়।
শাহ আবদুল হান্নানের লেখার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সহজ ও সাবলীলতা; যা অনেকের ক্ষেত্রে বিরল। অবশ্য প্রবন্ধগুলো তিনি লিখেছেন উপদেশের ভঙ্গিতে। ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্রের প্রায়োগিক জটিলতার দিকে যাননি, কিন্তু বইয়ের লেখাগুলো সচেতন পাঠককে ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র সম্পর্কে সবিস্তার জানতে আগ্রহী করে তুলবে এটা আশা করা যায়। তবে মুসলমানদের নিষ্ঠা অর্থাৎ কথা ও কাজের মধ্যকার সংহতি সম্পর্কে দুয়েকটি নিবন্ধ থাকলে পুস্তিকাটি আরো পূর্ণাঙ্গ হতো বলে মনে করি। কারণ ব্যক্তি মানুষের কথা ও কাজের গরমিল যেকোনো আদর্শ প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা। কুরআন মাজিদে এ জন্য এরশাদ হয়েছে ‘হে মুমিনরা তোমরা যা করো না তা বলো কেন, এটি আল্লাহর খুবই অপছন্দ।’ রাসূলুল্লাহ সা: বলেন ‘যে জ্ঞান অনুসরণ করা হয় না তা হচ্ছে ফলহীন গাছের মতো।’ শাহ আবদুল হান্নান তার ধারাবাহিক লেখালেখিতে আশা করি সামনে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও উম্মাহকে সতর্ক করে ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথকে এগিয়ে নেবেন। পুস্তিকাটি পড়তে সবাইকে অনুরোধ জানাই। লেখক : সাংবাদিক

 


আরো সংবাদ



premium cement