২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঈমানদারের ভালোবাসা

-

কুরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর কোনো লোক এমনও রয়েছে, যারা অন্যদের আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালোবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখে তাদের আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ওদের তুলনায় বহু গুণ বেশি। আর কতই না উত্তম হতো যদি এই জালেমরা পার্থিব কোনো কোনো আজাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিতো যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধু আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আজাবই সবচেয়ে কঠিনতর।’ (সূরা বাকারা-১৬৫)।
উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসার ক্ষেত্রে কাফের ও ঈমানদারের চিত্র তুলে ধরেছেন। কাফেররা আল্লাহর ক্ষমতা ও মর্যাদায় অন্যকে সাব্যস্ত করে এবং তাদেরকেই ভালোবাসে আর ঈমানদারগণ আল্লাহ তায়ালাকেই চরমভাবে ভালোবাসে। কারণ, আল্লাহই সব ক্ষমতার মালিক এবং তার সমকক্ষ কেউ নেই। আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তাঁর ক্ষমতা ও শক্তিমত্তার প্রমাণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেছেন, পার্থিব কোনো আজাব দেখে যদি তারা বুঝে নিত যে, আল্লাহই সর্বশক্তিমান; তাহলে কতই না উত্তম হতো। ঈমানদাররা এ বিষয়টি উপলব্ধি করেন এবং আল্লাহকে সব শক্তি ও ক্ষমতার উৎস হিসেবে মেনে নিয়ে তাকেই ভালোবাসেন। এই জায়গাটিই এই আলোচনার মূল বিষয়। বান্দা আল্লাহকে ভালোবাসলে আল্লাহ তার জবাবে কী বলেন, তিনি তাঁর প্রিয় বান্দার ভালোবাসার প্রতিদানে কী দেন, আল্লাহর প্রতি চরম ভালোবাসা প্রদর্শনের অনিবার্য ফলশ্রুতি হিসেবে বান্দা কী কী লাভ করেন, কী কী বৈশিষ্ট্য অর্জন হয়, সে সব বিষয়েই সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে এই লেখায়।
আল্লাহর একত্ববাদ, তাঁর গুণ ও ক্ষমতা এবং সমগ্র জগত সৃষ্টি ও পরিচালনায় আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী হয়ে একজন ঈমানদার যখন আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার ঘোষণা দেন, তখন আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে (রাসূল সা:কে) অনুসরণ করো, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করেন। আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।’ (সূরা আলে ইমরান-৩১)। এখানে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় ভালোবাসার মাপকাঠি, শর্ত অথবা পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। অর্থাৎ যারাই আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি করবে তাদেরকে মুহাম্মদ সা:-এর কর্মনীতি অনুসরণ করতে হবে বা তিনি যেভাবে আল্লাহকে ভালোবেসেছেন সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে।
আল্লাহকে ভালোবাসার স্বরূপ কী তা মুহাম্মদ সা: দেখিয়ে দিয়েছেন। সেটাই হবে আল্লাহকে ভালোবাসার মূলনীতি। অন্য কোনো কায়দায় আল্লাহকে ভালোবাসলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। মোট কথা, মুহাম্মদ সা:-এর পদ্ধতি অনুসরণ এবং তাঁকে সব মানুষের চেয়ে সর্বাধিক ভালো না বাসলে ঈমানদার বলে গণ্যই হওয়া যাবে না। যেমন, আনাস রা: বলেন, মুহাম্মদ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও অন্য যে কারো তুলনায় আমাকে বেশি ভালো না বাসবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
ভালোবাসা একটি পারস্পরিক বিষয়। পরস্পর থেকে প্রকাশিত কিছু চিহ্ন ও লক্ষণাদি থেকে ভালোবাসার অবস্থা বোঝা যায়। বান্দা আল্লাহকে ভালোবাসলে তার কর্মনীতি ও আচরণে অনিবার্যভাবে কিছু নিদর্শন পরিলক্ষিত হবে। আবার বান্দার ভালোবাসার জবাবে আল্লাহ তাকে কিছু দেবেন যেটা তার চিন্তাধারা ও চেতনায় ফুটে উঠবে। আর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা পোষণকারী একজন মানুষের কর্মনীতি, আচরণ, চিন্তাধারা ও চেতনায় এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠবে, যেটা হবে ঠিক মুহাম্মদ সা:-এর আদর্শের প্রতিচ্ছবি। আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসলে আল্লাহ তাঁর মাহবুব বান্দাকে প্রথমেই যে জিনিসটি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা হলোÑ তিনিও তাকে ভালোবাসা দেবেন। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে ক্ষমা নসিব করবেন। তৃতীয়ত, আল্লাহ তাকে দ্বীন-ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দান করবেন।
বুখারি শরিফের ‘কিতাবুল ইলম’ অধ্যায়ে মুয়াবিয়া রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করা হয়, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান করেন।’ অর্থাৎ তিনি ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও বুঝ লাভ করবেন। এটি আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া তথা আল্লাহর প্রিয়ভাজন হওয়ার একটি নিদর্শন। চতুর্থত, আল্লাহর ভালোবাসা লাভে যিনি ধন্য হবেন তিনি আর কাউকেই ভালোবাসবেন না। তবে, হ্যাঁ, অন্য কাউকে যদি ভালোবাসতেই হয়; যেমন পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, সম্পদ প্রভৃতিÑ তবে সেটাও হবে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসারই অংশ। বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে বুঝতে হলে একটি হাদিসের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। মুসলিম শরিফে উল্লিখিত ইমাম ইবনে বাহিলি থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালোবাসা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহর জন্যই কাউকে কিছু দেয় আবার আল্লাহর জন্যই কাউকে কিছু দেয়া থেকে বিরত থাকে, সে-ই ঈমানের দাবি পূরণ করল।’


আরো সংবাদ



premium cement