১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি প্রশান্ত আত্মা

-

[গত দিনের পর]
একজন ব্যক্তি সিরিয়া থেকে মদিনা মনোয়ারায় আসেন হজরত উমর রা: কাছে তাহিয়্যা বা পবিত্রতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে যা হজরত মুহাম্মদ সা: শিখিয়েছেন। হজরত উমর রা: জানতে চাইলেন তার কোনো আত্মীয়স্বজন আছে কিনা মদিনাতে যার জন্য তাহিয়্যা সম্পর্কে জানতে এসেছেন এখানে। সেই ব্যক্তি বললেন : আল্লাহর নামে শপথ তাহিয়্যা সম্পর্কে জানা ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই। হজরত উমর রা: ইঙ্গিত করে বললেন : হে জনগণ তোমরা যদি জান্নাতি মানুষ দেখতে চাও তবে এই ব্যক্তির দিকে তাকাও।
বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে, শিক্ষকেরাই প্রতিটি শহর-উপশহরে অবস্থান করছেন। এমনকি যদি একজন ব্যক্তি শিক্ষক থেকে দশ মাইল দূরেও থাকেন; তবে শিক্ষককে তার শহরে এসেই পড়াতে বলেন। আজকাল মানুষ জ্ঞান অর্জনে উৎসুক, তবে দশ মাইল দূরে যেতে চান না। যা হোক, যারা জ্ঞান অর্জন করতে আগ্রহী এবং দূরদূরান্তে পাড়ি জমান তারাই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হন। আর এই উপায়ে তারা দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা পান।
আপনি নিশ্চয়ই অবাক হবেন যে, কিভাবে এ দুনিয়ায় সফল হতে পারেন। যে ব্যক্তির মনে প্রশান্তি বিরাজমান, আল্লাহকে স্মরণ করেন, যদিও সামান্য লাভ হয়। তিনি একজন বিত্তশালী থেকেও উত্তম পর্যায়ে থাকবেন যিনি কিনা পেটপুরে মজার খাবার খান এবং ম্যানচেস্টারের সামনে পাউন্ড গুনতে ঘোরাঘুরি করেন অথচ তার মনে শান্তি নেই। তিনি থাকেন সর্বদাই উদ্বিগ্ন এবং অস্বাভাবিক অবস্থায়।
আল্লাহর প্রিয় বান্দার দুনিয়া থাকে অন্য রকম, কারণ তিনি দিনরাত আল্লাহর তাসবিহ্ পাঠ করেন। তিনি অবিশ্বাসীদের কাছ থেকে আলাদাভাবে বাঁচতে পারেন।
মাওলানা রুমি রা: বলেন- দুনিয়ার এই চাঁদ আমাদের জন্য নয়, কারণ অবিশ্বাসীরাও এর মাধ্যমে উপকৃত হয়। আল্লাহর বন্ধুর থাকবে এমন একটি চাঁদ যা সচরাচর দেখা যায় না। এর মাধ্যমে কি বুঝায়? ওহে চন্দ্র ও সূর্যের সৃষ্টিকর্তা আমাদের আপনার গুণগান গাওয়ার তৌফিক দিন। ওহে যিনি সূর্য ও চন্দ্রকে আলো দিয়েছেন, আমাদের অন্তরকে আপনার তাসবিহ্ পাঠের কারণে আলোকিত করে দিন, যেই আলোর শক্তি লক্ষ সূর্যের চেয়েও বেশি।
এই আলো যখন অন্তরের গহিনে প্রবেশ করে তখন সৃষ্টিকর্তার সব গুণ নিয়ে প্রবেশ করে। এটা অন্তরে লাখ লাখ সূর্যকে বহন করে। তখন সেই অন্তরে আর কোনো সূর্য বা চন্দ্রের দরকার হয় না।
মাওলানা রুমি জিজ্ঞাসা করেন- কখন আমাদের দিনের শুরু? এটা সূর্য উদয়ের মাধ্যমে হয় না। বরং যখন আমরা ফজরের নামাজে আল্লাহ তায়ালার নাম নিই এবং কুরআন তিলাওয়াত করি তখনই আমাদের দিনের সূচনা হয়। সূর্যের আলো যেখানে হচ্ছে একটি সৃষ্টি, আমরা সেখানে সরাসরি সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পৃক্ত। আমরা তাঁকে সন্তুষ্ট করতে চাই। আল্লাহর প্রেমিকের সূর্যের উত্থান ঘটে তখন, যখন আল্লাহ তাদের অন্তরে প্রবেশ করেন। যখন শত্রু মিত্র সবার কাছে সূর্য সহজলভ্য হয় তখন তা কোনো আলাদা চরিত্র প্রদান করে না।
যদি তোমাকে তোমার একজন বন্ধু এবং একজন শত্রুকে উপহার দিতে বলে, আর যদি তুমি দু’জনকেই একই উপহার দাও; বন্ধুটি বলবে : আমার সাথে কি হচ্ছে? যার জন্য আমি সবকিছু বিসর্জন দিয়েছি, সে কি আমাকে ভিন্ন ধরনের কিছু দিতে পারত না। যখন তুমি তোমার বন্ধু এবং শত্রুর পছন্দের পার্থক্য বুঝতে পারলে না, তবে তুমি আমাদের বন্ধুত্ব থেকে কি অর্জন করতে পেরেছ?
আল্লাহর অপ্রিয় ব্যক্তিরা সুন্দরী স্ত্রী, চমৎকার ব্যবসা এবং একটি মার্সিডিজ যানবাহন অর্জন করতে পারেন। যদি একজন বিশ্বাসী এসব অর্জন করে থাকেন, তবে এটা তার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দিক নয়। একজন বিশ্বাসীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আল্লাহর তাসবিহ্ পাঠ করা এবং তাঁকে খুশি করা। যা হোক, একজন ইহুদি আমেরিকান মার্সিডিজ গাড়ি চালক এবং একজন আল্লাহর প্রিয় বান্দা গাড়ি চালকের মধ্যে কি পার্থক্য? আল্লাহর প্রিয় বান্দার সাথে আছে আল্লাহ অন্যদিকে ইহুদির সাথে শূন্য যানবাহন। ইহুদিটি আল্লাহর সৃষ্টির সাথে ভ্রমণ করে আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা সৃষ্টিকর্তা এবং সৃষ্টি দুটোর সাথেই ভ্রমণ করেন।
কিছু সাধারণ মনের মুসলমান, অমুসলিমদের চাকচিক্যপূর্ণ ভবন এবং চমকপ্রদ গাড়ি দেখে হতাশ হয়ে যান। তারা এই বিষয়টাকে ভাবেন যে, আল্লাহ্ তায়ালা তাদের শত্রুদের অনেক দিয়েছেন এবং তার কাছের যে কিনা অনবরত তাসবিহ্ পাঠ করেন আর তাহাজ্জুত আদায় করেন তাকে কত সামান্যই না দিয়েছেন। আসলে আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে এমন কিছু দিয়েছেন যা আপনি চোখ খুলেই দেখতে পাচ্ছেন।
যদি আপনি কোনো শিশুকে পঞ্চাশ পাউন্ডের বিনিময়ে একটি মিষ্টান্ন অফার করেন সে নির্দ্বিধায় পঞ্চাশ পাউন্ড দিয়ে দিতে রাজি হবে কারণ সে এই বিষয়টা সম্পর্কে অজ্ঞ যে পঞ্চাশ পাউন্ডের বিনিময়ে সে আরো অনেক মিষ্টান্ন অর্জন করতে পারত। আমরা ঠিক এই শিশুটির মতোই অজ্ঞ। আমাদের আল্লাহকে স্মরণ করার এবং মান্য করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমরা হাহুতাশ করতে থাকি। যেই আল্লাহকে পেয়েছে তার কখনো কোনো হাহুতাশ থাকে না। এমনকি যে আল্লাহকে অর্জন করেছে তাঁর কোনো অনুতাপ বা হাহাকারের অভিজ্ঞতা থাকে না।
“ ... যদি তুমি আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাও, তাহলে তার সব কিছুই আমি হয়ে যাবো, তার আকাশ আমার, পৃথিবী আমার।/ যদি তুমি আমার অস্তিত্ব খুঁজে না পাও, তাহলে কোথাও আমাকে খুঁজে পাবে না। ”
একটি কবিতা বলছি :
আপনি দিয়েছেন পানির নিয়ামত, আর বালুকা দিয়েছেন শত্রুদের জন্য।
কে এই শত্রু? আপনি ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং অবিশ্বাসীদের কি দিয়েছেন? আপনি তাদের দিয়েছেন পানি আর বালুকা, একজন মহিলা বালুর তৈরি, কাবাবও বালুর তৈরি, বিরিয়ানিও বালুর তৈরি, একটি বাড়িও বালুর তৈরি এবং একটি যানবাহনও বালুর তৈরি। তারা এসব কিছু নিয়েই সন্তুষ্ট। তারা এসব বালু নিয়েই খুশি কিন্তু তাদের সাথে আকাশ এবং পৃথিবীর ¯্রষ্টার কোনো সম্পর্ক নেই।
আমার অন্তর এ রকম কবিতা থেকে আনন্দ উপভোগ করে। যাকে আল্লাহ তাঁর ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন, আল্লাহর নাম উচ্চারণে রয়েছে তার কাছে পরমানন্দের অভিজ্ঞতা।
অনুবাদ : ফাতিমা আজিজা
এরপর আগামীকাল


আরো সংবাদ



premium cement
বেসিক ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন চট্টগ্রামের রাজনীতি ও ক্রীড়াঙ্গনের প্রিয়মুখ ছিলেন দস্তগীর চৌধুরী : ডা: শাহাদাত মাতাল তিন তরুণী ডিবির হেফাজতে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা বনানীতে চীনের নতুন ভিসা আবেদন কেন্দ্র চালু চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি রোববার রাজশাহীতে ভুয়া তিন সেনা সদস্য গ্রেফতার চট্টগ্রামে চলতি বছরেই ২৫ ভাগ ভাটায় ব্লক ইট তৈরি নিশ্চিত করতে হবে যাদুকাটা নদীর চর থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তির ২য় মেধা তালিকা প্রকাশ জামালপুরে জামাইয়ের কুড়ালের আঘাতে শ্বশুর নিহত

সকল