১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রিজিক কেন সঙ্কীর্ণ বা প্রশস্ত হয়

-

রিজিক মহান আল্ল­াহর অন্যতম বড় নিয়ামত। আর আমাদের সব ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্তও হালাল রিজিক। হালাল রিজিকের জন্যই মানুষ পরিশ্রম করে। মানুষ একসময় ভালো ও পর্যাপ্ত রিজিক ও নিয়ামত ভোগ করলেও হঠাৎ কোনো এক অদৃশ্য কারণে রিজিক কমে যেতে শুরু করে। কিন্তু কেন মানুষের রিজিক কমে যায়?
মানুষ রিজিক কমে যাওয়ার কারণে হতাশ হয়, কারণ খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো কারণও খুঁজে পায় না। অথচ সে গোনাহের কাজ ছাড়ে না। অন্যায় পথে চলা বন্ধ করে না। অন্যায়-অপরাধের কথা চিন্তাও করে না। এ অপরাধ বা অন্যায়ের কারণেই মানুষের রিজিকের বরকত কমে যেতে থাকে। হাদিসে রিজিক কমে যাওয়ার প্রকৃত কারণ বলা হয়েছে। তা হলোÑ হজরত সাওবান রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্ল­াহ সা: বলেছেন, ‘দোয়া ব্যতীত আর কোনো কিছুই ভাগ্য পরিবর্তন করে না, নেককাজ ব্যতীত আর কিছু মানুষের আয়ু (হায়াত) বাড়ায় না এবং কৃত গোনাহের কারণেই বান্দাহ জীবিকা (রিজিক) থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, মানুষ যখন গোনাহ করতে থাকে তখনই রিজিক তথা জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়। মানুষের রিজিক কমে যায়, যা মানুষ অনুমান করতে পারে না।
গোনাহমুক্ত জীবনের জন্য প্রয়োজন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি প্রয়োজন। গুনাহ হয়ে গেলে অবিলম্বে আল্ল­াহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তবেই আল্ল­াহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। রিজিক তো সঙ্কীর্ণ হবে না উপরন্তু আল্লাহ তার জন্য সব বরকতের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেবেন। রিজিকে প্রশস্ততা দান করবেন। যেভাবে আল্ল­াহ তায়ালা কুরআন পাকে ক্ষমা প্রার্থনার ফজিলত ঘোষণা করেছেন, ‘আমি বলেছিÑ তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল। (তোমরা তা করলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। (সূরা নুহ : ১০-১২) ক্ষমা প্রার্থনার দ্বারা আল্লাহ উল্লি­খিত ছয়টি নেয়ামতÑ গোনাহ মাফ, উত্তম রিজিকের জন্য বরকতের বৃষ্টি, অসহায়কে ধন-সম্পদ, নিঃসন্তান ব্যক্তিকে সন্তান-সন্তুতি, সবুজ উদ্যান এবং উপকারি নদী-নালা দান করবেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত গোনাহের কাজ ছেড়ে দেয়া। তবেই রিজিকে বরকত লাভ হবে। এ জন্য সব সময় আল্ল­াহর কাছে তাওবাহ-ইসতিগফার করা জরুরি। ছোট বাক্য থেকে সাইয়েদুল ইসতিগফার পর্যন্ত সবগুলো ইসতিগফার বেশি বেশি পড়ার অভ্যাস রফত করতে হবে। আর তা হলোÑ ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। অর্থÑ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসূলুল্ল­াহ সা: এ ইসতিগফারটি তিনবার পড়তেন।’ (মিশকাত)
‘আস্তাগফিরুল্ল­াহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।’ অর্থÑ আমি আল্ল­াহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকেই ফিরে আসছি।
নিয়ম : এ ইসতিগফারটি প্রতিদিন ৭০-১০০ বার পড়া। রাসূলুল্ল­াহ সা: প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতিগফার করতেন। (বুখারি)
‘রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়া ইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুর রাহিম।’ অর্থÑ হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।
নিয়ম : রাসূলুল্ল­াহ সা: মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
‘আস্তাগফিরুল্ল­া হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।’ অর্থÑ আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।’
নিয়ম : দিনের যেকোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতিগফার করা। হাদিসে এসেছেÑ এভাবে তাওবাহ-ইসতিগফার করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত) সাইয়িদুল ইসতেগফার পড়াÑ আল্ল­াহুম্মা আন্তা রাব্বি লা ইলাহা ইল্ল­া আন্তা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহিদকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগিফরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা।’
অর্থÑ হে আল্ল­াহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দাহ, আমি যথাসাধ্য তোমার সাথে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।
নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতিগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতিগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা, হাদিসে এসেছেÑ যে ব্যক্তি এ ইসতিগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে। (বুখারি)
আল্ল­াহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। কৃত গোনাহের জন্য বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতিগফার করার তাওফিক দান করুন। তাওবাহ-ইসতিগফারের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করে রিজিকের বরকতসহ কুরআন-সুন্নায় ঘোষিত যাবতীয় নিয়ামত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড

 


আরো সংবাদ



premium cement
মোরেলগঞ্জে সৎভাইকে কুপিয়ে হত্যা দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো? এ দেশের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান পিছিয়েছে ডি মারিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

সকল