১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলের তাৎপর্য

-

ঈমানদার মানুষ ভালো ও কল্যাণকর বিষয় অর্জনের জন্য সব ব্যাপারে নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করবে। সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবে আর ফলাফলের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করবে। তার প্রতি আস্থা ও দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে। আর মনে বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন ফলাফল তাই হবে। আর তাতেই রয়েছে চূড়ান্ত বিচারে মুমিনের জন্য কল্যাণ তথা বরকত এবং শেষ পরিণামে জান্নাত। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এটাই তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ-এর মূল কথা। তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো : আল্লাহর উপর ভরসা করা। ইসলামে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি একটি ইবাদত। তাই আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপর তাওয়াক্কুল করা যায় না। মৃত বা জীবিত কোনো ওলি, নবী-রাসূল, পীর-বুজুর্গের উপর তাওয়াক্কুল করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত ।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা তালাক : ৩) রাসুল সা: বলেন, আমার উম্মত থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে । তাদের অন্যতম গুণ এই যে, তারা আল্লাহর উপর ভরসা করবে। (বুখারি : ৫৭০৫ মুসলিম : ২১৮, মুসনাদে আহমাদ ১/৪০১)
তাওয়াক্কুলের নীতি অবলম্বনকারী মুমিন কখনো হতাশ হয় না। বিপদ-মুসিবত, যেকোনো দুর্বিপাক, দুর্যোগ, সঙ্কটে আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা রাখে। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল হলো তাওহিদের একটি অংশ। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে অভিন্ন প্রেক্ষাপটে তাওয়াক্কুল অবলম্বন নিয়ে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।
এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, তুমি নির্ভর করো তাঁর উপর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই এবং তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। তিনি তাঁর বান্দাহদের পাপ সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত।’ (সূরা আল ফুরকান : ৫৮)
তাফসিরে ফাতহুল কাদিরের গ্রন্থকার বলেন, ভরসা দুই প্রকার এক. এমন বিষয়ে ভরসা করা যা আল্লাহ ছাড়া কেউ দিতে পারে না যেমন সন্তান দেয়া, বিপদ থেকে মুক্তি দেয়া ইত্যাদি যা আল্লাহ কোনো বান্দাহর হাতে সাময়িকের জন্যও দেননি। এ সব ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে, অন্য কারো উপর ভরসা করলে শিরক হবে। দুই. এমন বিষয় ভরসা করা যা সাময়িকভাবে বান্দাহকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যেমন টাকা-পয়সার সহযোগিতা দেয়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে ভরসা করা যাবে। সেই দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রব্ব হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি স্বীয় আরশের উপর সমাসীন হন। তিনি দিনকে রাত দিয়ে আচ্ছাদিত করেন যাতে ওরা একে অন্যকে অনুসরণ করে চলে ত্বরিত গতিতে; সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্ররাজি সবই তাঁর হুকুমের অনুগত। জেনে রেখো, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই, আর হুকুমের একমাত্র মালিকও তিনি, সারা জাহানের রব্ব আল্লাহ হলেন বরকতময়।’ (সূরা আরাফ : ৫৪)
মুমিনের পরিচয় বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে ওঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে।’ (সূরা আল আনফাল : ২) এই আয়াতে মুমিনদের যে চারটি গুণের কথা বলা হয়েছে তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তারা বাহ্যিক উপায় উপকরণ অবলম্বন করে আল্লাহর উপর ভরসা করবে।
এর তাফসিরে ইবন কাসির রহ: বলেন, আল্লাহর উপর ভরসা ঈমানের বন্ধন। অতএব মুমিনের উচিত সব কাজে বাহ্যিক উপায় উপকরণ অবলম্বন করে আল্লাহর উপর ভরসা করা। যেমনটা ভরসা করেছিলেন ইবরাহিম আ: ও মুহাম্মদ সা:। ইবন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবরাহিম আ:কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হলো, তখন তিনি বললেন, হাসবুনাল্লাহু ওয়া-নিমাল ওয়াকিল (আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি উত্তম অভিভাবক)। আর লোকেরা যখন মুহাম্মদ সা: ও তাঁর সাথীদের বলল, (শত্রু বাহিনীর) লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হচ্ছে, তাই তোমরা তাদের ভয় করো, তখন তাদের ঈমান বেড়ে গেল এবং তারা বলল, হাসবুনাল্লাহু ওয়া-নিমাল ওয়াকিল (আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট তিনি উত্তম অভিভাবক)। (বুখারি)
উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় হলোÑ এক. আমরা জানতে পারি যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা মুমিনের উপর ওয়াজিব। দুই. মুসলিমদের অস্তিত্বের সীমাহীন সঙ্কটকালেও ভীত-বিহ্বল না হয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিন. আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান ও মজবুত তাওয়াক্কুল নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। চার . কেউ যদি এ অবস্থায় আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল করতে পারে, তাহলে তাদের জন্য রয়েছে নি’আমত, প্রতিদান ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। যেমন লাভ করেছিলেন হামরাউল আসাদ অভিযানে অংশগ্রহণকারী সাহাবিরা। এ ধরনের আগ্রাসন, সঙ্কট ও বিপদে যাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়, আল্লাহর প্রতি আস্থা ও তাওয়াক্কুল বেড়ে যায়।
পাঁচ. তাওয়াক্কুল তো এমন সত্তার উপর করা উচিত, যিনি চিরঞ্জীব। তিনি হলেন আল্লাহ। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপর তাওয়াক্কুল করা জায়েজ নয়। কেননা তাওয়াক্কুল একটি ইবাদত। ছয়. আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রাখা মুমিনদের একটি বৈশিষ্ট্য। সাত. আল্লাহ তাঁর রাসূল সা:-কেও তাঁর উপর তাওক্কুল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আট. আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন। সুতরাং আল্লাহর ভালোবাসা লাভের একটি কার্যকর উপায় হলো তাওয়াক্কুল। নয়. আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলকারীর সাহায্যের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। দশ. সাধ্যমতো বাহ্যিক উপায় উপকরণ অবলম্বন করার সাথে সাথে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। বাহ্যিক উপায় উপকরণ অবলম্বন না করে শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই তাওয়াক্কুলের উপায় উপকরণ অবলম্বন না করে ভরসা করা ভুল হবে।
আজকের বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা নামক মহাবিপদ আমাদের উপর আরোপিত হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক বাহ্যিক উপায় উপকরণ অবলম্বন করে অর্থাৎ অকল্যাণ প্রোটেক্ট করে আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং এই দুর্যোগ, সঙ্কট, মুসিবত থেকে রক্ষায় আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা রেখে সাহায্য কামনা করা। বেশি বেশি দান করা কেননা দান ও অপর ভাইকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে আল্লাহ এর বিনিময়ে মুসিবত উঠিয়ে নেন।
লেখক : অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া


আরো সংবাদ



premium cement
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৭ ফিট তামিমকে যেকোনো ফরম্যাটের দলে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক বিকেবি ও রাকাব একীভূতকরণের প্রতিবাদে রাজশাহীতে মানববন্ধন অপহৃত চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার রামেক আইসিইউতে, গ্রেফতার ২ বাংলাদেশের নতুন স্পিন কোচ পাকিস্তানের সাবেক তারকা ক্রিকেটার মান্দায় বিদ্যুৎপৃষ্টে দর্জি ব্যবসায়ীর মৃত্যু সমর্থকদের মাতামাতি করতে মানা করলেন শান্ত বান্দরবানের কেউক্রাডং পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান : আটক ৮, অস্ত্র উদ্ধার স্বাধীনতা সূচকে ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম নাটোর পৌরসভা কার্যালয়ের ভিতরে দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত কাঁঠালিয়ায় মাঠে ছাগল আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কিশোরে মৃত্যু

সকল