২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মন পরিবর্তনের মুহূর্তগুলো : সবর(চার)

-


[বিশ্বখ্যাত জিম্বাবুয়ের ইসলামিক স্কলার মুফতি ড. ইসমাইল মেন্কের মোটিভেশনাল মোমেন্টস সিরিজের দ্বিতীয় বই এটি। মুফতি মেন্কের ৫০০ সর্বাধিক অনুপ্রেরণামূলক উক্তি এবং উদ্ধৃতি এই সঙ্কলনে স্থান পেয়েছে। মুফতি মেন্কের ক্ষমতায়িত শব্দ প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের মধ্যে আশা জাগায়, পথ দেখায়। তার উক্তিগুলো জীবনের গভীরে রেখাপাত করে, শক্তিশালী বার্তা দেয়, ইতিবাচক পরিবর্তনে প্রেরণা জোগায়। মুফতি মেন্কের এই বইটির দ্বিতীয় পর্ব হলো ‘সবর’। এর চতুর্থ অংশটি প্রকাশ হচ্ছে আজ। অনুবাদ করেছেন মাসুমুর রহমান খলিলী।]

উদ্বেগ জীবনেরই একটি অংশ। মানুষ হিসেবে ভাবনাচিন্তা থাকা আমাদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো চিন্তা ও উদ্বেগকে আমাদের ভালোর পথে বাধা হতে না দেয়া।
অভিযোগ করার আগে, আমরা যেন ভুলে না যাই যে, আমরা এই পৃথিবীতে অনেকের চেয়ে ভালো আছি। আমাদের সংগ্রামগুলো তাদের তুলনায় অনেক ছোট। এ জন্য তাঁর শোকর আদায় করি!
আপনি যখন আবেগি হন, তখন অন্যের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না, কারণ এ অবস্থায় তারা যা বলছেন আপনি তার ভুল ব্যাখ্যা করার সম্ভাবনা থাকতে পারে। এটি করতে আপনার শান্ত, যুক্তিশীল ও প্রজ্ঞাপূর্ণ মন প্রয়োজন।
সফল না হওয়াটা আপনাকে কিন্তু ব্যর্থ বানায় না। এটি আপনাকে শিক্ষা দেয় এবং স্মরণ করিয়ে দেয় যে সর্বশক্তিমানের পরিকল্পনা সর্বদা বিরাজমান হয়। তিনি সঙ্কেত পাঠিয়ে আপনাকে পুনর্নির্দেশনা দেবেন!
যখন কেউ অসভ্য ও নির্দয় শব্দ উচ্চারণ করে, তখন প্রতিশোধ নেবেন না। আপনি সর্বোত্তম সম্ভাব্য উপায়ে সাড়া দেয়ার শক্তি চান সর্বশক্তিমানের কাছে।
কঠিন সময় সহ্য করে যান। এরপর আমরা কিছু অর্জন করব। এটি আপাত পছন্দ নাও করতে পারি তবে আমরা এর মাধ্যমে অভিজ্ঞতা এবং ধৈর্য অর্জন করি। এটি আমাদের চরিত্রের গঠন ও বিকাশে সাহায্য করে।
জীবনে আপনি যে পরীক্ষার মুখোমুখি হন না কেন, ধৈর্য ও প্রার্থনা থেকে কখনোই বিরত থাকবেন না। এ দু’টি হলো সেরা প্রতিষেধক। সব সময় অবিচল থাকুন। তিনি অবলোকন করছেন!
আপনার চরিত্রের আসল পরীক্ষাটি হয় যখন পরিস্থিতি আপনার পছন্দমতো চলবে না তখন। তখন কি আপনি একজন দয়ালু, যতœশীল এবং ভালো মনের মানুষ হিসেবে থাকবেন?
যদি আপনি সর্বশক্তিমানের কৃপা উপভোগ করেন তবে আপনাকে অবশ্যই তাঁর পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এটাই হলো বাস্তবতা। আপনি যখন অন্যের আশীর্বাদকে ঈর্ষা করেন, তখন তাদের পরীক্ষাগুলোকেও আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে।
অনেকে মনে করেন নীরব থাকা দুর্বলতার প্রকাশ। এটি ঠিক নয়। এটি হলো আপনার ভেতরের শক্তি। এটি আমাদের শুনতে শেখায় এবং আমাদের বলে যে মাঝে মাঝে চুপ থাকাই সেরা!
সর্বশক্তিমান আমাদের অশ্রু দেখেন এবং সর্বদা আমাদের প্রার্থনা শোনেন। প্রার্থনা করুন যেন তিনি আমাদের শক্তিশালী করেন যাতে আমরা পরম ধৈর্য নিয়ে সব পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারি।
জীবনে, যারা আপনাকে টেনে নামাতে চান এমন কেউ কেউ সব সময় থাকবেন। তাদের সুযোগ দেবেন না। মাথা উঁচু রাখুন। ফোকাস ঠিক রাখুন। সর্বশক্তিমান সব কিছু জানেন।
আপনি কতটা পরিপক্ব বয়সের সাথে তার সম্পর্ক খুব কম রয়েছে। এটি আপনার অন্তরের শক্তি। আপনি যত বেশি সহ্য করেছেন ততই আপনি দৃঢ় এবং পরিপক্ব হন।
চিন্তার মধ্যে ডুবে যাবেন না। এটি আপনার সবকিছু ছিনিয়ে নেবে, ছেড়ে দেবে- পরিত্যক্ত এবং প্রাণহীন করে। তাই যাই ঘটুক না কেন, নিজের ভেতরের শান্তি বজায় রাখুন।
এই জীবনটি বিরক্ত, রাগান্বিত, তিক্ত এবং ঘৃণাপূর্ণভাবে যাপনের জন্য খুবই সংক্ষিপ্ত। প্রতিটি নতুন দিন সর্বশক্তিমানের উপহার। এটিকে ভালোভাবে কাটান।
আপনার একটি কঠিন সময় চলমান থাকতে পারে। আপনি কতক্ষণ নিজেকে ধরে রাখতে পারবেন তা জানেন না। মনে রাখবেন, খারাপ দিনগুলো চিরকাল থাকে না। ধৈর্য ধরে রাখুন।
কখনো কখনো, আপনি যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তা এতটা অসহনীয় বলে মনে হয় যে, তখন এমন অনুভব করেন যেন আপনি আর সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন না। এতে নিজের ওপর রাগ করবেন না। কোনো কিছুই স্থায়ী হয় না।
আপনার চার পাশের হইচইকে উপেক্ষা এবং অবজ্ঞা করতে শিখুন। আপনার মনকে শান্তিতে রাখুন। আপনি যদি তাঁর নিকটবর্তী হতে চান তবে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা তৈরি করুন।
ধৈর্য ধারণের চর্চা করুন। মন খারাপ করে আপনি আপনার লক্ষ্যগুলো আরও দ্রুত অর্জন করতে পারবেন না! সবকিছুর নির্দিষ্ট সঠিক সময় আছে। প্রতিটি বিলম্বের মধ্যে আশীর্বাদ আছে।
যখন আপনি যা চান তা পান না এবং আপনি তাঁর উপর বিশ্বাস রাখতে কষ্টকর বোধ করেন, তখন আপনার প্রবলভাবে ধৈর্য ধারণ করা দরকার। তিনি আপনাকে বড়ভাবে পুরস্কৃত করবেনই!
আপনার শক্তি জয় থেকে আসে না। এটি আসে আপনার সংগ্রাম এবং কষ্ট থেকে। সে কারণেই তিনি আপনাকে যত বেশি ভালোবাসেন, তত বেশি পরীক্ষা করেন!
কষ্টের পথ থেকে পালাবেন না। তিনি কোনো একটি কারণে আপনার পথে এসব দিয়ে রেখেছেন। তাই গোলাপ এবং কাঁটাকে পাশাপাশি জড়িয়ে নিন। এভাবেই আপনি বিকশিত হবেন।
আপনি যে ফলাফল চান তা না দেখলে হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ জন্য সময়মতো একটি পদক্ষেপ নিন। একটি দিন অপেক্ষা করুন। আপনি সেখানে যেতে পারবেন।
সর্বশক্তিমানের কাছে আপনার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। কিভাবে এবং কখন বিষয়গুলো প্রকাশ পাবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠা বন্ধ করুন। তিনি এর সবকিছু দেখবেন। আপনার কাজ হলো তাঁকে বিশ্বাস করা।
আগামী দিন : মন পরিবর্তনের মুহূর্তগুলো : সবর : পাঁচমুফতি ড. ইসমাইল মেন্ক


আরো সংবাদ



premium cement