দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি
- মেহেদুল হাসান আক্কাছ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
- ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৬:৫৮
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। একইসাথে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধিতে ৭ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপৎসীমার মাত্র ১৫ সেন্টিমিটার নিচে। এ অঞ্চলে পদ্মার পানির বিপৎসীমা স্তর ৭ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার।
গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি একটানা বেড়েই চলেছে। একাধারে পানি বাড়তে থাকায় এ অঞ্চলের মানুষ বাড়িঘর ও ফসলি জমি ভাঙন আতঙ্কে রাত দিন প্রহর গুনছে। ভাঙন রোধে সরকারি কোনো উদ্দ্যোগ না থাকায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ব্যক্তি উদ্দ্যোগে ভাঙন রোধে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। এতে করে তাদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে দৌলতদিয়ার কয়েকটি ফেরিঘাট ও এর পার্শ্ববর্তী সরকারি বেসরকারি স্থাপনা ও কয়েক শ’ পরিবার ও তাদের ভিটেমাটিসহ ফসলি জমি। অথচ সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ও স্থাপনা সরিয়ে নেয়ারও সুযোগ নেই।
জানা গেছে, দৌলতদিয়াঘাট এলাকা ভাঙন রোধে সরকার মহাপ্রকল্প গ্রহণ করেছে। তবে ওই প্রকল্পে তিন ধাপে ব্যায় বৃদ্ধি পেলেও তিন বছরেও কাজ শুরু করাই সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ওই প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা ধরা হলেও কয়েক দফায় নকশা পরিবর্তনে ব্যয় বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা। দৌলতদিয়ায় ছয় কিলোমিটার ও পাটুরিয়া দুই কিলোমিটার মিলে দুটি ঘাটে মোট আট কিলোমিটার নদী রক্ষা বাধসহ আধুনিক নৌ-বন্দরের আওতায় আনতে বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষ ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করেছে। আড়াই বছর আগে নৌ-বন্দরের জন্য দৌলতদিয়ায় প্রায় ৩০ একর জমি ওই কতৃপক্ষ অধিগ্রহণ করে। এরপর থেকে ওই জমির মালিকদের নতুন ভবন তৈরি বা অপসারণ করা এমনকি কোনো গাছপালা কর্তনেও নোটিশের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। অথচ আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও ভূমি অধিগ্রহণের টাকা বুঝে পায়নি জমির মালিকরা। পাশাপাশি নদী রক্ষা বাঁধও নির্মিত হয়নি।
গত একদশকে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের নয়টি মৌজার প্রায় ২০ হাজার পরিবার তাদের ভিটেমাটি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি হারিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছে। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছে মহাসড়ক ও বেড়িবাঁধের গায়ে। বর্তমানেও এক চতুর্থাংশ ঘাট পদ্মার পেটে গেলেও আশ্বাস ছাড়া কোনো কাজ হয়নি দৌলতদিয়া ঘাটে।
গত কয়েক বছর বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে ঘাট পয়েন্টে ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেললেও নদী শাসন প্রকল্পের কাজ চালু হওয়ার কথা থাকায় তা এখন আর ফেলা হচ্ছে না।
সরেজমিন শুক্রবার ও শনিবার দুপুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৫,৬,৭ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার ছাত্তার মেম্বর পাড়ায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এখানে স্থানীয় সমাজ সেবক ও শ্রমিক নেতা তোফাজ্জেল হোসেন তপু সরদারের আর্থিক সহায়তায় স্থানীয়রা প্লাস্টিকের বস্তায় বালুমাটি ভরে নাদীর পাড়ে ফেলে ভাঙন ঠেকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এ ছাড়া ৪ নম্বর ফেরিঘাটে একটি মসজিদ, লঞ্চঘাট এলাকা, শাহাদত মেম্বর পাড়া, ঢল্লা পাড়া, ইদ্দিস মিয়ার পাড়া, বদন মৃধার পাড়ার সহস্রাধিক পরিবার ও হাজার হাজার একর আবাদি অনাবাদি জমি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ সময় ভুক্তভোগী ছাত্তার মেম্বর পাড়ার বাসিন্দা আ: বারেক, আক্কাস আলী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ, মোফাজ্জেল হোসেন তপু সরদার বলেন, বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষ প্রায় তিন বছর আমাদের জমিজমা অ্যাকওয়ার করে নোটিশ দিয়েছে। আমাদের বাড়িঘর গাছপালাসহ ক্ষতিপূরণ দিয়ে ভেঙে দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। এখন আমরা ভাঙনের মুখোমুখি। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঘরবাড়ি সরাতেও পারছি না। হয়ত নদীতে সব চলে যাবে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানান, এখানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট আধুনিকায়নে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাস হয়ে এলে ভুক্তভোগীদের টাকা পরিশোধ করে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।
বিআইডব্লিউটি-এর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা দৌলতদিয়া ঘাট পরিদর্শন কালে বলেন, আমাদের ইনিশিয়ালি এই প্রকল্পের প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট ছিল। কিন্তু এখন নতুন করে আবার সমীক্ষার প্রয়োজন। জমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। জমি নেয়ার আগে অবশ্যই ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা