বসতভিটা বিক্রি করে শ্বশুরবাড়িতে ছেলে, দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা
- সখীপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা
- ০২ জুলাই ২০২৪, ১৬:২৩
‘আমি অসহায় মানুষ। আমার কেউ নেই। এই বৃদ্ধ বয়সে আমি কুনু (কোথায়) যামু। আমার যাওয়ার জায়গা নেই। তোমরা আমার জায়গা উদ্ধারের ব্যবস্থা কইরা দেও বাবা। এই ভিটা আমার স্বামীর বাড়ি, এইডা আমার বাড়ি।’ কথাগুলো বলতে বলতে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালমেঘা গ্রামের ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ নারী বাছিরন।
তিনি আরো বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বার ও নেতারা কেউ দোষীদের ভিড়াইতে পারে না। তাইলে কি দেশে আইন নেই, বিচার নেই। আমি কি আমার স্বামীর ভিটাডা ফেরত পামু না?’
ওই নারীর ঘরসহ বসতভিটার ছয় শতাংশ জমি গোপনে বিক্রি করেছেন তার ছেলে মোহাম্মদ বাছেদ মিয়া। শেষ বয়সে নিজের একমাত্র মাথাগোঁজার ওই জমি ফিরে পেতে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তার।
উপজেলার কালমেঘা সুবহান মার্কেট এলাকার মরহুম খবরুদ্দিনের স্ত্রী বাছিরনের ওই বসতভিটা প্রায় ছয় মাস আগে তার ছেলে বাছেদ মিয়া গফুর নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। পরে বৃদ্ধ মা ঘর-বাড়ি হারিয়ে উপায়ন্তর না দেখে গ্রাম আদালতে সন্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। মীমাংসার জন্য গ্রাম আদালত অভিযুক্ত বাছেদকে হাজির হওয়ার জন্য পরপর তিনটি নোটিশ দেয়। দ্বিতীয় নোটিশে অভিযুক্ত বাছেদ হাজির হন। পরে গ্রাম আদালতে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে ছেলে আর হাজির না হওয়ায় গ্রাম আদালত ওই বৃদ্ধ নারীর পক্ষে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করে।
স্থানীয়রা জানায়, ওই বৃদ্ধ নারীর সন্তান বাছেদ মায়ের ভরণপোষনও করেন না। বাছেদ মিয়া গফুর নামের যে ব্যক্তির কাছে বসতভিটাটি বিক্রি করেছেন, তিনি পেশায় সিএনজিচালক এবং ওই এলাকায় তার রয়েছে চারটি বাড়ি।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য অভিযুক্ত বাছেদ মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
ওই ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (ইউপি) মোশারফ খান বলেন, ‘বিষয়টি মীমাংসার লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওই বয়স্ক নারীর ছেলে বাছেদ এবং ওই জমি ক্রয়কারী গফুর আমাদের কারো কথা শুনছে না।’
বহুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একাধিকবার বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছি, কিন্তু বাছেদ ও গফুর কারো কথা শুনেন না। গফুর নানারকম অসামাজিক কার্যকলাপেও জড়িত। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে এই বৃদ্ধ নারীর ন্যায়বিচার আশা করি এবং ওই কুলাঙ্গার সন্তান বাছেদ ও সমাজের চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারী গফুরেরও শাস্তি চাই।’
বহরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরকার নুরে আলম মুক্তা বলেন, ‘ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক। জমির মালিক ওই বয়স্ক নারী। তার ছেলে না জানিয়ে বিক্রি করেছেন এবং যিনি ক্রয় করেছেন তিনিও একরোখা প্রকৃতির মানুষ।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা