কিশোরগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু, সংবাদ সম্মেলনে শাস্তি দাবি
- কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
- ২২ জুন ২০২৪, ১৫:৩১
কিশোরগঞ্জ শহরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় সামীম ইয়াসার আফফান নামে সাড়ে চার বছরের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার শিশুটির শোকার্ত পরিবার ও এলাকাবাসী অভিযুক্ত দুই চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে।
শিশু সামীম ইয়াসার আফফান গাইটাল রাকুয়াইল এলাকার সারওয়ার এ জাহান উপলের ছেলে।
আফফানের বাবার অভিযোগ, তার ছেলে ঠাণ্ডা ও গলা ব্যথায় আক্রান্ত হলে গত ২৪ এপ্রিল তাকে শহরের মেডিল্যাব হেলথ সেন্টারের নাক, কান ও গলা রোগের চিকিৎসক মুহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম সুমনের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসক পরের দিন শিশুটির দু’টি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। এর মধ্যে ছিল এক্স-রে, রক্তের গ্রুপ ও ব্লিডিং টাইম-ক্লটিং টাইম (বিটিসিটি) নির্ণয়।
রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক তৌফিক সুমন ও ওই ক্লিনিকের এনেস্থেশিয়া চিকিৎসক মো: আবু তাহের মিয়া শিশুর বাবা সারওয়ার-এ-জাহানকে তার ছেলের অ্যাডিনয়েড টনসিল অপারেশনের পরামর্শ দেন। তা না হলে শিশু আফফানের চরম ক্ষতি হবে বলে ভয় দেখান। ওই দিন রাত ১০টায় দুই চিকিৎসক শিশু আফফানের অপারেশন করেন। অপারেশনের পর শিশুটির চরম শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। যার ফলে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হয়। পরের দিন শিশু আফফানের শ্বাসকষ্ট প্রকট আকার ধারন করলে শিশুটিকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে শিশুটির মুমূর্ষ অবস্থা দেখে ভর্তি নেয়া হয়নি। পরবর্তীতে শিশুটিকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আফফানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে বলেন, শিশুটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ অবস্থায় এত ছোট শিশুর অপারেশনের সিদ্ধান্ত দায়িত্বশীল কোনো চিকিৎসক নিতে পারেন না। যারা শিশুটির অপারেশন করেছেন তারা ভুল করেছেন।
দীর্ঘ ২১ দিন ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিআইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শিশুটি গত ১৭ মে মারা যায়।
গতকাল শনিবার দুপুরে শহরের টেনিস ক্লাব সংলগ্ন দেওয়ানী আদালত ভবনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন শিশুটির বাবা সারওয়ার-এ-জাহান। এতে তিনি এসব অভিযোগ তুলেন।
তিনি বলেন, ‘উল্লেখিত ডাক্তারদের ভুল এবং ত্রুটিপূর্ণ অপারেশনের জন্য আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। যা হত্যার শামিল। আমার মতো আর কোনো বাবা যেন ভুল চিকিৎসার কারণে সন্তান হারা না হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি চিকিৎসক তৌফিকুল ইসলাম সুমন এবং ডাক্তার আবু তাহের মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা গেছে, এ বিষয়ে শিশুটির পরিবার কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন বরাবরে গত ২৩ মে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে সাত কার্য দিবসের মধ্যে ওই দুই চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল দাবি করা হয়। কিন্তু সিভিল সার্জন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে শিশুর বাবা ছাড়াও পরিবারের লোকজন, এলাকাবাসী ও শহরের বেশ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে, এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতর গত ১১ জুন তদন্ত কার্যক্রম করতে একটি চিঠি দেয় কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো: হেলাল উদ্দিনকে।
তিনি বলেন, ‘নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপককে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত দুইজন চিকিৎসকের মধ্যে অ্যানেস্থসিয়া চিকিৎসক মো: আবু তাহের মিয়া হজে গিয়েছেন। অভিযুক্ত দেশের বাইরে থাকায় আমরা তদন্ত কার্যক্রমের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য গত ১৩ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দিয়েছি।
অভিযুক্ত দেশে এলেই তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর পদবি উল্লেখ করে যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে তারা সার্বিক বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন দিবে। এ ব্যাপারে আমার কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ার কিছু নেই।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা