১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

‘কাম না করলে তো ভাত জুটবো না, তাই রোইদের মধ্যেই কাম করি’

- ছবি : নয়া দিগন্ত

বৈশাখ মাস, তীব্র তাপদাহ চলছে। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না। দেশের বিদ্যালয়গুলো ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকে গরমের কারণে স্ট্রোক করছে। তীব্র গরমে অনেকের ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগবালাই হচ্ছে। এইসব কিছু উপেক্ষা করে পেটের দায়ে প্রচণ্ড রোদ মাথায় নিয়েই সখীপুরের পশ্চিমাঞ্চলে বোরো ধান কাটছে কৃষি শ্রমিকরা। রোদ হোক বা বৃষ্টি, তাদের কাজে কোনো বিরতি নেই। এ সময় তারা বলেন, ‘কাম না করলে খামু কেমন কইরা, কাম না করলে তো পেটে ভাত জুটবো না, তাই এই প্রচণ্ড রোইদের মধ্যেই কাম করি।’

সখীপুরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চারদিকে শুধু কাঁচাপাকা ধানের রঙিন ঝিলিক আর মৌ মৌ ঘ্রাণ। সপ্তাহখানেক আগ থেকেই সখীপুরের পশ্চিমাঞ্চলে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। তবে তীব্র গরমের কারণে শ্রমিক সঙ্কট থাকায় ধান কাটায় অন্য বছরের তুলনায় অনেকটা ধীরগতি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

সখীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন জানান, ‘আশা করা হচ্ছে, এ বছর সখীপুরে বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। সখীপুরে এবার মোট ১৭ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৯৯৮ টন ধান পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

ধানের বাম্পার ফলনে খুশি সখীপুরের কৃষকরা। প্রচণ্ড তাপদাহেও কণ্ঠে ভাটিয়ালি গান ধরে ধান কাটছেন দূর দূরান্ত থেকে আসা কৃষি শ্রমিকরা। আর নারীরা খলায় (ধান তুলার মাঠ) কাজ করছেন বিশ্রামহীনভাবে।

সরেজমিনে সখীপুরের কাকড়াজান ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামে দেখা গেছে, দূর দূরান্ত পর্যন্ত বিভিন্ন জমিতে কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে। মাথায় প্রচণ্ড রোদ। কেউ কেউ গরমে হাঁসপাঁস করছে। তবুও কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবারো কাজে যোগ দিচ্ছে।

প্রচণ্ড তাবদাহের মধ্যেও তারা কিভাবে কাজ করছে জানতে চাইলে কৃষি শ্রমিক নাঈম বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। বছরে এই সময়ের আমরা অপেক্ষায় থাকি। এখন কাজ না করলে তো ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে মারা যাবে।

শ্রমিক নাঈম সেই দিনাজপুর থেকে সখীপুর এসেছেন ধান কাটার জন্য। তার সাথে দিনাজপুর থেকে আরো ১০ জন শ্রমিক এসেছেন সখীপুরে। নাঈমের পরিবারে স্ত্রী এবং দুই কন্যাসন্তান আছে।

পরিবার ছেড়ে শতমাইল পাড়ি দিয়ে এসে কাজ করতে খারাপ লাগে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংসার অনেক অভাবের। টাকা-পয়সার সঙ্কটের কারণে নিজে পড়াশোনা করতে পারিনি। আমি চাই, আমার যত কষ্টই হোক আমার সন্তানরা যেন শিক্ষিত হয়। বড় হয়ে তারা যেন বড় কোনো কোম্পানিতে চাকরি করতে পারে। ধনী ঘরে তাদেরকে যেন বিয়ে দিতে পারি। তারা যেন আমার মতো টাকা-পয়সার অভাবে এত কষ্টের কাজ না করে। এসব কথা চিন্তা করেই আমি কাজ করছি।’

নাঈম আরো বলেন, ‘বাজার করতে গেলে পূর্ণ দুই দিনের রক্ত পানি করা উপার্জনের টাকা শেষ হয়ে যায়। তবুও সদাই-পাতি কেনা শেষ হয় না। এত কষ্ট করে দিন-রাত কাজ করি তবুও ভালোমন্দ খেতে পারি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘অভাবের কারণে গেল ঈদে তিনি বাড়িতে থাকতে পারেননি। দিনাজপুর থেকে সেই সিলেটে গিয়ে ঈদের আনন্দের সময় তিনি রিকশা চালিয়েছেন। যেন দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে ঈদে কাপড়চোপড় কিনে দিতে পারেন। এ সময় তিনি দুই মেয়ের ঈদ উদযাপনের কথা স্মরণ করে কেঁদে ফেলেন।’

তীব্র তাবদাহের কারণে অনেকেই স্ট্রোক করছে, কেউ কেউ মারাও যাচ্ছে। এমন কিছু যদি আপনার সাথেও ঘটে তখন আপনার পরিবারের কী হবে? এমন প্রশ্ন শুনে মুখে একচিলতে বিষাদের হাসি টেনে নাঈম বলেন, ‘ভাই, জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তিনি যখন আমাকে ডাক দিবেন তখন তো যেতেই হবে। তার ইচ্ছা ছাড়া তো কিছুই হয় না। আমি মারা গেলে তিনিই আমার পরিবারকে দেখবেন।’


আরো সংবাদ



premium cement
‘আপত্তিকর ভাষা’ ব্যবহারে শাস্তি পেলেন জোসেফ শ্রীমঙ্গলে হত্যা মামলায় প্রেমিক গ্রেফতার জামায়াত নেতা কাজী ফজলুল করিমের মৃত্যুতে ড. রেজাউল করিমের শোক প্রকাশ বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে মাঠে থাকব : মুন্না আমতলীতে ব্যবসায়ীকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় জড়িতদের বিচার দাবি সিরিয়া নিয়ে আশা ও শঙ্কা ইসরাইলের সিরিয়ায় বাশারের পতনে ইসরাইল কতটুকু লাভবান অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ৫৭৯ কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহত ৫ এ দেশে রাজনীতি করতে হলে জনগণের সেবক হয়েই রাজনীতি করতে হবে : সেলিম উদ্দিন এখন সময় শান্তি ও স্থিতিশীলতার : অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী

সকল