২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এখনো দেশে আনা যায়নি সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীরের লাশ

নিহতের পরিবার - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার এক যুবক সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এরপর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও অর্থের অভাবে তার লাশ দেশে আনতে পারেনি তার পরিবার। এ বিষয়ে তারা সরকার ও সামর্থবানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

নিহত যুবকের নাম জাহাঙ্গীর মোল্লা। তিনি উপজেলার ছোটভাকলা ৭ নম্বর ওয়ার্ড হাউলি কেউটিল গ্রামের নদী ভাঙ্গা পরিবার ইয়াছিন মোল্লার একমাত্র ছেলে। তার স্ত্রী লিপি আক্তার, ১০ বছর, চার বছর ও ১১ মাস বয়সী তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরিবারে তার একটি ছোট বোন ও মা-বাবা রয়েছে।

জানা যায়, পরিবারের অভাব দূর করতে মাত্র দেড় বছর আগে অনেক স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু গত ২৬ মে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। সেদিন সন্ধ্যায়ই পরিবারকে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।

নিহতের বাবা ইয়াসিন মোল্লা জানান, রাজবাড়ী সদরের লালগোলা গ্রামে তাদের বাড়ি ছিল। তিন বছর আগে পদ্মার ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এখানে রেললাইনের পাশে ৭ শতাংশ জায়গার ওপর বাড়ি করে বসবাস করছেন। তিনি বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না। জাহাঙ্গীর দেশে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতো। কিন্তু তাতে সংসার চলত না। তাই শ্বশুর বাড়ি থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা এবং তার বড় দুই মেয়ে ও এনজিও ব্র্যাক থেকে কিছু নিয়ে মোট সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব যায়। দেড় বছরে তার পাঠানো টাকা দিয়ে লাখখানেক টাকার ঋণ শেষ করতে পেরেছিলেন।

সোমবার (৫ জুন) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জাহাঙ্গীরের বৃদ্ধ বাবা- মা, স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজন আহাজারি করছেন।

জাহাঙ্গীরের স্ত্রী লিপি আক্তার জানান, ছোট ছেলেটিকে ছয় মাসের অন্তঃসত্বা রেখে তিনি সৌদি আরব গিয়েছিলেন। ২৬ মে বেলা ১১টার দিকে ফোন করে শুধু বলেছিলেন, সবার দিকে খেয়াল রাইখো। কয়েক দিনের মধ্যে কিছু টাকা পাঠাব। বিকেল ৫টার পর একজন ফোনে জানায়, সে এক্সিডেন্ট করেছে। এরপর শুনি আর বেঁচে নেই।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তার মা রাবেয়া বেগম পাগলপ্রায়। তিনি কান্না করে বলছিলেন, “ওই দিন সকালে আমারে ফোনে শুধু বইলা গেল, ‘মা আমি কাজে যাচ্ছি’। এরপর আর কোনো কথা কইলো না রে।’ ওরে আমার ব্যাটারে, তোমরা আমার ব্যাটারে আইনা দাও। আমি কোথায় গেলে ব্যাটারে পাব। আমারে মা কইয়া ডাক দিবে ক্যারা রে। ওর নাবালগ পোলা তিনডার কি ওইবো রে!!!”

বাবা ইয়াছিন মোল্লা বলেন, “সংসারে একমাত্র ভরসা ছিল জাহাঙ্গীর। এখন কিভাবে চলবে এতবড় পরিবার। ২৬ মে সকালে সে ফোনে আমারে বলেছিল, ‘বাবা কাজে যাচ্ছি। দুই-তিন দিনের মধ্যে কিছু পাঠাইয়া দিবানে।’ এরপর সন্ধ্যার আগে ফোন আসে জাহাঙ্গীর মারা গেছে। আমি আমার একমাত্র ছেলের লাশ চাই। কিন্তু লাশ আনতে নাকি চার লাখ টাকা লাগবে। এত টাকা আমি এহন কহানে পাব? এহনো তিন লাখ টাকা দেনা শোধ করতে পারি নাই। পাওনাদারদের টাকাই বা দিব ক্যামনে? আমি দেশের সরকার ও সামর্থ্যবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।”

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: জাকির হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার পরিবারটি আমার কার্যালয়ে এসেছিল। সরকারি খরচে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি।


আরো সংবাদ



premium cement