২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘গাসিকে আ’লীগ হেরেছে কিছু মোনাফেক ও বেঈমানের কারণে’

বক্তব্য রাখছেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল - ছবি : নয়া দিগন্ত

গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরেছে দলের কতিপয় মোনাফেক ও বেঈমানের কারণে। যারা দলের লোক হয়েও নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে লুকিয়ে বা গোপনে অন্যের হয়ে কাজ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘তারা ক্ষমার অযোগ্য। তারা নৌকার সাথে বেঈমানী করে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। যারা নৌকার সাথে বেঈমানী করেছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য মোনাফেক ও মীরজাফরদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। নতুবা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে সাচ্চা আওয়ামী লীগে পুনর্গঠন করে প্রস্তুত করা হবে।’

তিনি শনিবার (৩ জুন) গাজীপুর মহানগরীর বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে গাসিক নির্বাচন-পরবর্তী মূল্যায়ন সভায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মহানগরীর সদর থানা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আজমত উল্লা খান বলেন, ‘নেত্রী আমাকে নৌকার পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। সেই নির্দেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে থানা পর্যায়ের আপনাদের সাথে এই মূল্যায়ন সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে ওয়ার্ড পর্যায়ে আলোচনা করে একটি প্রতিবেদন দেয়া হবে।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘এখানেও অনেকে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রেখেছেন। আমি আপনাদের ব্যাপারে সব কিছু জানি। বিভিন্ন সংস্থার কাছে তাদের তথ্য রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে কষ্ট দিয়েছেন, আমার উপরে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছেন, আমার কোনো অভিযোগ নাই, আপত্তি নাই। কিন্তু দয়া করে আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কষ্ট দিবেন না, তার সাথে বেঈমানী করবেন না।’

মূল্যায়ন সভায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতারা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে নানা অভিযোগ তুলে বক্তব্য রাখেন। তাদের অনেকেই দলের মোনাফেক নেতাকর্মীদের সাথে নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা বেগমের ছেলে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের যোগাযোগ রাখার এবং বিকাশের মাধ্যমে টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন। তাদের মোবাইল নম্বর, বিকাশ নম্বর, হোয়াট্সঅ্যাপ ইত্যাদি যাচাই করার দাবি জানান ক্ষুব্ধ নেতারা।

সভায় গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক উপপ্রকাশনা সম্পাদক রাজু মিয়াসহ অন্যান্য বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের নাম বিক্রি করে যারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তারাই গাজীপুর সিটির নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ডুবিয়েছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচন উপলক্ষে যেসব কেন্দ্র কমিটি করা হয়েছে, সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে জনবিছিন্ন ও কম গুরুত্বপূর্ণ লোকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

রাজু মিয়া অভিযোগ করেন, ‘আমাদের কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নৌকা প্রতীকের পক্ষে কোনো কাজ করেননি। মানুষের কাছে ভোট চাননি। বরং তারা আঞ্চলিকতার ধোঁয়া তুলে বলেছেন এ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিলে সিটি করপোরেশন টঙ্গীতে চলে যাবে। এবার নৌকা বিজয়ী হলে টঙ্গীর বাইরে মহানগরীর অন্য এলাকার উন্নয়ন হবে না। ভোটকেন্দ্রে কোনো পোস্টার লাগানো হয়নি, কেন্দ্র কমিটির নেতাদের অনেকবার অনুরোধ করা হয়েছে, কোথাও কোনো নৌকার পোস্টার লাগানো হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা কোনো নৌকার ব্যাজ পাইনি।’

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা দেখেছি চিহ্নিত বিএনপি ও জামায়াতপন্থী নেতাদেরকে নৌকার ব্যাজ দেয়া হয়েছে। অথচ ছাত্রলীগ করেও আমি একটি ব্যাজ পাইনি। মহানগরীর অন্যান্য এলাকায়ও এ ধরনের ঘটনা আছে।’

মহানগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কাঁঠাল গাছ লাগিয়ে আপনারা তেঁতুল খেতে পারেন না। ভোটকেন্দ্রে ঘড়ির কোনো এজেন্ট ছিল না, ছিল না প্রচারণা। আমাদের দলের লোকজন আমাদের ঘাড়ে বসে টেবিল ঘড়ির নির্বাচন করেছে। তারা নৌকাকে ডুবিয়েছে। ওয়ার্ডের নেতারা রাতের আঁধারে জাহাঙ্গীরের বাসায় গিয়ে টাকা এনেছে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে টাকা আনার সময় সরকারি একটি সংস্থার কাছে ধরা পড়েছিল।’ তিনি জানতে চান, তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি?

সভায় সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার ভূইয়া, গাজীপুর সদর মেট্রো থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াজ উদ্দিন মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, আব্দুল হাদী শামীম, আনোয়ার সাদাতসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান ১৬ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের কাছে হেরে যান। এতে অভিযোগ উঠেছে, দলের কিছু নেতার বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। ভোটকেন্দ্রে নেতারা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কার্ড ঝুলিয়ে উপস্থিত থাকলেও কাজ করেছেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর গত ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে গণভবনে ডেকে কথা বলেন। তিনি সবকিছু শুনে নির্বাচনের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান ও দলের বিশ্বাসঘাতকদের চিহ্নিত করে দল পুর্নগঠনের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর থেকে সিটি নির্বাচন মূল্যায়ন সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম আজও স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৮ এপ্রিল খুলে দেয়ার প্রস্তুতি, ক্লাস চলবে শনিবারও মিরসরাইয়ে জুস খাইয়ে অজ্ঞান করে লুট, মূল হোতা গ্রেফতার বৃষ্টি কামনায় ঈশ্বরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইসতিসকার নামাজ আদায় কুবিতে আল্টিমেটামের পর ভিসির কার্যালয়ে তালা ঝুলাল শিক্ষক সমিতি

সকল