২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রমজানে ১০ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করবেন এরশাদ, গরিবরা পাবেন ১ টাকায়

রমজানে ১০ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করবেন এরশাদ (ইনসেটে এরশাদ) - ছবি : নয়া দিগন্ত

রোজার মাসে এ দেশের ব্যবসায়ীরা যখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তখন এর বিপরীত উদাহরণ হয়ে এলেন কিশোরগঞ্জের জেসি এগ্রো ফার্মের মালিক মো: এরশাদ উদ্দিন। তিনি রোজার প্রথম দিন থেকে পুরো রমজান মাসজুড়ে জনগণের কাছে ১০ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি করবেন। আর যারা গরিব, তারা ১ লিটার দুধ পাবেন মাত্র ১ টাকায়।

জানা গেছে, এরশাদ উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজনের কাছে এই দুধ বিক্রি করা হবে।

দুই বছর ধরে অবশ্য প্রতি রমজান মাসে এ কাজটি তিনি করছেন তিনি। এবার আরো বড় পরিসরে কাজটি করবেন বলে জানিয়েছেন এরশাদ।

এরশাদ উদ্দিন বাংলাদেশ মিলস্কেল রি-প্রসেস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জেসি অ্যাগ্রো ফার্মের চেয়ারম্যান।

গত চার বছর আগে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের রৌহা এলাকায় তার গ্রামের বাড়িতে একটি এগ্রো ফার্ম গড়ে তোলেন তিনি।

ওই অ্যাগ্রো ফার্মে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বর্তমানে পাঁচ শতাধিক গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। একইসাথে উন্নতজাতের ২৫টি গাভীও পালন করা হচ্ছে খামারে। গাভীগুলো থেকে প্রতিদিন ৭০-৭৫ লিটার দুধ পাওয়া যাচ্ছে। এ দুধই ১০ টাকা লিটার দরে সারা মাস রোজাদারদের জন্য বিক্রি করবেন তিনি।

বিষয়টি জানিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন এরশাদ উদ্দিন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ। আমার ক্ষমতাও ক্ষুদ্র। রমজানের ৩০ দিনে ২ মেট্রিক টন দুধ ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি বছরের মতো এবারো বিক্রয় করা হবে।’

তিনি লেখেন, ‘আমার এই উদ্যোগ বাহাবা নেয়ার জন্য না। আমার উদ্দেশ হলো সামান্য কিছুও যদি মানুষের জন্য করে যাই, মানুষ উপকৃত হয়, তাহলে আল্লাহ খুশি হবেন। আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গা থেকে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করি। তাহলে আমাদের দেশকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’

এরশাদ উদ্দিনের এই উদ্যোগটি এলাকায় ব্যাপক প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

নিয়ামতপুর মুড়িকান্দি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানে সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, মানুষ চাল-ডালই কিনতে পারে না। দুধের দাম এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা লিটার। এরশাদের উদ্যোগের কারণে মানুষের পাতে একটু হলেও দুধ পড়বে। আহা, সারা দেশের ব্যবসায়ীরা যদি এরকম হতো, কতোই না ভালো হতো।’

নিয়ামতপুর ইউনিয়নের পাশের ইউনিয়ন তাড়াইলের কাজলা গ্রামের বাসিন্দা কিশোরগঞ্জের ডেন্টাল সার্জন ডা, ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এরশাদ উদ্দিনের এই উদ্যোগটি সারা দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকরণীয় বিষয় হতে পারে।’

এরশাদ উদ্দিন জানান, গত দুই বছর ধরে রমজান মাসে তিনি ১০ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি করছেন। তখন খামারে গাভীর সংখ্যা কম ছিল। গত বছর রোজার মাসে ১ টন দুধ বিক্রি করেছিলেন। এবার খামারে গাভীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্যোগটিও বড় হয়েছে।
এ বছর তিনি ২ টন দুধ বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

এরশাদ উদ্দিন বলেন, রোজার সময় লোকজন ভালোমন্দ খেতে চায়। সবাই চায় অন্য খাবারের পাশাপাশি পাতে খানিকটা দুধও থাকুক। দুধ শরীরের জন্য খুব উপকারী। কিন্তু দুধসহ সব কিছুর দামই তো আকাশছোঁয়া। ইচ্ছা থাকলেও সবাই দুধ কিনতে পারবে না। এসব বিষয় ভেবে এবার উদ্যোগটি আমি বড় করে নিয়েছি।

এরশাদ উদ্দিন বলেন, রোজার প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন ৭০ জনের কাছে এক লিটার করে দুধ বেচা হবে। এটি চলবে রোজার শেষ দিন পর্যন্ত। প্রতি লিটার দুধের দাম ধরা হয়েছে মাত্র ১০ টাকা। ১০ টাকা লিটারেও দুধ কিনতে যাদের সামর্থ্য নেই তারা এক টাকা লিটারে দুধ পাবেন।

এরশাদ উদ্দিন জানান, তার খামার থেকে বিনামূল্যে দুধ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বিক্রেতা আর যারা কিনবেন তারা ক্রেতা। আর এটা দয়া বা দানের পর্যায়ের কিছু না। কম দামে খাদ্যপণ্য পাওয়াটা মানুষের অধিকারের মধ্যে পড়ে মনে করেই তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

স্বাভাবিকভাবেই বাজারে প্রতি লিটার দুধের দাম থাকে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এখন দুধের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

এ অবস্থায় ১০ টাকা থেকে এক টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করছেন। ইদানিং গাভী লালন পালনে খরচও বেড়ে গেছে, এভাবে কম দামে দুধ বেচলে আপনার কি লোকসান হয়ে যাবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে এরশাদ উদ্দিন বলেন, কম দামে দুধ বিক্রি করায় তার কোনো লোকসান হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘শুধু অ্যাগ্রি ফার্ম নয়, আমার আরো কয়েকটি ব্যবসা আছে। সব ব্যবসা মিলেই আমার লাভ লোকসানের হিসাব। অন্য চারটি ব্যবসায় আমার লাভ হচ্ছে। খামারে এক মাস দুধের দাম কমিয়ে দিয়েছি বলে আমার সব ব্যবসার গড় মিলালে লোকসান হচ্ছে না।

তিনি বলেন, দুধ একটি খাদ্যপণ্য। রোজায় খাদ্যপণ্যের দাম কমিয়ে দেয়া ব্যবসায়ী হিসেবে আমার নৈতিক দায়িত্ব। মধ্যপ্রাচ্য এমনকি কিছু ইহুদি-খ্রিস্টান রাষ্ট্রেও রোজার সময় মুসলমানদের জন্য খাদ্যপণ্যের দাম কমিয়ে দেয়া হয়। আমাদের দেশে রমজানে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। আমি চাই আমার দেশে থেকে থেকে এই সংস্কৃতির অবসান হোক। আর এই খারাপ সংস্কৃতিটা বিদায় করতে আমরা ব্যবসায়ীরাই পারি।’


আরো সংবাদ



premium cement