নারায়ণগঞ্জে চুরির অপবাদে ৩ শিশুর চুল কেটে দিলো আ. লীগ নেতা
- নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:১৬
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চুরির অপবাদে তিন শিশুর চুল কেটে দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও গোপালদী পৌরসভার মেয়র এম এ হালিম সিকদার। এর আগে মারধর করে তাদেরকে এলাকাও ঘুরানো হয়েছে।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী এলাকায় তাদের নির্যাতন করা হয়।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে বেশ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ওদিকে লজ্জায় নির্যাতিত শিশুদের পরিবার গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করছেন।
নির্যাতনের শিকার শিশুরা হলো বায়েজিদ, সিয়াম ও আফরিদ। বায়েজিদ (১০) রামচন্দ্রদী গ্রামের জাহাঙ্গীরের ছেলে। সে গোপালদী মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সিয়াম (৮) একই এলাকার হাসানের ছেলে ও রামচন্দ্রদী মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। আর আফরিদ (৮) ওই এলাকার জজ মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় ও নির্যাতিত শিশুদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে ওই শিশুরা মক্তব থেকে ফেরার পথে গোপালদী পৌর মেয়র হালিম সিকদারের মালিকাধীন সিকদার পাওয়ারলুম কারখানার সামনে পড়ে থাকা কয়েকটি নাট-বল্টু ও লোহার শিকল কুড়িয়ে নিয়ে খেলা করছিল। এ সময় মেয়র তার লোকজনসহ চুরির অপবাদে তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের হাত বেঁধে মারধর করে। এরপর দু’ঘণ্টার মতো সময় তাদের আটকিয়ে রাখা হয়।
সূত্রে আরো জানায়, এ সময় শিশুদের ছেড়ে দেয়ার জন্য তাদের অভিভাবকরা মেয়রকে অনেক অনুরোধ জানান। একজন তো মেয়রের পা পর্যন্ত ধরেন। তবুও মেয়রের মন গলেনি। উল্টা তার সাথে মারমুখী আচরণ করেছেন। শেষ পর্যন্ত একটি ছেলেকে ছাড়তে সম্মত হয়। কিন্তু অন্য দু’জনকে ছাড়েনি। তাদেরকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের একটি সেলুনে নিয়ে চুল কেটে দেয়।
নির্যাতিত শিশু বায়েজিদের পিতা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই আমার ছেলেসহ তিন শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
নির্যাতিত অন্য এক শিশুর বাবা বলেন, ‘ছেলেটার মুখের দিকে তাকাইতে পারি না। ও লজ্জায় এবং ভয়ে কান্না করতেও ভুলে গেছে। ওরা তিনজনই শিশু। কোনো অন্যায় করলে অভিভাবক ডেকে নিয়ে বিচার সালিস করতে পারতো। কিন্তু অভিভাবকদের না জানাইয়া তিনি (মেয়র) চোর অপবাদ দিয়া এই শিশুদের মারধর করছেন। অপমান করছেন। আমি আমার ছেলেটার মানসিক অবস্থা নিয়া খুবই ভয়ে আছি।’
ঘটনার পর লজ্জায় এলাকায় মুখ দেখানো যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমার স্ত্রী আর এলাকায় থাকতে চাচ্ছে না। সে ভেঙে পড়েছে। ছেলেটার কথা ভেবে আমাদের বুক ভেঙে যাচ্ছে। কী করব, কার কাছে যাব, কিছুই বুঝতেছি না।’
তৃতীয় নির্যাতিত শিশুর বাবা বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আমরা গ্রাম ছাইড়া চইলা যামু।’
এ ব্যাপারে গোপালদী পৌরসভার মেয়র এম এ হালিম সিকদার বলেন, ‘এরা পেশাদার চোর। অতীতেও তারা চুরি করছে। তাই তাদের চুল কেটে দিছি।’
মেয়রের দাবি, শিশু তিনটি চুরির সাথে জড়িত। তাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য এমনটা করেছেন।
মেয়র আরো বলেন, ‘ছোডো মানুষ দেইখা বেশি কড়া শাসন করি নাই। হালকা কইরা হাত বানছি। পরে ওরা জানাইলো, আরো দুই দিন চুরি করছে। ওদের কথা মতো আরেকটা চোরেরে ধইরা আনছি বাড়ি থেইকা (সাত বছরের শিশু)। পরে একটা শিক্ষা দেওয়ার লাইগা বাজারে দুই জনের মাথার চুল কাইটা দিছি।’
আড়াইহাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিজুল হক হাওলাদার জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’