১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাজীপুরে ইমামকে দিগম্বর করে মাদককারবারিদের ভিডিও ধারণ, আওয়ামি লীগ নেতা গ্রেফতার

গাজীপুরে ইমামকে দিগম্বর করে মাদককারবারিদের ভিডিও ধারণ, আওয়ামি লীগ নেতা গ্রেফতার। - ফাইল ছবি

গাজীপুরে জুমার বয়ানে মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা করায় মসজিদের ইমামকে মারধর ও দিগম্বর করে ভিডিও ধারণ করেছে মাদককারবারিরা। এ ঘটনায় সাবেক গাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মশিউর রহমান মুকুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মহানগরের গাছা থানার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দরা আল আকসা জামে মসজিদের হুজরাখানায় (ইমাম সাহেবের কক্ষ) এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় মহানগরের গাছা থানায় শুক্রবার মামলা হয়।

ইমামের বিবস্ত্র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ৫০ হাজার টাকাও আদায় করা হয়।

এ ঘটনায় আলেম সমাজের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি মুকুলের ছোট ভাই এলাকার চিহ্নিত মাদককারবারি মফিজুর রহমান টুটুল পলাতক রয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে এ ঘটনা ঘটলেও লোক লজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ইমাম মুখ খুলেননি। অন্যদিকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলও ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ক্রমেই আলেম সমাজ ক্ষোভে ফুঁসে উঠলে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

মামলাকারি মসজিদের ইমাম মুফতি শফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, তিনি মসজিদ-সংলগ্ন দারুল হাবিব নামের মাদরাসা পরিচালনা করেন। ওই মাদরাসার পাশে মাদককারবারিদের বিভিন্ন অপকর্মসহ মাদক বেচাকেনা ও মাদকের নিয়মিত আড্ডা হতো। এতে মাদরাসার ছাত্রদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। এ কারণে তিনি জুমার খুতবায় গুরুত্বসহ মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা রাখতেন। জুমায় মাদক নিয়ে আলোচনার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছিল। এর জেরে এলাকার চিহ্নিত মাদককারবারিরা ক্ষুব্ধ হয়ে মসজিদ-মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ার হুমকিসহ তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। এসব হুমকি উপেক্ষা করে তিনি মানুষকে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে মসজিদে নিয়মিত আলোচনা অব্যাহত রাখেন।
গত ২৬ জানুয়ারি জুমার আগের দিন দুপুর ১২টায় এলাকার চিহ্নিত মাদককারবারি মফিজুর রহমান টুটুলের (৩৭) নেতৃত্বে এলাকার মাদককারবারিরা মসজিদের হুজরাখানায় (ইমাম সাহেবের কক্ষ) দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ঢুকে তার ওপর চড়াও হন। এ সময় তাকে মারধর ও দিগম্বর করে মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করেন। ইমামের এ বিবস্ত্র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন। তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এবং মান-সম্মানের ভয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে বিকাশে টাকা এনে দিতে বাধ্য হন।

গত ৩১ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় মাদরাসার ছাত্রদের মাধ্যমে তাকে মাদরাসা থেকে ডেকে বের করে রাস্তায় ফেলে আবারো বেধড়ক মারধর করেন। অবশেষে নিরুপায় হয়ে তিনি এলাকার আলেম ওলামাদের বিষয়টি অবহিত করেন এবং সবার পরামর্শে ও ওলামাদের সাথে নিয়ে শুক্রবার গাছা থানায় গিয়ে মামলা করেন।

এ ব্যাপারে গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: ইব্রাহিম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, 'মসজিদের ভুক্তভোগী ইমাম দু'জনকে আসামি করে পর্নোগ্রাফি ফৌজদারি অপরাধের বিভিন্ন ধারায় থানায় মামলা করেছেন। আমরা ইতোমধ্যে মশিউর রহমন মুকুল নামে একজন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছি। মামলার প্রধান আসামি মফিজুর রহমান টুটুল পলাতক রয়েছেন। আমরা তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।'


আরো সংবাদ



premium cement