২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যন্ত্রণা দূর করতে কর্মীকে খুন, সাড়ে ৩ বছর পর রহস্য উন্মোচন করলো পিবিআই

যন্ত্রণা দূর করতে কর্মীকে খুন, সাড়ে ৩ বছর পর রহস্য উন্মোচন করলো পিবিআই - ছবি : নয়া দিগন্ত

গাজীপুরের শ্রীপুরে জ্বালা যন্ত্রণা দূর করতে পোশাক কর্মী এক যুবতীকে খুন করা হয়েছে। হত্যার পর শরীরের কাপড় দিয়ে সিমেন্টের পিলারের সাথে নিহতের লাশ বেঁধে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে দেয় হত্যাকারীরা। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার সাড়ে তিন বছর পর রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িত এক যুবককে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

শুক্রবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির নাম- মোঃ তুলা মিয়া (২৪)। তিনি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার দর্শা মোড়ল বাড়ি এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে।

পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার জোকা এলাকার লাল মিয়ার মেয়ে সাবিনা (২০) গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার সূর্য্যনারায়নপুর গ্রামে ভাড়া বাড়িতে তার খালা, খালু ও নানির সাথে থেকে গার্মেন্টসে কাজ করতেন। গত ২০১৯ সালের ২৫ জুন নতুন বাসা খোঁজার উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হন সাবিনা। এর দুইদিন পর ২৭ জুন তার অর্ধগলিত লাশ শ্রীপুর থানাধীন রাজাবাড়ী বাজারস্থ রহম আলীর পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের খালা ফুলেমা খাতুন সাথী অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। শ্রীপুর থানা ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-০২ প্রায় ৪ মাস চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্ত করেন। কিন্তু কোনো রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ প্রদান করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে খুনের এ ঘটনায় জড়িত তুলা মিয়াকে ময়মনসিংহের ভালুকা থানার ভরাডোবা এলাকা হতে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেন। গ্রেফতার তুলা মিয়া নিজেকে জড়িয়ে খুনের এ ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের নাম উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

পিবিআই এর পুলিশ সুপার গ্রেফতারের স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গার্মেন্টস কর্মী সাবিনা মোট ৪টি বিয়ে করেন। তার এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তার চলাফেরা ভালো ছিল না, বেপরোয়া চলালেরা করতেন। প্রায়শই সাবিনা বিভিন্ন ছেলেদের সাথে ঘোরাফেরা করে গভীর রাতে বাসায় আসতেন। এই নিয়ে সাবিনার সাথে তার খালু সুজন চিল্লা পাল্লা করতেন। এলাকার মানুষও সাবিনা সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলে সাবিনার খালু সুজনকে বিচার দিত। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন সুজন ও তার পরিবার।

তিনি আরো জানান, ২০১৯ সালের ২৫ জুন এক বন্ধুর সাথে ঢাকায় বেড়িয়ে রাতে বাসায় ফেরেন সাবিনা। দেরি করে বাসায় ফেরায় সাবিনাকে তার খালু সুজনের বাবা গালমন্দ করেন। এ সময় সাবিনা উত্তেজিত হয়ে তার খালুর বৃদ্ধ বাবাকে চড় মারেন। এ ঘটনায় সাবিনাকে লাঠি দিয়ে মারপিট করে হাত ভেঙ্গে দেন খালু সুজন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে খালু সুজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার হুমকি দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে চলে যান সাবিনা। মধ্যরাত পর্যন্ত বাসায় না ফেরায় সাবিনাকে ফিরিয়ে আনতে একই বাড়ির অপর ভাড়াটিয়া তুলা মিয়াসহ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে শ্রীপুর থানার রাজাবাড়ি বাজার এলাকায় যান সুজন। সাবিনা বাসায় ফিরতে অস্বীকৃতি জানালে কৌশলে তাকে সেখান থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হন সুজন ও তার সহযোগীরা। পথে শ্রীপুর থানাধীন রাজাবাড়ী বাজারের পেছনে রহম আলীর পুকুর পাড়ের নির্জন স্থানে সাবিনাকে নিয়ে যান তারা। সেখানে নিয়ে সাবিনার জ্বালা যন্ত্রণা দূর করতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন অতিষ্ঠ হয়ে উঠা সুজন, তুলা মিয়া ও তাদের সহযোগীরা। পরে নিহতের শরীরের কাপড় দিয়ে সিমেন্টের পিলারের সাথে লাশ বেঁধে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান হত্যাকারীরা।


আরো সংবাদ



premium cement