২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার গণসমাবেশে যোগ দেবে বিএনপির ৫০ হাজার নেতাকর্মী

- ছবি : সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ থেকে আসন্ন ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশে অন্তত ৫০ হাজার নেতাকর্মী যোগ দেবে বলে জানিয়েছে জেলা বিএনপি। সেলক্ষ্যে চার-পাঁচ দিন আগ থেকেই রাজধানীতে যাওয়া শুরু করেছেন জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইতোমধ্যে অসংখ্য নেতাকর্মী ঢাকায় পৌঁছেছেন সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য। ঢাকার গণসমাবেশ যেতে বাধা-বিপত্তি আসবে, এমন আশঙ্কা থেকেই আগেভাগেই রাজধানীতে যাওয়া শুরু করেন জেলার নেতাকর্মীরা।

কিশোরগঞ্জ বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তাদের টার্গেটের ৭০ ভাগ লোক ইতোমধ্যে ঢাকায় পৌঁছে গেছে। তারা রাজধানীতে আত্মীয়-স্বজনের বাসা-বাড়িতে, বন্ধু-বান্ধবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে গিয়ে উঠেছেন। তবে
গতকাল পল্টনে সঙ্ঘর্ষের পর সতর্ক অবস্থায় আছেন তারা।

জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ঢাকার সমাবেশে কিশোরগঞ্জ থেকে শুধু নেতাকর্মীদের যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকমান্ড। ব্যাপকহারে সাধারণ মানুষদের নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের প্রতি হাইকমান্ডের কোনো নির্দেশনা ছিল না। এজন্য তারা জেলায় কোনো প্রস্তুতি সভা করেনি। লিফলেটও বিতরণ করেনি।

কিন্তু গত সাত-আট দিন আগে থেকেই পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের নানা কৌশলে হয়রানি করতে থাকে। বাসা-বাড়িতে হানা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার শুরু করে। সাদা পোশাকে
নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালায়। ইতোমধ্যে অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত তিন-চার দিনে কিশোরগঞ্জ জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলায় গায়েবি মামলা হয়েছে সাতটি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে নামে-বেনামে শত শত লোককে। এ পরিস্থিতিতে জেলার শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি নেতাকর্মী গ্রেফতার এড়াতে ঢাকায় যাওয়া শুরু করেন। নেতাকর্মীরা ফোনে ফোনে শলা-পরামর্শ করে ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

জেলা বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, গ্রেফতার এড়াতে এই মুহূর্তে ঢাকার সমাবেশে যোগ দেয়াই তাদের জন্য নিরাপদ।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, পুলিশ হয়রানি করে তাদের ঢাকায় যাওয়ার স্পৃহা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের এমন হয়রানিতে সাধারণ মানুষও বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল হচ্ছে।

জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো: শরিফুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমান সরকারের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে উঠেছে। ঢাকার বাইরে বিএনপির গণসমাবেশে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করে।

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে সরকার ভয় পেয়ে গেছে। ওই দিন পুরো ঢাকা শহরে জনতার ঢল নামবে। সরকার এমনটা বুঝতে পেরে পল্টনে আক্রমণ চালিয়েছে। ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার মতো কিশোরগঞ্জেও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, এসব করে নেতাকর্মীদের আটকাতে পারবে না। মানুষ সমাবেশে যোগ দেবেই। এ সরকারের পতন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে না।

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা বলেন, অনুষ্ঠিত বিভাগীয় অন্য সমাবেশগুলোর মতো ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা সমাবেশও শান্তিপূর্ণ একটি সমাবেশ হবে। এই সমাবেশে কিশোরগঞ্জ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেবে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল বলেন, ঢাকার গণসমাবেশে লোকসমাগমে বাধা দিতে প্রশাসন হামলা মামলার পথ বেছে নেয়ায় মানুষ এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঢাকার দিকে যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের হয়রানি ও বাধা না দিলে তাদের ঢাকায় নিতে আমাদের কষ্ট হতো। আমাদের পকেটের টাকা খরচ
হতো। বাধা পেয়ে এখন নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে ঢাকার সমাবেশে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষও আমাদের সাথে যোগ দিচ্ছে। ঢাকায় আসার পথেও সড়কে যানবহন থামিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। টিকিট থাকা সত্ত্বেও পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের ট্রেনে উঠতে দিচ্ছে না। তবে কোনো বাধাই কাজে আসবে না। সব ষড়যন্ত্র ও বাধা মোকাবিলা করে ঢাকার কর্মসূচিতে কিশোরগঞ্জ থেকে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ অংশ নেবে।

জেলা বিএনপির যুব-বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের টার্গেট করা সংখ্যার ৭০ ভাগ লোক ঢাকায় পৌঁছে গেছে। কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে যুবদল-ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় পৌঁছেছে। বাকি যারা আছে, আজ-কালের মধ্যে ঢাকায় চলে আসবে। সড়কে বাধা দিলেও বিকল্প পথে তারা ঢাকায় পৌঁছবেন। রাস্তা-ঘাটে সরকার বাধা দিলেও কোনো কাজ হবে না।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি আশরাফ হোসেন পাভেল জানান, সমাবেশে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ৪ ডিসেম্বর দুই হাজার নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকায় পৌঁছে গেছেন।

পাভেল বলেন, জেলার অন্যান্য উপজেলা ও পৌরসভা থেকেও হাজার হাজার নেতাকর্মী ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। সমাবেশের দিন জেলার সব নেতাকর্মী এক জায়গা থেকে শোডাউন করবেন।

ঢাকায় আসা জেলার নেতাদের সাথে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভার নেতাকর্মীদের নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement