২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেয়ের সাথে এসএসসির গণ্ডি পেরোলেন বাবা

মেয়ের সাথে এসএসসির গণ্ডি পেরোলেন বাবা - ছবি : নয়া দিগন্ত

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে মেয়ের সাথে এসএসসির গণ্ডি পার হলেন বাবা। ৪৪ বছর বয়সী মো: জয়নাল আবেদীন এসএসসিতে ৪.৮৬ পেয়েছেন।

জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ফুল মালীর চালা ফজরগঞ্জ আলিম মাদরাসা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ভোকেশনাল শাখার প্লোল্টি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন । আর মেয়ে জেসমিন আক্তার ফুল মালির চালা ছাকেদ আলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক শাখা থেকে জিপিএ ৩ দশমিক ৩৩ পেয়ে এসএসসি পাস করেছেন।

একই সাথে এসএসসি পাস করা বাবা-মেয়ের বাড়ি উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের ফুলমালি চালায়। বাবা-মেয়ে একসাথে এসএসসি পাস করায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধুমহল, গ্রামবাসী, আত্মীয়-স্বজনরা নানাভাবে তাদের অভিনন্দন জানিয়েছে ।

বাবা মো. জয়নাল আবেদীন ও তার দুই মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। বাবা ও বড় মেয়ে পাস করলেও ছোট মেয়ে মোসা: আছিয়া আক্তার অকৃতকার্য হয়েছে।

জয়নাল পেশায় একজন ব্যবসায়ী। পরিবারে তার চার মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। ছেলে মো. রুহুল আমিন দ্বিতীয় শ্রেণি, মেয়ে বর্ষা ষষ্ঠ শ্রেণি ও সুমাইয়া অষ্টম শ্রেণিতে স্থানীয় রাশেদ মডেল স্কুলে পড়াশোনা করছে।

এ বিষয়ে মেয়ে জেসমিন আক্তার বলেন, ‘বয়সকে জয় করে বাবা ৪৪ বছর বয়সে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। বাবার অদম্য ইচ্ছা-শক্তির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। আমার বাবা আমাদেরম জন্য অনেক পরিশ্রম করেন। বাবা আমার আদর্শ। আমাদের যেমন পড়াশোনার জন্য অনুপ্রাণিত করেন, তেমনি তিনি নিজেও পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন। আমাদের পরিবারের সবাই বাবার এই সফলতায় আনন্দিত।’

মেয়ের সাথে এসএসসি পাসের অনুভূতি জানিয়ে মো: জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বড় মেয়েটা পাস করেছে। কিন্তু ছোট মেয়ের জন্য একটু মন খারাপ। মেয়েটা পাস করলে আনন্দটা পরিপূর্ণ হতো। মেয়েটা যেন পাস করে এজন্য পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘ছোটবেলায় সংসারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি। আমি ১৯৯৬ সালে পরীক্ষার্থী ছিলাম। পরে বিদেশে চলে যাই। সৌদি আরব পাঁচ বছর থেকে দেশে ফিরে আসি। ২০০১ সালে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করি। আমার পাঁচ সন্তান। কিন্তু বুকের ভেতরে লেখাপড়া করতে না পারার চাপা কষ্ট মাঝে মধ্যেই আমাকে পীড়া দিতো। লোক লজ্জায় পড়ালেখা হয়ে উঠছিলো না। সমাজে দশটা মানুষের মতো নিজেকেও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যেন পরিচয় দিতে পারি সেই লক্ষ্যে ২০২০ সালে ফুল মালীর চালা ফজরগঞ্জ আলিম মাদরাসার ভোকেশনাল শাখার প্লোল্টি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং ট্রেড এ নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই ।

বাবা-মেয়ের একসাথে পাসের খবরে ফুল মালীর চালা ফজরগঞ্জ আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল কাদের তাদের সফলতা কামনা করে অভিনন্দন জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement