অছাত্র ও চাকরিজীবীদের দিয়ে হোসেনপুর ছাত্রলীগের কমিটি, একাংশের ক্ষোভ
- কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
- ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১৮:৩৩
মাদকাসক্ত, বিবাহিত, অছাত্র ও সরকারি চাকরিজীবীদের দিয়ে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। সদ্য ঘোষিত এ কমিটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা সমালোচনা। দলের বাইরের কেউ কেউ এ নিয়ে হাস্যরসাত্মক টিপ্পনি কাটতেও ছাড়ছেন না।
ছাত্রলীগের একাংশের অভিযোগ, মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া তিন সদস্যের জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টাকার বিনিময়ে হোসেনপুরের এ কমিটি দিয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন খোদ স্থানীয় সংসদ সদস্যও।
একটি সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলন ছাড়াই ‘প্রেসবিজ্ঞপ্তির’ মাধ্যমে গত ৫ অক্টোবর মুস্তাফিজুর রহমান মোখলেছ নামে ৩৯ বছরের এক ব্যক্তিকে সভাপতি ও ইয়াছিন আরাফাত শুভ নামে অছাত্র এক তরুণকে সাধারণ সম্পাদক করে অনুমোদিত ২৯ সদস্যের কমিটি ফেসবুকে জানান দেয় কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। এরপর থেকেই কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও কমিটিতে অন্তত ২০ জন অছাত্র, বিবাহিত এবং সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন বলে অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাদের একাংশের। এ কমিটির অনুলিপি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকেও দেয়া হয়েছে।
এক বছরের জন্য অনুমোদন করা এ কমিটিকে আংশিক উল্লেখ করে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে নেয়ার তাগিদ দেয়া হয় মনোনীত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে।
এ কমিটি বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেছে দলের একটি অংশ। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দেয়া হয়, নবগঠিত কমিটির সভাপতি অছাত্র, বিবাহিত এবং কয়েক সন্তানের জনক। এ সময় সভাপতির এনআইডি ডাটাবেজ থেকে সাংবাদিকদের তথ্য সরবরাহ করা হয়। এতে দেখা যায় তার জন্ম তারিখ ১৯.০৯.১৯৮৩।
সংবাদ সম্মেলনে হোসেনপুর ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা জানান, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ এ কমিটিতে এরকম আরো বিবাহিত ও অছাত্রদের স্থান দেয়া হয়েছে। কমিটিতে পদ পেয়েছেন অন্তত ২০ জন বিতর্কিত লোক। কমিটিতে রয়েছেন চিহ্নিত মাদকাসক্তরাও।
কমিটির ৭ নম্বর সহ-সভাপতি মুমিনুল ইসলাম তুহিন বিবাহিত ও জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে সরকারি চাকরিরত থাকা সত্ত্বেও কমিটিতে তাকে পদ দেয়া হয়েছে। কমিটির ৫ নম্বর সহ-সভাপতি মো: আনোয়ার বিবাহিত ও একাধিক সন্তানের জনক। কমিটিতে স্থান পাওয়া ৬ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন আকন্দ পিয়াস অছাত্র এবং বিবাহিত।
এছাড়া নতুন কমিটিতে নির্ধারিত বয়স ২৯ পার হওয়ার পরও অন্তত আরো পাঁচজন স্থান পেয়েছেন। ব্যবসায়ী ও অছাত্র রয়েছেন অন্তত ১০ জন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: সাদেক মিয়া। লিখিত বক্তব্যে এ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়।
এ সময় বক্তব্য রাখেন হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সহ-সভাপতি মোখলেসুর রহমান, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন মইন, আমির হামজা, তাহমিদ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে নবগঠিত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে হোসেনপুর উপজেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তারা বলেন, এ কমিটি বাতিল না করা হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
কমিটির ৭ নম্বর সহ-সভাপতি মুমিনুল ইসলাম তুহিনের সরকারি চাকরির তথ্য যাচাই করতে এ প্রতিবেদক দুপুর ২টার দিকে জেলা নির্বাচন অফিসে যান। সেখানে একটি কক্ষে কম্পিউটারের কাজ করছিলেন তিনি।
নয়া দিগন্তের কাছে তার চাকরির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমি চাকরি করছি। রাজনীতিতে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
এদিকে কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর এটিকে ‘বিতর্কিত’ ও ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ ঘটনা উল্লেখ করে বুধবার রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস ডা. সৈয়দা জাকিয়া নুর লিপি।
ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ পুত্র, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী, প্রয়াত জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একাধিক মেয়াদে নির্বাচনী এলাকা তথা বর্তমানে আমার নির্বাচনী এলাকাধীন হোসেনপুর উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের কমিটি কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে, যা সম্পর্কে আমি অবহিত নই। অছাত্র, বিবাহিত, বয়স উত্তীর্ণ ও বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
তিনি লিখেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে বার বার বলার পরও কেন বা কী কারণে সমন্বয় না করেই মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা কমিটি কর্তৃক এমন একটি বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা করা হলো? আমরা কি এমন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চেয়েছিলাম?’
সৈয়দ জাকিয়া নূর লিপি মেয়াদ উত্তীর্ণ কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ও নবগঠিত হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন নয়া দিগন্তকে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই আমরা কমিটি করেছি। কমিটি করার সময় কেউ কেউ তথ্য গোপন করায় বিতর্কিত কয়েকটা নাম হয়তো এসে গেছে। বিষয়টা আমরা যাচাই করে দেখব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা