২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘ইটের আঘাতে মারা গেছে’ উল্লেখ করে মামলা করতে শাওনের পরিবারকে চাপ!

আত্মগোপনে শাওনের বাবা-ভাই-স্ত্রী
নিহত যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওন - ফাইল ছবি।

মুন্সিগঞ্জের যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওন হত্যার পাঁচ দিন পার হলেও পরিবার মামলা করেনি। তাদের অভিযোগ, কে বা কারা ফোনে হুমকি-ধমকি দিয়ে বলছে, ‘গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে (শাওন) মারা গেছে’- এ কথা উল্লেখ করে মামলা করতে হবে। কারা এসব হুমকি দিচ্ছে, স্বজনরা তা বলতে পারছেন না। এরই মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক মামলা করেছে পুলিশ। এমন প্রেক্ষাপটে বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন শাওনের বাবা, ভাই ও স্ত্রী।

গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলি ও ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হন যুবদল নেতা শাওন। পরে রাত ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ক্ষেত্রে সংবাদ সম্মেলন করে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন শাওনের মৃত্যুর বিষয়টি ইটের আঘাতেই হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

শাওনের দাদি ও স্বজনরা জানান, জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকে শাওনের বাবা ও ভাই আত্মগোপনে গেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে সদরের মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা এলাকার বাড়িতে তারা সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

শাওনের মা লিপি বেগম বলেন, ছেলে মারা গেছে- এ বিচার কার কাছে চাইব। যাদের কাছে চাইব তারাই ঘটনা ঘটিয়েছে। মামলা করে আর হয়রানি হতে চাই না।’

তিনি বলেন, ‘ছেলে ছাড়া আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তার মৃত্যুর পরও আমরা নিরাপদ নই। নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে।’

কী বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থানায় গিয়ে ‘গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে শাওনের মৃত্যু হয়েছে’ উল্লেখ করে মামলা করতে বলা হচ্ছে।

শাওনের চাচাতো বোন কেয়া মনি বলেন, ঘটনার পর থেকে মোবাইলে কল দিয়ে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। তার বাবা, চাচা, ভাই ও ভাবি নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা ভয়ে বাসায় আসছেন না। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শাওনের ফুফু জুহুরা বেগম বলেন, মামলা কিভাবে করব? লোকজন কল দিয়ে ‘ইটের আঘাতে মারা গেছে’ উল্লেখ করে মামলা করতে বলে। তাই তারা থানায় যাননি।

শাওনের দাদি হালিমা বেগম বলেন, নাতি মারা গেছে পাঁচ দিন হলো। এরই মধ্যে পরিবার চালাতে সমস্যা হচ্ছে। যারা সংসার চালাবে তারাই এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় আছে। বাড়িতে আসতে ভয় পাচ্ছে। তাদের লোকজন বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুমন দেব জানান, শাওনের পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তাদের বাড়ির পাশেই হাতিমারা পুলিশ ফাঁড়ি। সেখানে গিয়ে অভিযোগ করতে পারে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মুক্তারপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় জ্ঞাত ও অজ্ঞাত ১ হাজার ৩৬৫ জনকে আসামি করা হয়। এরই মধ্যে ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা।


আরো সংবাদ



premium cement