২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শিক্ষক দম্পতির ফুসফুস ও কিডনিতে জমাটবদ্ধ রক্ত

শিক্ষক দম্পতির ফুসফুস ও কিডনিতে জমাটবদ্ধ রক্ত - ছবি : নয়া দিগন্ত

গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির ফুসফুস ও কিডনিতে জমাটবদ্ধ রক্ত মিলেছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকার সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত খুলেনি মামলার জট। বিষয়টি নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশ ছাড়াও মাঠে নেমেছে পিবিআই, সিআইডি, র‌্যাবসহ পুলিশের একাধিক দল।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো: শাফি মোহাইমেন জানান, লাশ দুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় দুজনের ফুসফুস ও কিডনিতে প্রায় একই রকম লক্ষণ পাওয়া গেছে। তাদের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। এটি সাধারণত খাবারে বিষক্রিয়ায় অথবা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকার সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে এখনো রহস্য না খোলায় মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা দল। সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ এবং কললিস্ট সংগ্রহ করে তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।

প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুনের সহকর্মী ও টঙ্গী শহিদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য আমাদেরকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। শুক্রবার বিকেলে আমাদেরকে গাছা থানায় ডেকে আনা হয়েছে। এর আগে র‌্যাব অফিসে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং ইতোপূর্বে পিবিআই পুলিশও আমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) নন্দলাল চৌধুরী বলেন, নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের জানাজা শেষে ময়মনসিংহের ত্রিশালে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মামলা করার জন্য শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহত স্কুল শিক্ষকের ছেলে মিরাজসহ পরিবারের সদস্যরা গাছা থানায় এসেছেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া তাদের মৃত্যুর কোনো ক্লুও পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এরই মধ্যে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

নিহত শিক্ষকের ভগ্নিপতি আব্দুর রশিদ বলেন, নিহতদের দাফন-কাফন নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিল। এছাড়া সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তাই মামলা করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বলেন, ঘটনার তদন্তে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। কী কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সন্ধ্যায় কর্মস্থল থেকে নিজস্ব গাড়িতে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন টঙ্গী শহিদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুন (৫০) ও তার স্ত্রী টঙ্গী আমজাদ আলী সরকার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় গাজীপুর মহানগরীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের জয় বাংলা সড়কের বগারটেক এলাকায় রাস্তার পাশে তাদের গাড়ির সন্ধান পান স্বজনরা। পরে গাড়ির ভেতর থেকেই তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: নুরুজ্জামান রানা বলেন, ‘ঘটনার দিন হেডস্যার স্কুল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামানকেও সাথে নিয়ে যান। প্রধান শিক্ষক এ কে এম জিয়াউর রহমান ও সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। জিয়াউর স্যার গাছা থানার কামারজুড়ি এলাকায় এবং কামরুজ্জামান টঙ্গীর শিলমুনে বসবাস করেন। কামরুজ্জামান হেডস্যারকে মামাতো ভাই বলে সম্বোধন করতেন। তবে স্কুলের সব শিক্ষকের সাথেই জিয়া স্যারের ভালো সম্পর্ক ছিল। কারো সাথে কখনো বিরোধ বা খারাপ সম্পর্কের কথা শুনিনি’।

সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে স্কুলের গেট দিয়ে বের হচ্ছিলাম। এ সময় হেডস্যারও বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে স্কুল থেকে বের হন। আমাকে পথে নামিয়ে দেয়ার কথা বলে তার গাড়িতে উঠতে বলেন। তখন ম্যাডামও গাড়িতে ছিলেন। হেডস্যার নিজেই গাড়ি চালান। আহসান উল্লাহ মাস্টার ওড়াল সেতু দিয়ে স্টেশন রোড হয়ে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে আমাকে গাড়ি থেকে টঙ্গী বিসিকের সাহারা মার্কেট নামিয়ে দেন। পরে আমি অটোরিকশা যোগে বাসায় যাই। এরপর আমার সাথে তাদের আর কথা বা দেখা হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement