২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বেত্রাঘাতে অসুস্থ হয়ে ২ ছাত্রী হাসপাতালে, শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত

হাজী নূর উদ্দিন আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে খেলাধুলা করছে শিক্ষার্থীরা - ছবি - বিবিসি

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেত ব্যবহার বা শিক্ষার্থীদের মারধর নিষিদ্ধ থাকলেও একজন শিক্ষকের বেত্রাঘাতে দুই ছাত্রীকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তারাব পৌরসভার বরপা এলাকার হাজী নূর উদ্দিন আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

আহত দুই ছাত্রীকে প্রথমে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তবে রোববার দুপুরে তাদের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

দুই শিক্ষার্থী ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।

এই ঘটনা এমন সময় ঘটলো যখন সাভারে একটি বিদ্যালয়ে ছাত্রের মারধরে একজন শিক্ষকের মৃত্যু আর নড়াইলে একটি কলেজে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানো নিয়ে সারা দেশে তীব্র সমালোচনা চলছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জরহর লাল ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘শনিবার দুপুরে স্কুলে ঈদের ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে চুমকি নিয়ে খেলা করছিল। একজন অন্যজনের গায়ে চুমকি মাখিয়ে দিচ্ছিল। এটা দেখতে পেয়ে আমাদের স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষক রাগ করেন। তিনি তাদের বেত দিয়ে মারেন। তখন দুই জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে।’

তিনি জানান, প্রথমে ছাত্রীদের মাথায় পানি দেয়া হয়। কিন্তু এরপর দুই জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতাল থেকে অসুস্থ একজন শিক্ষার্থীর নানা ফাইজুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, তার নাতনির সারা শরীরে মারের দাগ রয়েছে। এখনো সে আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

শনিবার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হলেও রোববার সকালে তাদের কেবিনে নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

বিদ্যালয়ে মারধর নিষিদ্ধ থাকার পরেও ওই শিক্ষক বেত কোথায় পেলেন জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জরহর লাল ঘোষ বলছেন, ‘সেটা আমরা কেউ জানি না। আমাদের স্কুলে বেতের ব্যবহার বা মারধর নিষেধ করা আছে। বিশেষ করে ছাত্রীদের গায়ে কোনোরকম মারধর করা বা হাত দেয়া একেবারে নিষিদ্ধ।’

রূপগঞ্জ থানার ওসি এ এফএম সায়েদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, শনিবার রাতে আহত ছাত্রীদের স্বজনরা থানায় অভিযোগ করার পর তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।

ওই শিক্ষকের ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানতে পারেনি বিবিসি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রফিক উদ্দিন আহম্মদ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২০১০ সালের ৯ অগাস্ট একটি পরিপত্র জারি করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে।

কিন্তু এরপরেও অনেক সময় প্রাথমিক, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করার ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে।

২০১৮ সালে বেত্রাঘাতের কারণে খুলনার ষষ্ঠ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল।

২০১২ সালে কুষ্টিয়ার পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষের লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত কয়েকজন ছাত্রকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়।

একই বছর রাজধানী ঢাকার কাছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের বেত মারার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীর চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল; যা ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিল।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement

সকল