২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আড়াইহাজারে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, ৬ ঘণ্টা পর যান চলাচল শুরু

আড়াইহাজারে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, ৬ ঘণ্টা পর যান চলাচল শুরু। - ছবি : নয়া দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় টানা ৬ ঘণ্টা পর মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত কয়েক হাজার পাওয়ার লুম শ্রমিককে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ একটি বাস, প্রাইভেটকার ও কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে।

মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে উপজেলার রামচন্দ্রী, কড়ইতলা, বিশনন্দী এলাকার ঢাকা-বিশনন্দী ফেরিঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কে ওই অবরোধ শুরু করে শ্রমিকেরা। রাত পৌনে ৯টায় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এদিকে শ্রমিকেরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে ফের যান চলাচল শুরু হয়। যান চলাচলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো এক ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানায় পুলিশ।

এলাকাবাসী ও শ্রমিকেরা জানায়, নরসিংদী ও আড়াইহাজার এলাকার কয়েক শতাধিক পাওয়ার লুম (সুতা থেকে গ্রে কাপড় তৈরির কারখানা) আছে। এখানে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করে। দীর্ঘদিন ধরেই প্রতি গজ গ্রে কাপড় তৈরির জন্য শ্রমিকেরা ২ টাকা ২৫ পয়সা মজুরি পেয়ে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে এই মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে উঠে। এজন্য মালিক পক্ষের কাছে গজ প্রতি ১ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানায় শ্রমিকেরা। গত এক মাস ধরে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসলেও মালিকপক্ষ তাতে রাজি না হওয়ায় গত ২১ মে প্রথম আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকেরা। ওইদিন আড়াইহাজার উপজেলার বাজারসহ আশপাশের রাস্তায় এক ঘণ্টা করে বিক্ষোভ করে। পরে ২২ ও ২৩ মে ধারাবাহিক আন্দোলন করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ মে বিকেলে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে শ্রমিক, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও মালিক পক্ষ যৌথভাবে বসে সমাধান করার আশ্বাস দেয় পুলিশ ও গোপালদী পৌরসভার কাউন্সিলর মিনহাজুল আবেদীন মিশু। কিন্তু আজকেও (২৪ মে) বিকেলে এ নিয়ে কোনো সভা বা সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করে।

তারা আরো জানান, শ্রমিকেরা উপজেলার গোপালদি, উলুকান্দি, সদাসদী, রামচন্দ্রদী, দাইরাদী এলাকায় ঢাকা-বিশনন্দী ফেরিঘাট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় মহাসড়কের দুটি লোহার ব্রীজ লোহার স্প্যান দিয়ে অবরোধ করে রাখে। এতে করে ঢাকা থেকে বিশনন্দী ফেরীঘাটগামী ও ফেরীঘাট থেকে ঢাকাগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় সৃষ্টি হয় যানজট। সাধারণ মানুষ ও যানবাহনের যাত্রীরা হেঁটে গন্তব্যে উদ্দেশ্যে যায়।

এদিকে রাত সাড়ে ৭টায় প্রথমে উপজেলার কড়ইতলা-বিশনন্দী এলাকায় ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরে রাত সাড়ে ৮টায় শ্রমিকেরা রামচন্দ্রী এলাকায় একটি বাস ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ রামচন্দ্রী এলাকায় আরেক দফা ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে। পরে শ্রমিকেরা গোপালদী বাজারে অবস্থান নিয়ে প্রাইভেটকার ও দোকান ভাঙচুর করে। পরে সেখানেও পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক হাওলাদার বলেন, কয়েক হাজার পাওয়ার লুম শ্রমিক ১ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত শ্রমিকদের বোঝাতে চেষ্টা করি। কিন্তু শ্রমিকেরা বিশৃঙ্খলা শুরু করলে তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বা কাউকে আটক করা হয়নি।

তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মালিকপক্ষের সাথে কথা বলতে। কিন্তু তাদের কোনো সংগঠন না থাকায় কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। আশা করছি এক ঘণ্টার মধ্যে তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement